জলমগ্ন নদীদ্বীপ মাজুলি, বন্যার কবলে ১৭ জেলা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি |
গত এক শতকে এ বারই হয়তো প্রথমবার, মাজুলি দ্বীপে শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের জন্মতিথি পালিত হল না। মহাবাহু ব্রহ্মপুত্রের বন্যায় অসমীয় সংস্কৃতির অন্যতম ধারক-বাহক মাজুলি দ্বীপ এখন অস্তিত্বের সংকটে। সরকারি হিসেবে অসমে বন্যাকবলিতের সংখ্যা ১৭,৬০,০৫০। জলমগ্ন গ্রামের সংখ্যা অন্তত ২৩০০। নিহতের সংখ্যা সরকারি হিসেবে ১৮। এর মধ্যে তিনসুকিয়ায় ৫ জন, ডিব্রুগড়ে ২ জন, ধেমাজিতে ২ জন, মরিগাঁওয়ে ৪ জন। এ ছাড়া দরং, গোলাঘাট, শিবসাগর, নগাঁও, কামরূপে মৃত্যু হয়েছে মোট ৫ জনের। ফের বন্যা বিধ্বস্ত কাজিরাঙাও। সেখানে বন্যায় আটকে পড়া বা জখম পশুদের উদ্ধারকাজ চলছে জোর কদমে। |
জলমগ্ন মাজুলির হালধিবাড়ি-বেচামারা বাঁধের দেওয়াল ব্রহ্মপুত্রের গতি রুখতে পারেনি। স্থানীয় সূত্রের দাবি, সেখানে প্রায় দুশো গ্রাম নিশ্চিহ্ন হওয়ার মুখে। ভেসে গিয়েছে শয়ে শয়ে গবাদি পশু। শঙ্করদেবের প্রিয় মাজুলিতে আজ ৫৬৪তম শঙ্করজয়ন্তীই পালিত হল না। স্থলভাগ চোখেই পড়ছে না যে। নতুন কমলাবাড়ি সত্রের প্রধান, সাহিত্য আকাদেমি প্রাপ্ত নারায়ণচন্দ্র গোস্বামী জানান, এই প্রথমবার, আজকের দিনে নাম-প্রসঙ্গ আয়োজন করা গেল না। রাখা গেল না প্রসাদবাহী সরাই। প্রশাসনের মতে, ১৯৯৮ সাল অপেক্ষাও এইবারের বন্যা বেশি বিধ্বংসী। মাজুলির ঐতিহ্য উত্তর কমলাবাড়ি সত্র, বেঙেনাআটি, ভোগপুর, চামগুড়ি, শিয়ালখোয়া-সহ বহু প্রাচীন সত্র, বিদ্যালয়, মহকুমা দফতর, কমলাবাড়ি-গড়মুর সড়ক--সবই ব্রহ্মপুত্রের ধাক্কায় ভগ্নপ্রায়। ইতিমধ্যে মাজুলি কারাগারে বন্দী ৪১ জন কয়েদিকে উদ্ধার করে যোরহাট কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। গোটা মাজুলিতে টেলিফোন সংযোগ, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন। দেখা দিয়েছে তীব্র খাদ্য ও পানীয়ের সংকট।
এরই পাশাপাশি ডিব্রু ও ডাঙরি নদীর মোহনায়, উদ্ধারকারী নৌকা উল্টে তিন শিশুর মৃত্যুর হওয়ার পাশাপাশি, শোনিতপুরের সতিয়াতে উদ্ধারকারী নৌকা উল্টে দুই কিশোরি নিখোঁজ। ডিব্রুগড়ের লরুয়া এলাকা থেকে নিখোঁজ এক ব্যক্তির দেহ উদ্ধার হয়েছে। পাঁচআলিতে এক বৃদ্ধা জলে ভেসে গিয়েছে। সরকারি মতে নিখোঁজের সংখ্যা ৯। জামুগুড়িহাটে জলে ডুবে আজ এক কিশোরি মারা যায়। উত্তর হাজোর অসুরায় ডুবে যায় এক শিশু। তিনসুকিয়ার বারেকুরি এলাকায় সেনাবাহিনীর নৌকা উল্টে তিন শিশুর মৃত্যু ও একজনের নিখোঁজ হওয়ার জেরে, আজ মাকুম পুলিশ সেনাবাহিনীর নামে এফআইআর দায়ের করেছে। |
এ দিকে, ডিব্রু-শইখোয়া ও কাজিরাঙার কোর এলাকার প্রায় পুরোটাই জলের তলায়। জঙ্গল থেকে বের হয়ে আসছে বন্য প্রাণীর দল। খবর মিলেছে, কাজিরাঙা ছেড়ে বের হয়ে আসা একটি গন্ডারকে লহরণি-চাপোরি এলাকায় শিকারিরা মেরে ফেলেছে। তার দেহ এখনও জলের তলায়। এখন অবধি, কাজিরাঙায় সব মিলিয়ে সাতটি পশু মারা যাওয়ার নিশ্চিত পাওয়া গিয়েছে। |