মোবাইলে ফের আশ্বাস নেত্রীর, সিঙ্গুরের আরও প্রত্যাশা ছিল
ঙ্গলবার ‘সিঙ্গুর দিবস’ পালনের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সশরীরে ছিলেন না। মহাকরণ থেকে সিঙ্গুরের সভায় হাজির তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের মোবাইলে ফোন করে ‘অনিচ্ছুক’ চাষি-খেতমজুরদের প্রতি তাঁর বার্তা, “আইনি জটিলতায় সাময়িক ভাবে আপনাদের জমি ফেরত পেতে দেরি হচ্ছে। কিন্তু কথা (গ্যারান্টি) দিচ্ছি, জমি আপনারা ফেরত পাবেনই।” এ দিন ফেসবুক অ্যাকাউন্টেও মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, “অনিচ্ছুক চাষি, খেতমজুরদের জমি ফেরত দিতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।” আদালতের রায়ের অপেক্ষায় আছেন জানিয়ে সিঙ্গুরে জমি-আন্দোলন পর্বে ‘পাশে থাকা’র জন্য ‘অনিচ্ছুক’ চাষি-খেতমজুরদের ধন্যবাদও দিয়েছেন তিনি।
২০০৬-এর ২৫ সেপ্টেম্বর রাজ্যের তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতাকে সিঙ্গুর ব্লক অফিস থেকে ‘টেনেহিঁচড়ে’ বের করে দিয়েছিল পুলিশ। তার পর থেকেই দিনটিকে ‘সিঙ্গুর দিবস’ হিসেবে পালন করছে তৃণমূল প্রভাবিত ‘কৃষিজমি রক্ষা কমিটি’। মমতা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে আইন করে টাটাদের হাত থেকে সিঙ্গুরের জমি নিয়ে নিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু হাইকোর্টে মামলায় গোড়ায় জিতেও পরে হেরে গিয়েছে তারা। আইনি জল গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। ফলে ‘অনিচ্ছুক’ চাষিদের জমি ফিরে পাওয়া আপাতত বিশ বাঁও জলে। তাঁদের হতাশা ক্রমে ক্ষোভের আকার নিচ্ছে বলে স্থানীয় তৃণমূল সূত্রেই খবর।
কথা দিচ্ছি, জমি ফেরত পাবেনই। মহাকরণ থেকে মুকুল রায়ের মোবাইলে ফোন করে
সিঙ্গুরের অনিচ্ছুকদের আশ্বাস দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: সুমন বল্লভ।
পুজোর আগে মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে ‘ভাল ঘোষণা’ শুনতে চাওয়া সিঙ্গুর ফের আশ্বাস পেল। নতুন নয়, পুরনো। সরাসরি নয়, মোবাইলে।
এই অবস্থায় সিঙ্গুর দিবসে নতুন কোনও কথা শোনা যায় কিনা, তা নিয়েই আগ্রহ ছিল জমিহারাদের। ফলে সকাল থেকেই ভিড় জমাট বাঁধছিল সিঙ্গুর ব্লক অফিস চত্বরের সভায়। কিন্তু মমতা এ দিন ব্যস্ত ছিলেন কলকাতার ধর্মতলায় মেট্রো চ্যানেলে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই)-সহ একাধিক কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়ে। প্রতিবাদ-সভার আয়োজক ‘পশ্চিমবঙ্গ সাংস্কৃতিক মঞ্চ’ হলেও, বস্তুত মুখ্যমন্ত্রীই ছিলেন উদ্যোক্তা। তাঁর ‘ডাক পেয়ে’ হাজির ছিলেন টালিগঞ্জের অভিনেতা-অভিনেত্রী, কলাকুশলী, গায়ক, খেলোয়াড়েরা। (টালিগঞ্জের তারকারা চলে যাওয়ার পরে ভিড় অবশ্য কিছুটা পাতলা হয়ে যায়) ফলে আর সিঙ্গুরে যেতে পারেননি মমতা।
