রতন চক্রবর্তী • শিলিগুড়ি |
বিদেশে আসিয়ান কাপ জিতেছেন। দেশে দু’দুবার আই লিগ। দেশের সব ট্রফি তাঁর পকেটে। শুধু ফেড কাপ ছাড়া। সেই ‘চ্যাম্পিয়ন ক্লাব অব ইন্ডিয়া’-র অধরা পালক নিজের সফল কোচিং-মুকুটে তুলতে মরিয়া তিনি। শিলিগুড়িতে তাঁর টিম চার্চিল ব্রাদার্স গ্রুপ লিগে যা খেলেছে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোড়ন। তা সত্ত্বেও সুভাষ ভৌমিক মনে করছেন না, সেমিফাইনালে ওঠা মানেই ট্রফির দাবিদার হয়ে উঠেছেন। তবে বলছেন, “সাত বছর আগে আসিয়ান কাপ জেতার সময় ইস্টবেঙ্গলকে যতটা তৈরি রেখেছিলাম, তার চেয়েও বেশি চার্চিলের ছেলেদের নিয়ে খেটে এখানে খেলতে এসেছি। আড়াই মাসের কাছাকাছি প্রস্তুতি নিয়েছি। সবে তো তিনটে ম্যাচ খেললাম। সেমিফাইনালে আরও ভাল খেলার জন্য আমার ছেলেরা তৈরি। তবে চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে চ্যাম্পিয়ন্স লাক-ও একটুআধটু লাগে। কপালও একটা ব্যাপার। ফুটবলে কিন্তু চান্স ফ্যাক্টর সব সময় কাজ করে।”
সেবক রোডের ওপর বিশাল হোটেলে বেটো-হেনরি-লেনি রডরিগেস-তোম্বা সিংহদের নিয়ে ঘাঁটি গেড়েছেন সুভাষ। ঘড়ির কাটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে প্রস্তুতি। ফুটবলারদের ড্রাম ভর্তি বরফ জলে স্নান করানো থেকে মাঠে কঠিন ট্রেনিংআবার ফর্মে ভারতের অন্যতম সফল ক্লাব কোচ। “সফল! কোথায়? এখনও তো কিছুই করিনি। এখানে মাত্র তিনটে ম্যাচ খেলেছি, তাও মোহনবাগানের সঙ্গে জেতা ম্যাচটা বের করতে পারিনি। আগে ভাল কিছু একটা করি, তার পর তো আমাকে সফল বলবেন। ইন্টারভিউ নেবেন,” মঙ্গলবার সকালে হোটেলের সুইমিং পুলের ধারে বসে কথা বলার সময় চেনা সুভাষকে অচেনা মনে হয়। বলতে চান অনেক কিছুই, কিন্তু এখনই নয়। রয়েসয়ে। সময় বুঝে। বিকেলে নিজের দলের প্র্যাক্টিস শেষেই জেনে গিয়েছেন বৃহস্পতিবার সেমিফাইনালে তাঁর সামনে ইস্টবেঙ্গল। যে দলকে প্রচুর ট্রফি দিয়েছেন, সেই লাল-হলুদের হাত থেকেই কেড়ে নিতে হবে তাদের ফেড কাপ জয়ের স্বপ্ন! |
প্রধান অস্ত্র বেটোর সঙ্গে। —নিজস্ব চিত্র। |
বিতর্কিত প্রশ্ন শুনলেই চটে যাচ্ছেন সুভাষ। বছর তিন আগে ইস্টবেঙ্গল কোচের পদ থেকে সরে গিয়েছিলেন ব্যর্থতার তকমা গায়ে নিয়ে। এ বার চার্চিল ভাইয়েরা যেমন তাঁকে পুরো টিম গড়ার দায়িত্ব দিয়েছিলেন, সে বারও ইস্টবেঙ্গল তাঁকে সেই ক্ষমতা দিয়েছিল। ইয়ান বার্গার, সেবাস্তিয়ান, রমেশ দায়ুবকে পছন্দ করে এনেছিলেন বিদেশি হিসেবে। কিন্তু তিন বিদেশিই ব্যর্থ হয়েছিলেন। লেবাননের দায়ুবকে তো সই-ই করাতে পারেননি। সেই লেবাননেরই জাতীয় দলের দুই ফুটবলার বিলাল আর আক্রম এ বার চার্চিলের জার্সি গায়ে ঘুম কাড়ছেন সব দলের। এ বার পারলেন, সে বার কী হয়েছিল? রাগত সুভাষ বলে দেন, “প্লিজ, এখন এগুলো বলার সময় নয়। আমার ফোকাস নষ্ট করবেন না। আমি একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এসেছি। সেটা আগে পূরণ হয় কি না দেখি। তারপর...। এখন কিছু বললে...।” কথা শেষ করলেন না তিনি।
