লক্ষ্য স্বনির্ভরতা, বিপুল ঋণ মকুব প্রসার ভারতীর |
প্রসার ভারতীকে আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর করে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলির সমকক্ষ করে তুলতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে স্থির হয়েছে, চলতি বছর থেকে শুরু করে আগামী পাঁচ বছর সংস্থার প্রায় ৫০ হাজার কর্মীর বেতন দেবে অর্থ মন্ত্রক। এ ছাড়া, গোটা দেশে আকাশবাণী এবং দূরদর্শনের যে বিপুল জমি ও সম্পত্তি রয়েছে, তার মালিকানা হস্তান্তরিত করা হবে স্বয়ংশাসিত সংস্থা প্রসার ভারতীরই হাতে। সেগুলি বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করে প্রসার ভারতীকে স্বনির্ভর হতে হবে। এ পর্যন্ত সরকারের কাছ থেকে যে অর্থ ঋণ হিসাবে পেয়েছে প্রসার ভারতী, তা-ও পুরোপুরি মকুব করে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে প্রায় ১৩০০ কোটি টাকার বোঝা প্রসার ভারতীর ঘাড় থেকে নামতে চলেছে।
প্রসার ভারতীর তরফে জানানো হয়েছে, প্রায় অর্ধ লক্ষ কর্মীর বেতন আগামী পাঁচ বছর সরকার দেওয়ায় ভার অনেকটাই লাঘব হবে। গত ১৫ বছরে প্রসার ভারতীকে যে অর্থ দেওয়া হয়েছে, তা ঋণ হিসাবেই দেওয়া হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্তে সমস্ত ঋণ মকুব করা হবে। ভবিষ্যতেও যে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে, তা আর ঋণ নয়, আর্থিক অনুদান হিসাবেই দেওয়া হবে।
ভারতের প্রত্যেকটি বড় শহরেই দূরদর্শন এবং আকাশবাণীর বিশাল জমি এবং বাড়ি রয়েছে। যেমন মুম্বইয়ের মালাডে রয়েছে ২৭০ একর জমি, ওরলিতে ৫ একর জমির উপর ১২ তলা বাড়ি। একই ভাবে কলকাতা, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু-সহ বিভিন্ন শহরে রয়েছে প্রচুর জমি-বাড়ি। এগুলি প্রসার ভারতীর হাতে চলে এলে, তা ভাড়া দিয়ে অর্থ উপার্জন করা সম্ভব। কয়েক বছর ধরে দুর্নীতিরও নানা অভিযোগ উঠছিল প্রসার ভারতীর বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয় যে সিইও বি এস লালিকে বরখাস্ত করতে বাধ্য হয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক। বিভিন্ন বেসরকারি সম্প্রচার সংস্থাকে অন্যায় ভাবে বরাত পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। ব্রিটেনের একটি সংস্থাকে অন্যায় ভাবে কমনওয়েলথ গেমসের সম্প্রচার-স্বত্ব পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ নিয়েও বিতর্ক বাড়ে।
কেন্দ্রীয় সূত্রের বক্তব্য, সেই তিক্ত অতীতকে পিছনে ফেলে প্রসার ভারতীকে ‘নবজন্ম’ দেওয়াই সরকারের লক্ষ্য। দূরদর্শনকে আরও আকর্ষণীয় চেহারা এবং প্যাকেজ নিয়ে গ্রামের প্রত্যন্ত কোণে হাজির করতে চায় সরকার। প্রসার ভারতীর বর্তমান সিইও জহর সরকার বলেন, “গণতন্ত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই স্তম্ভকে শক্তিশালীর করার এই সিদ্ধান্ত ঐতিহাসিক। এই সংস্থা আর্থিক ভাবে ধুঁকছিল। এখন সমস্যা অনেকটাই কেটেছে।” ঋণমুক্ত হওয়ার পর দূরদর্শনের ‘চেহারা’ বদল করে তাকে আরও আধুনিক এবং অন্য বেসরকারি চ্যানেলের সঙ্গে প্রতিযোগিতার জায়গায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা শুরু করতে চাইছেন জহরবাবু। রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, গত সপ্তাহে মন্ত্রিসভার বৈঠকে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অম্বিকা সোনির সব ক’টি প্রস্তাবেই একমত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। ২০০৬ সালের মার্চে রুগ্ণ প্রসার ভারতীকে চাঙ্গা করার জন্য একটি মন্ত্রিগোষ্ঠী তৈরি করা হলে, তার চেয়ারম্যান ছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চিদম্বরমই। সেই সময়ে মন্ত্রিগোষ্ঠী কিছু প্রস্তাব দিলেও প্রসার ভারতীর অভ্যন্তরীণ জটিলতায় তা বাস্তাবায়িত করা যায়নি। এত দিনে সেই সিদ্ধান্ত নিতে পেরে খুশি চিদম্বরমও। |