সিঙ্গুরের সভায় মুকুল রায়ের বক্তৃতার মাঝপথে বেলা ১২টা নাগাদ মহাকরণ থেকে ফোন আসে মুখ্যমন্ত্রীর। হরিপালের তৃণমূল বিধায়ক বেচারাম মান্না ফোনের সামনে মাইক্রোফোনটি ধরেন। মিনিট তিনেক শোনা যায় মুখ্যমন্ত্রীর গলা। ‘দুর্দিনে’ রাজ্য যে ‘অনিচ্ছুক’দের ‘পাশে’ই আছে তা বোঝাতে সরকারি সাহায্যের চাল-টাকার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন তিনি। ফেসবুকে তাঁর পোস্টেও ‘অনিচ্ছুক’ চাষিদের পরিবার-পিছু মাসে ২,০০০ টাকা এবং ২ টাকা দরে ১৬ কেজি চাল দেওয়ার উল্লেখ করেছেন মমতা। পরে মুকুলবাবু বলেন, “আইনের জন্য মানুষ নয়। আইন মানুষের জন্য। এত দিন ভরসা রেখে এসেছেন, আর একটু ধৈর্য ধরুন। দায়িত্ব নিয়ে বলছি, জমি আপনারা ফেরত পাবেনই।”
মেট্রো চ্যানেলে গায়ক-অভিনেতা-খেলোয়াড়দের নিয়ে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে। ছবি: দীপঙ্কর দে।
বিরোধীদের মতে, তাঁর অনুপস্থিতি সিঙ্গুরের মানুষের হতাশা আরও বাড়াতে পারে আন্দাজ করেই ফোনে তাঁদের আশ্বাস দেন মমতা। সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরীর টিপ্পনী, “তৃণমূল নেত্রী জানেন, উনি ছাড়া অন্য কেউ কিছু বললে সিঙ্গুরের মানুষের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। উনিই এই পরিস্থিতি তৈরি করেছেন। তাই মহাকরণ থেকে ফোন করতে হচ্ছে।” যদিও সিঙ্গুরে কৃষিজমি নিয়ে আন্দোলন পর্বের নেতা বেচারাম মান্না বলছেন, “সিপিএম আমাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে? এটা হাস্যকর! ওদের বিশ্বাসযোগ্যতা কতখানি তা রাজ্যের মানুষ ভোটে বুঝিয়ে দিয়েছেন।”
তবে ঘটনা হল, এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে মন গলেনি সিঙ্গুরের। কারণ, ‘অনিচ্ছুক’ চাষিরা এমন আশ্বাস আগেও পেয়েছেন। তাঁরা আরও ‘ভাল কিছু’ শোনার প্রতীক্ষায় ছিলেন। বাজেমিলিয়ার কার্তিক ঘোষের বিঘেখানেক জমি টাটাদের কারখানার চৌহদ্দিতে পড়েছে। তাঁর হতাশা, “সামনে পুজো। আশা ছিল, কিছু একটা ঘোষণা হবে। তাতে এই চড়া বাজারে আমাদের সবারই কিছুটা সুরাহা হবে, কষ্ট কমবে। তেমন কিছুই তো শুনলাম না!” কার্তিকবাবু আরও বলেন, “আদালতের বাইরে গিয়ে যদি মীমাংসা করা যায়, তা হলে দ্রুত সমাধান হতে পারে। সেই চেষ্টা করে দেখলেও তো হয়!” বেড়াবেড়ির আর এক ‘অনিচ্ছুক’ বলাই কোলে বললেন, “বাজারের যা অবস্থা, তাতে রাজ্যের সামান্য অনুদানে কুলিয়ে ওঠা যাচ্ছে না। ২০০৬ থেকেই এই দশা। ভাবলাম, পুজোর মুখে দিদি (মমতা) সুরাহার কথা শোনাবেন। তা আর হল কোথায়!” কলকাতায় এফডিআইয়ের বিরোধিতায় আয়োজিত সভায় পরিচালক গৌতম ঘোষ, নাট্য পরিচালক মনোজ মিত্র, বিভাস চক্রবর্তীর মতো একাধিক বিদ্বজ্জন প্রতিবাদ আন্দোলনকে দেশ জুড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন। ‘দেশ-জোড়া’ সেই প্রতিবাদের আঁচ থেকে অনেকটাই দূরে সিঙ্গুরের ‘অনিচ্ছুকেরা’।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.