সুভাষ ভৌমিকের কি তা হলে পুনর্জন্ম হতে চলেছে এ বারের ফেড কাপে? “পুর্নজন্ম! ধুস। চুয়াল্লিশ বছর মাঠে থাকার পর ও সব জন্ম-টন্ম নিয়ে ভাবি না। কাজ করছি। জেতার চেষ্টা করছি।” কফির কাপে চুমুক দিয়ে দার্শনিক মন্তব্য বেরিয়ে আসে সুভাষের মুখ থেকে। চার্চিলের পারফরম্যান্স দেখে প্রতিদিন টিম হোটেলে ভিড় করছে মিডিয়া। জাতীয় কোচ কোভারম্যান্সের মতো রাশভারী লোকের মন্তব্যও মাঝেমধ্যে পাওয়া গেলেও সুভাষ সার্বিক প্রচারমাধ্যমকে প্রায় কিছুই বলছেন না। দেখলেই বোঝা যাচ্ছে, অধরা টুর্নামেন্ট জিততে বিভোর হয়ে রয়েছেন। লুই ফিগোদের এক সময়ের কোচ ম্যানুয়েল গোমসকে সরিয়ে হঠাৎই যখন চার্চিল ভাইয়েরা সুভাষকে টিমের দায়িত্ব নিতে বলেন, তখন আই লিগে অবনমনের খাঁড়া ঝুলছে দলের মাথায়। সুযোগ পেয়েই লিগ টেবিলের আট নম্বর জায়গা থেকে তিন নম্বরে নিয়ে গিয়েছিলেন টিমকে। এখনও আফসোস, “কলকাতায় পৈলান ম্যাচটা ড্র না হলে আমরাই রানার্স হতাম।” কথা বলছেন আর প্রতি মুহূর্তে বেজে চলেছে তাঁর ফোন। সবাই শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। ফেড কাপ জেতার শুভেচ্ছা। কলকাতা থেকে, গোয়া থেকে। ‘ধন্যবাদ’ বলে ফোন কেটে দিচ্ছেন।
সালগাওকর, চার্চিলঅনেক দিন তো গোয়ায় ক্লাব কোচিং করলেন। গোয়ার সঙ্গে কলকাতার টিমগুলোর কী পার্থক্য চোখে পড়ছে? ফেড কাপ সেমিফাইনালে চারটে দলের মধ্যে তিনটেই তো গোয়ার। কেন এমন হল? সুভাষ শান্ত। বললেন, “গোয়ায় ক্লাবগুলো পকেটের পয়সা দিয়ে টিম করে। স্পনসরদের পয়সায় নয়। প্রচুর সিরিয়াস অ্যাকাডেমি রয়েছে। সিনিয়র টিমের কোচেদের ক্লাবের জুনিয়র টিমও দেখতে হয় মাঝেমধ্যেই। সবচেয়ে বড় কথা কালচারটাই আলাদা। কোনও কোচ কারও বিরুদ্ধে বিবৃতি দেয় না। এটা আর্মান্দো কোলাসো শুরু করেছে। ওকে দেখে আমিও শিক্ষা নিয়েছি। কর্তারাও তাই। ফুটবলার নিয়ে টানাটানি চলে। তবে সেটা জুনিয়র বা অ্যাকাডেমির ফুটবলার নিয়ে। এবং কখনই সেটা তিক্ততার পর্যায়ে যায় না। কলকাতায় যা ভাবা যায় না, তাই হয়। ডেম্পো, চার্চিল, সালগাওকর নিজেদের মধ্যে অনুশীলন ম্যাচ খেলে।”
কথা বলতে বলতে উঠে পড়েন সুভাষ। ঘড়ি দেখেন। কেউ একজন অপেক্ষা করছেন। টিম মিটিংয়ের সময়ও এগিয়ে আসছে। অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য আর মাত্র দু’টো ম্যাচ জিততে হবে। ‘টাইগার’-এর এখন সময় কোথায়?
|
ফেড কাপের শেষ চার
ইস্টবেঙ্গল : চার্চিল ব্রাদার্স (বৃহস্পতিবার)
ডেম্পো : সালগাওকর (শুক্রবার) |