আর্থিক অবরোধে বন্ধ জাতীয় সড়ক |
অসম-মিজোরাম সীমা-বিবাদ ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে দুই রাজ্যের সীমানা ঘেঁষা বিস্তীর্ণ অঞ্চল। সীমানার পিলার সরিয়ে জায়গা বেদখলের পারস্পরিক অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। মিজোরামের বিধায়ক কে লিয়ান্তলিঙ্গার নেতৃত্বে জোরাম ন্যাশনালিস্ট পার্টির ক্যাডাররা একটি পিলার ভেঙে দিলে নতুন করে তা মাথাচাড়া দিয়েছে। আগামী কাল থেকে জাতীয় সড়ক অবরোধে নামছে কাছাড়ের বিভিন্ন সংগঠন।
লিয়ান্তলিঙ্গার অভিযোগ, অসমের বন বিভাগ মিজোরামের ভেতরে এনে ওই পিলার বসিয়ে দিয়েছে। এর আগেও বহু বার এমন ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে শুধুই স্থিতাবস্থা বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাঁদের অভিযোগ, এতে মিজোরামের জমি ক্রমেই অসমে ঢুকে যাচ্ছে। তাই এ বার নিজেরাই সীমা সুরক্ষায় নেমেছেন। অন্য দিকে, মিজোরাম সীমা সংলগ্ন অসমের মানুষের অভিযোগ, প্রতিবেশী রাজ্যটি প্রতিনিয়ত সীমানা বাড়িয়েই চলেছে। যেটুকু এগোয় সেখানেই পুলিশ ক্যাম্প বসিয়ে দেয়। পরে ইনার লাইন পারমিটের কথা বলে কাউকে কাছাকাছি ঘেঁষতেই দেয় না। অসমে প্রতিবাদ জানালে মিজোরামে ‘ভাই (অ-মিজো) কার্ফু’ বসিয়ে সেখানে বসবাসকারী অ-মিজোদের গৃহবন্দি করে রাখে।
সীমানা পিলার নিয়ে গত ক’দিন থেকেই অসমের কাছাড় জেলা ও মিজোরামের কলাশিবের পরিস্থিতি উত্তেজনাকর। জোরাম ন্যাশনাল পার্টি জানিয়ে দিয়েছে, মিজোরামের আর এক ইঞ্চি জমিও অসমকে নিয়ে যেতে দেওয়া হবে না। বিধায়ক লিয়ান্তলিঙ্গার ঘোষণা, বাউন্ডারি পিলার বা যাই হোক, মিজোরামের জমি জবরদখল করে কিছু করলেই তা গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। অন্য দিকে, অসমের পিলার ভেঙে দেওয়ার প্রতিবাদে সম্প্রতি শিলচরে অল বরাক ইয়ুথ স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (অবিসা), পল্লি উন্নয়ন ক্লাব এবং মইনুল হক চৌধুরী মেমোরিয়াল ক্লাব একটি মিছিল বের করে। তারা কাছাড়ের জেলাশাসক হরেন্দ্রকুমার দেবমহন্তের মাধ্যমে অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ ও মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালথানহাওলার উদ্দেশে স্মারকপত্র পাঠান। আগামী কাল তারা অসম-মিজোরাম জাতীয় সড়ক অবরোধ কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে। অবিসার মুখ্য আহ্বায়ক বাহারুল ইসলাম বড়ভুঁঞা জানিয়েছেন, আগামী কাল সকাল ছ’টা থেকে এই অবরোধ শুরু হবে। অ-মিজোদের হয়রানি বন্ধ করা না হলে মিজোরামে যানবাহন ঢুকতে দেওয়া হবে না।
কাছাড়ের জেলাশাসক দেবমহন্ত জানিয়েছেন, তিনি বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য কলাশিবের জেলাশাসককে ইতিমধ্যেই চিঠি পাঠিয়েছেন। জেলাশাসক পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের প্রস্তাবও দিয়েছেন। এ ছাড়াও রাজ্য সরকারকে সমস্ত বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। সীমান্ত পিলার গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় বন বিভাগের রেঞ্জার রাজদীপ দে থানায় এজাহার দিয়েছেন। এরও তদন্ত শুরু হয়েছে। দেবমহন্ত জানান, এডিএম বরেণ্য দাসকে তিনি ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছেন। এডিএম একটি রিপোর্টও তাঁকে দিয়েছেন।
মিজোরামের সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, সীমা-বিবাদ ইস্যু খতিয়ে দেখতে মিজোরাম সরকার পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। প্রাক্তন মন্ত্রী সি চাউনখুঙ্গা এর নেতৃত্বে রয়েছেন। |