বদলাচ্ছে চার দশকের
বর্ষা-ক্যালেন্ডার, মানল মৌসম ভবন
শেষ পর্যন্ত বদলেই যাচ্ছে বর্ষার ক্যালেন্ডার।
ছোটবেলা থেকে দুলে দুলে ‘আষাঢ়-শ্রাবণ বর্ষাকাল’ মুখস্থ করার দিন শেষ। আষাঢ়-শ্রাবণ নয়, ভাদ্র মাসই এ বার থেকে মূল বর্ষার মাস হতে চলেছে।
পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে বেশ কয়েক বছর ধরেই বর্ষা গড়িয়ে গড়িয়ে চলে যাচ্ছিল অক্টোবরের শেষে। কিন্তু দেশের অন্য প্রান্তে বর্ষার নির্ঘণ্টে তেমন বদল না হওয়ায় মৌসম ভবন পূর্ব ভারতের এই আবহাওয়া পরিবর্তন নিয়ে তেমন মাথা ঘামাচ্ছিল না। এ বার উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতেও সেপ্টেম্বরের চতুর্থ সপ্তাহ পর্যন্ত বর্ষা থেকে যাওয়ায় বাস্তবটা অনেকাংশে স্বীকার করে নিল তারা।
মৌসম ভবনের বর্তমান নির্ঘণ্ট অনুযায়ী দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা ঢোকার কথা ৮ জুন। বিদায় নেওয়ার কথা ৮ অক্টোবর। উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে বর্ষা ঢোকার কথা ১৫ জুলাই। ১ সেপ্টেম্বর তার বিদায় নেওয়ার কথা। কেন্দ্রীয় আবহবিজ্ঞান দফতরের এক আবহবিদের কথায়, বর্ষার এই নির্ঘণ্ট তৈরি হয়েছিল ৪০ বছর আগে। ফের সেই ক্যালেন্ডার বদলের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
কেন? কারণ, উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে বর্ষা ঢোকার দিনক্ষণ স্বাভাবিক নির্ঘণ্টের আশেপাশে থাকলেও বিদায় নেওয়ার পর্ব লাগাতার পিছিয়েই যাচ্ছে। মৌসম ভবনের আবহবিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ, গত সাত বছর ধরে দেশের ওই অঞ্চলে বর্ষা বিদায় নেওয়ার সময় পিছোচ্ছে। এ বার যেমন উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে বর্ষা-বিদায়ের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ের ২৪ দিন পর থেকে। গোটা উত্তর ভারত থেকে বর্ষা বিদায় নিতে সেপ্টেম্বর মাস পেরিয়ে যাবে। অর্থাৎ এক মাস অতিরিক্ত থেকে যাবে বর্ষা।
এই বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আগামী বছরই সম্ভবত বর্ষার নতুন নির্ঘণ্ট প্রকাশ করা হবে। সেই নির্ঘণ্ট মেনে বদলে যাবে চাষের সময়ও। নতুন ক্যালেন্ডার তৈরির সময় নতুন কৃষি পরামর্শ দেবে মৌসম ভবন। বৃষ্টির ছন্দ পুরোপুরি এলোমেলো হয়ে যাওয়ায় এ বার সারা দেশেই কৃষকেরা ভুগেছেন। পশ্চিমবঙ্গও তার ব্যতিক্রম নয়। জুন মাস তো বটেই, জুলাই-অগস্ট মাসেও সারা দেশে ভাল বৃষ্টি হয়নি। ঘাটতি মেটাতে ভরসা ছিল একমাত্র সেপ্টেম্বর।
উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে সাধারণত সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহেই বিদায়-ঘণ্টা বেজে যায় বর্ষার। কিন্তু এ বার সেখানে আকাশ ভাঙা বৃষ্টিটা হল সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহেই। মাঝ সেপ্টেম্বরে ওই অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল স্বাভাবিকের থেকে ১৯৯ শতাংশ বেশি। পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে ওই