পুজোর মুখে বন্ধ হয়ে গেল হাওড়ার সাঁকরাইলের ডেল্টা জুট মিল। মঙ্গলবার সকালে কর্তৃপক্ষ ‘সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক’-এর বিজ্ঞপ্তি দেন। এ দিনই শ্রমিকদের বেতন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এ দিনের ঘটনার জেরে চটকলটির প্রায় সাড়ে চার হাজার শ্রমিক সাময়িক ভাবে কর্মহীন হলেন। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, গত কয়েক দিন ধরে চটকলের চারটি বিভাগে উৎপাদন ঠিক মতো হচ্ছিল না। লোকসান হচ্ছিল। সে কারণেই সাময়িক ভাবে উৎপাদন বন্ধ রাখা হল। শ্রমমন্ত্রী পুর্ণেন্দু বসু বলেন, “ঘটনাটি শুনেছি। খুব শীঘ্রই ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডেকে সমস্যা মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব।”
গত বছর জুলাই মাসেও চটকলটিতে উৎপাদন প্রায় ১৫ দিন টানা বন্ধ ছিল। ২০০৬ সালে কর্তৃপক্ষ কারখানার শ্রমিকদের বেতন থেকে যে টাকা কেটেছিলেন, তা চুক্তি অনুযায়ী ফেরত দেওয়া হচ্ছে না এই অভিযোগে গত বছর শ্রমিকরাই কর্মবিরতি পালন করেন। শ্রমমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে কর্মবিরতি ওঠে। কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বেতন থেকে কেটে নেওয়া টাকা ফেরত দিতে রাজি হন। মঙ্গলবার সকালের শিফট্-এ কাজে যোগ দিতে এসে শ্রমিকেরা দেখতে পান, গেট বন্ধ। চটকল চত্বরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ কারখানার গেটে ‘সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক-এর বিজ্ঞপ্তি না-ঝোলালেও থানায় তা পৌঁছে দিয়েছিলেন। শ্রমিকদের একাংশের অবশ্য অভিযোগ, এ দিন সকালে কারখানার গেটেই বিজ্ঞপ্তি ঝোলানোর চেষ্টা হয়েছিল। তাঁদের বাধায় সেটা সম্ভব হয়নি। তবে এ দিন বড় ধরনের কোনও অশান্তি হয়নি।
আইএনটিইউসি-র সম্পাদক মোশারফ মোল্লা এবং সভাপতি আবেদ লস্কর বলেন, “উৎপাদন যে কম হচ্ছিল, সে কথা কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছিলেন। আমরা উৎপাদন বাড়াতে সব রকম সহায়তা করতে প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু পরে আমাদের সঙ্গে আর কোনও আলোচনা না-করেই চটকলে সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক ঘোষণা করা হল।”
অন্য দিকে, আইএনটিটিইউসির সভাপতি শেখ আহমেদ আবার এই ঘটনার জন্য সিটুকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, “কারখানার ট্রাস্টি বোর্ড রয়েছে সিটুর হাতে। এর সুযোগ নিয়ে সিটু শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ড-এর কোটি কোটি টাকা নয়ছয় করেছে। বেআইনি ভাবে বহু টাকা সিটু কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিয়েছে। আমরা সেই সব টাকা ফেরতের দাবি করছি। এই সমস্যা থেকে মুখ ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য সিটুর সঙ্গে গোপন আলোচনা করেই কর্তৃপক্ষ সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক-এর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন। সব কথা শ্রমমন্ত্রীকে জানিয়েছি।” এই অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন কর্তৃপক্ষ। অন্য দিকে সিটু নেতা নিমাই সামন্ত বলেন, “কারখানা তো বন্ধ করেছেন মালিকেরাই। এখানে সিটুর ভূমিকা কোথায়?” ট্রাস্টি বোর্ডের টাকা নয়ছয় সংক্রান্ত অভিযোগও অস্বীকার করেছেন নিমাইবাবু। |