‘সিঙ্গুর-দিবস’ উদযাপনকে কেন্দ্র করে সোমবার রাতে সিপিএম-তৃণমূল মারামারি বাধল আরামবাগের গ্রামে। দু’পক্ষের জনা কুড়ি জখম হয়েছেন। কয়েক জনের আঘাত গুরুতর। ৫ জনকে ভর্তি করা হয়েছে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে। দু’পক্ষই অভিযোগ দায়ের করেছে থানায়। এসডিপিও শিবপ্রসাদ পাত্র বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এলাকায় পুলিশি টহল চলছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার ‘সিঙ্গুর দিবস’ উপলক্ষে তৃণমূল নেতৃত্ব গ্রামে গ্রামে সভা করছিলেন। মজফ্ফরপুর এবং মধুরপুর গ্রামে চারটি বুথের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা শেখ মুক্তার আলি সোমবার সন্ধ্যায় মধুরপুর গ্রামের আদিবাসী পাড়ায় সেই কাজেই যান। গোপাল মাণ্ডি, মঙ্গলা মাণ্ডি, সীতারাম হাঁসদা প্রমুখ সিপিএম কর্মীর অভিযোগ, মুক্তার তাঁদের ধামসা-মাদল নিয়ে সিঙ্গুরে তৃণমূলের সভায় যাওয়ার জন্য চাপ দেন। গোপাল, সীতারামদের বক্তব্য, “আমরা আদিবাসীপাড়ার ৩০টি পরিবারের মধ্যে ৪-৫টি পরিবার বাদে সকলেই সিপিএম কর্মী-সমর্থক। আমরা বলি, ওদের সভায় যাব না।” অভিযোগ, তৃণমূলের লোকজন হুমকি দেয়, সভায় না গেলে ঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হবে। গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে। কয়েক জনকে চড়-থাপ্পরও মারা হয়। গ্রামের মানুষ ‘রুখে দাঁড়ালে’ তখনকার মতো তৃণমূলের লোকজন সরে পড়ে বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। কিন্তু এরপরে তারা দলে ভারি হয়ে ফেরে রাত ৮টা নাগাদ। |
অভিযোগ, হামলাকারীরা লাঠি-রড, তলোয়ার নিয়ে আক্রমণ করে। দু’পক্ষের মারামারি বেধে যায়। সিপিএমের তরফে গোপাল মাণ্ডি ও তাঁর স্ত্রী মঙ্গলাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলার কান ছিঁড়ে গিয়েছে। তৃণমূলের তরফে মুক্তার এবং দুই কর্মী উত্তম ঘোষ ও তুষার মাল চিকিৎসাধীন। তাঁদের মাথায় টাঙ্গির কোপ। মুক্তারের বক্তব্য, “দলীয় সভা সেরে আসার পথে আদিবাসীপাড়ার মহিলারা পথ আটকে আমাদের লোকজনকে ঝাঁটাপেটা করে। প্রতিবাদ করলে পাড়াসুদ্ধ লোক কুড়ুল-টাঙ্গি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে।” খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তার আগেই তৃণমূলের লোকজন এলাকা ছেড়েছে। পুলিশ জখম ৪ সিপিএম সমর্থককে নিয়ে হাসপাতালের দিকে রওনা দেয়। কিন্তু হাসপাতালে না এনে তাঁদের কাবলে মোড়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য মোজাম্মেল হোসেনের। তিনি বলেন, “পুলিশ অত রাতে জখমদের মাঝপথে নামিয়ে দেয়। ওঁরা নিজেরাই পৌঁছন হাসপাতালে। সেখানে আগে থেকেই শঙ্করপুর গ্রামের তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা জড়ো হয়েছিল। তারা ফের মারধর করে আমাদের লোকজনকে। তাঁদের হাসপাতালে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি।”
তদন্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এসডিপিও। সতত্য প্রমাণ হলে ‘ব্যবস্থা’ নেওয়ারও আশ্বাস দেন তিনি। মোজাম্মেল জানান, সাংসদ শক্তিমোহন মালিক মঙ্গলবার দুপুরে আদিবাসীপাড়া থেকে আহত দু’জনকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। সাংসদের কথায়, “এই জুলুম অমানবিক। পুলিশ তেমন সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে না।” ঘটনাটি আরামবাগ থানার অন্তর্গত হলেও পুড়শুড়া বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। তৃণমূল বিধায়ক পারভেজ রহমান বলেন, “আমরা আগেই বলেছিলাম, যত বারই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বা স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্র আসবেন (বুদ্ধবাবু ক’দিন আগে সভা করে গিয়েছেন আরামবাগে), তত বারই গোলমাল বাধবে। এই ঘটনায় তা ফের প্রমাণ হয়ে গেল। উনি উত্তেজনা ছড়াতে আসছেন।” |