সৌমিত্র কুণ্ডু • শিলিগুড়ি |
ফেড কাপের মতো ফুটবল প্রতিযোগিতা চূড়ান্ত অব্যবস্থার মধ্যে খেলতে হওয়ায় ম্যাচ হেরে ক্ষোভে মাঠ ছাড়ল স্পোর্টিং ক্লুব। মঙ্গলবার শিলিগুড়ির রানিডাঙায় সীমা সুরক্ষা বল (এসএসবি)-এর মাঠে স্পোর্টিং ক্লুবকে হারালেও অব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ওএনজিসি’র কোচ, কর্মকর্তারা।
অসমান মাঠ এবং নানাবিধ অব্যবস্থার মধ্যে এ ভাবে ফেড কাপের খেলা যে হতে পারে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এ দিন ম্যাচের পরই। অনুপযুক্ত মাঠ থেকে খেলোয়াড়দের ড্রেসিং রুম সব ক্ষেত্রেই অব্যবস্থা দেখা গিয়েছে। যা নিয়ে ম্যাচের পর ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন স্পোর্টিং ক্লুবের সহকারি কোচ অ্যালেক্স অ্যালভারেজ, ম্যানেজার অ্যাঞ্জেলো আলবুকার্ক-সহ দলের খেলোয়াড়রা। এ দিন ম্যাচের আগে পর্যন্ত গ্রুপে ২ টি করে ম্যাচ খেলে ইস্ট বেঙ্গল এবং স্পোর্টিং ক্লুবের সমান পয়েন্ট সংগ্রহ ছিল। সে কারণে এ দিন গ্রুপের শেষ ম্যাচ স্পোর্টিং ক্লুবের কাছে ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্পোর্টিং ক্লুবের সহকারি কোচ বলেন, “এই মাঠে ম্যাচ করিয়ে আমাদের তো হারিয়ে দেওয়া হল। আমাদের এখানে খেলতে বাধ্য করা হয়েছে। অসমান মাঠ, অন্য ব্যবস্থা কোনও কিছুই ঠিক নেই।” ক্ষুব্ধ টিম ম্যানেজার বলেন, “এই মাঠে খেলা যায়? কর্মকর্তাদের বিষয়টি বোঝা উচিত ছিল।”
খেলার মাঠে আয়োজন কী রকম ছিল এ দিন ফেড কাপের এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে?
ফুটবলারদের ‘ড্রেসিং রুম’ বলতে মাঠের ধারে সামিয়ানা খাটিয়ে তৈরি জায়গা। চারদিক অর্ধেকটা সামিয়ানা দিয়েই ঘিরে দেওয়া হয়েছে। সেখানেই পোশাক বদল করেছেন ফুটবলাররা। কিছুটা দূরে বাঁশ, পলিথিন দিয়ে ঘিরে তৈরি হয়েছে শৌচালয়। রিজার্ভ বেঞ্চ করা হয়েছে ক্যাম্প খাটিয়ে। ম্যাচ কমিশনারের বসার জায়গাও একই রকম ভাবে তৈরি। ম্যাচ কমিশনার, রেফারিদের শৌচালয়ও করা হয়েছে বাঁশ পলিথিন দিয়ে ঘিরে। মাঠের ধারে এসএসবি’র অফিসারদের জন্য মাল্টি জিম রয়েছে। সেটাকেই করা হয়েছে রেফারিদের পোশাক বদলের ঘর। আয়োজকদের মধ্যে খামতি দেখে সাংবাদিকরা ‘টিম লিস্ট’ পেয়েছেন কি না ম্যাচ কমিশনারই তা খোঁজ নিয়ে যান।
ফুবলাররাই জানান, অসমান মাঠ, ধার ঘেঁষে কিছুটা নীচু জমিতে দৌড়নোর ট্র্যাক থাকায় কর্নার কিক মারতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছিলেন ফুটবলাররা। মাঠের ঘাস ছাঁটা অসমান করে। যাতে বলের গতি প্রতি মুহূর্তে আটকে যাচ্ছিল। মাঠের ওই পরিস্থিতি নিয়ে স্পোর্টিং ক্লুবের কালু, কেইটা, আদিল খান, রোভ্যান পেরেইরা খেলার পরই প্রশ্ন তুলেছেন। ওএনজিসি’র সুরুবুদ্দিন, সন্দীপ সিংহ, লালরিন মুয়ানারাও জানিয়ে দেন ফেড কাপের মতো ম্যাচে এ ধরনের মাঠ অনুপযুক্ত। সুরাবুদ্দিন, লালরিন মুয়ানারা জানান, মাঠ এবং আয়োজন দেখে মনে হচ্ছে তাঁরা পাড়ার কোনও টুর্নামেন্ট খেলতে এসেছেন। ফেড কাপ বলে অন্তত মাঠে বোঝা যাচ্ছে না।
দর্শকদের বসার জায়গা বলতে প্রায় ১০০ আসনের দুটি ছোট গ্যালারি। বাইরের লোকদের এসএসবি’র ক্যাম্পাসে ওই মাঠে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। এ দিনও মুচলেকা দিয়ে ঢুকতে হয়েছে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের। তবে কর্মকর্তাদের অনুরোধে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশকে এ দিন ম্যাচ দেখতে অনুমতি দেওয়া হয়। তাতেই কিছু ভিড় জমে। তাঁদের বসার জন্য অবশ্য পর্যাপ্ত জায়গা ছিল না। মাঠের ধারেই ঘাসে বসতে হয় অধিকাংশকে। বাকিরা দাঁড়িয়ে, বা পেশে থাকা পাঁচিলের উপরে। মাঠের ধারে জায়গা অভাবে বল বয়দের যেখানে দাঁড়াতে হয়েছে তার ভিতরেই ঢুকে পড়েছেন বৈদ্যুতিক সংবাদ মাধ্যমের চিত্র সাংবাদিকরা। ম্যাচের পর একটি প্রাথমিক স্কুল ঘরে সাংবাদিক বৈঠকের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। এসএসবি’র তরফে আয়োজনের দায়িত্বে থাকা অনিন্দ্য শাসমল বলেন, “এক দিনের মধ্যে এই পুরো ব্যবস্থা করতে হয়েছে। আমরা সবরকম ভাবেই চেষ্টা করেছি।” ফেডারেশনের কো-অর্ডিনেটর দেবজ্যোতি মুখোপাধ্যায় জানান, গ্রুপ লিগের ১ টি করে ম্যাচ বাকি থাকতে দুটি দলের সমান পয়েন্ট হয়ে যায়। এই অবস্থায় গড়াপেটা যাতে না হয় সে জন্য একই সময় দুটি ম্যাচ করতে হয়েছে। বিকল্প মাঠ হিসাবে এখানে আয়োজন করতে হয়েছে খুবই অল্প সময়ে। |