সময় স্বাভাবিকের থেকে ৬৬ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। ওখানে এটা অস্বাভাবিক না হলেও, উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের ক্ষেত্রে এমন সচরাচর ঘটে না বলেই জানাচ্ছেন আবহবিদেরা। মৌসম ভবনের তথ্য বলছে, ১৩ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বরের সপ্তাহটায় গোটা দেশে বৃষ্টি হয়েছে স্বাভাবিকের থেকে ৪৪ শতাংশ বেশি। গত ২০ বছরে দেশ জুড়ে এ সময় এমন অতিবৃষ্টি আর কবে ঘটেছে, মনে করতে পারছেন না আবহবিদেরা।
অগস্ট মাসের শেষেও সারা দেশে যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছিল, তাতে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩০ শতাংশেরও বেশি। হরিয়ানা, পঞ্জাব, গুজরাত, রাজস্থানের একাংশে খরার মতো পরিস্থিতি হয়েছিল। দক্ষিণবঙ্গে ঘাটতি ছিল ২৫ শতাংশের কাছাকাছি। সেই ঘাটতি যে সেপ্টেম্বরের মধ্যে মিটবে, এমন আশা আবহবিদদের অনেকেরই ছিল না। কিন্তু অগস্টের দ্বিতীয়ার্ধ ও সেপ্টেম্বরের ‘অস্বাভাবিক’ বৃষ্টিতে ঘাটতি পূরণ হয়ে গিয়েছে।
এ বার সারা দেশের অনেক জায়গাতেই (উত্তর-পূর্ব ভারত ও উত্তরবঙ্গ ছাড়া) ধানের মূল রোপণটাও হয়েছে ভাদ্র মাসে। খনার বচন অনুযায়ী, ভাদ্র মাসে ধান রুইলে সেই গাছের তেমন বৃদ্ধি হয় না (ভাদ্দরে কড়ান শীষকে)। কিন্তু আবহাওয়ার পরিবর্তন যে ভাবে হয়েছে, তাতে খনার বচনের প্রাসঙ্গিকতা নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠেছে।
এক কৃষিবিজ্ঞানীর কথায়, আগে মূল বর্ষণটা হত আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে। বর্ষা থাকত বড়জোর ভাদ্রের মাঝামাঝি পর্যন্ত। আশ্বিন মাসে কদাচিৎ ভারী বৃষ্টি হত। এখন নতুন নির্ঘণ্ট অনুযায়ী কৃষিবিজ্ঞানীরা বলছেন, “শেষ ভাদ্র ও প্রথম আশ্বিনের ভারী বর্ষণ ভাদ্র মাসে রোয়া ধানের বৃদ্ধি অনেকটাই ত্বরান্বিত করবে।” বরং কোনও কোনও দিক থেকে ফলন আরও ভাল হওয়ার সম্ভাবনা। কৃষিবিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যায়, “শরতের হিম ধানের শিসের পরিপুষ্টতা নষ্ট করে দিত। এখন বর্ষা পিছিয়ে যাওয়ায় আকাশ সব সময় মেঘে ঢাকা থাকবে। এই আবহাওয়ায় হিম পড়ার সম্ভাবনা নেই।”
বর্ষা দীর্ঘায়িত হওয়ার প্রভাব দেশের পূর্বাঞ্চলে কতটা পড়বে?
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “সেপ্টেম্বরে যে বৃষ্টিটা হওয়ার কথা, দক্ষিণবঙ্গে তা কিন্তু হচ্ছে না। আগামী পাঁচ দিন দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনাও নেই। তবে অক্টোবরে কী হবে, তা এখনও বলা যাচ্ছে না।”
আবহবিদেরা বলছেন, নিয়মানুযায়ী পশ্চিমবঙ্গ থেকে বর্ষা বিদায় নেওয়ার কথা ৮ অক্টোবর। কিন্তু গত এক দশক ধরে দেখা যাচ্ছে অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত টেনে দিচ্ছে বর্ষা। এ বার সারা ভারতেই বর্ষা বেশিদিন থেকে গিয়েছে। ফলে হেমন্তের শুরুতেও হিমের পরিবর্তে যে বৃষ্টি পড়বে না, সেই গ্যারান্টি কিন্তু আবহবিদেরা দিতে পারছেন না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.