কলকাতার ‘লাইফলাইন’ মেট্রোয় যাত্রীদের ‘লাইফ’ কতটা সুরক্ষিত, তা ঘিরেই এখন বড় প্রশ্নচিহ্ন। নিত্যদিনই গোলমালে মাঝপথে থেমে যাচ্ছে ট্রেন। দরজা খোলা রেখে মেট্রোর দৌড় থেকে শুরু করে কামরায় আগুন, ধোঁয়া সব মিলিয়ে চূড়ান্ত এক আতঙ্কের পরিস্থিতি এখন যাত্রীদের ভবিতব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যান্ত্রিক ত্রুটি নিয়ে ভোগান্তি তো রয়েছেই। তার উপরে কর্তৃপক্ষের তরফে তথ্য গোপন বা ভুল তথ্য পরিবেশন করা হলে সেই দুর্ভোগ যে কী আকার নেয়, মঙ্গলবার সকালে দমদম স্টেশনে তা-ই দেখা গেল।
কী গোলমালের জেরে এত বিড়ম্বনা? মেট্রো সূত্রে খবর, ৯টা ২ মিনিটে দমদম স্টেশনে কবি সুভাষগামী ট্রেনে যান্ত্রিক সমস্যার কারণে ধোঁয়া বেরোচ্ছিল। তাই নিরাপত্তার জন্য ট্রেনটিকে নোয়াপাড়া কারশেডে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পরে দমদম স্টেশনে অপেক্ষমাণ কয়েক হাজার যাত্রী প্রায় আধ ঘণ্টা দৌড়-ঝাঁপ করেও বুঝতে পারেননি, কোন প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাড়বে ট্রেন। আদৌ ট্রেন চলবে কি না, সংশয় দেখা দেয় তা নিয়েও। পরিষেবা স্বাভাবিক হতে বেজে যায় সাড়ে ৯টা।
রেলের কর্তারাই জানিয়েছেন, গড় আয়ু পেরিয়ে যাওয়া রেক এবং রক্ষণাবেক্ষণের সমস্যায় কলকাতা মেট্রো এখন জর্জরিত। উল্টে হাতে একগুচ্ছ নতুন প্রকল্প নিয়ে নেওয়ায় আরও জট পাকাচ্ছে। এমনকী, মেট্রোয় এখন পূর্ণ সময়ের জেনারেল ম্যানেজারও নেই বলে জানিয়েছেন মেট্রোর কর্তারাই। ফলে মেট্রো চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। এ সব নিয়ে সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত রেলমন্ত্রী চন্দ্রপ্রকাশ জোশী দিল্লি থেকে বলেন, “আমি সদ্য দায়িত্ব নিয়েছি। দেখে বলব।”
এ দিন সকালে দমদম স্টেশনের চিত্রটা ঠিক কেমন ছিল? ডাউন লাইনের ট্রেনে তখন যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। ট্রেন ছাড়ার কিছু আগে একটি কামরা থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখে আতঙ্কে নিমেষের মধ্যে ফাঁকা হয়ে যায় ট্রেনটি।
বিপত্তির শুরু এর পরে। মেট্রো বন্ধ হয়ে গিয়েছে রব তুলে বেশ কিছু যাত্রী প্ল্যাটফর্ম থেকে হুড়মুড়িয়ে নীচে নামতে থাকেন। তা দেখে পূর্ব রেলের দমদম স্টেশনের লোকাল ট্রেন থেকে নামা যাত্রীরাও দ্বিধায় পড়েন। এরই মধ্যে সওয়া ন’টা নাগাদ দমদমের আপ প্ল্যাটফর্মে কবি সুভাষ থেকে একটি ট্রেন এসে থামে। যাত্রীদের বক্তব্য, মাইকে ঘোষণা হয়েছে, ওই ট্রেনটিই কবি সুভাষের দিকে ফিরে যাবে। এ কথা রটতেই কয়েকশো যাত্রী ডাউন প্ল্যাটফর্ম থেকে নেমে আপ প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনে ওঠেন।
ডাউন প্ল্যাটফর্মেও তখন প্রচুর যাত্রী। কোনও ঘোষণাও নেই। জানা যাচ্ছে না কোন প্ল্যাটফর্ম থেকে মিলবে ট্রেন। কামারহাটির বিনয় দাস বললেন, “মেট্রোর কোনও কর্মীকেই পাইনি যে, জানতে চাইব।” এরই মধ্যে ৯টা ২৬ মিনিটে ডাউন প্ল্যাটফর্মে আচমকা কবি সুভাষগামী একটি ট্রেন এসে দাঁড়ায়। মুহূর্তে ট্রেনটি ভরে যায়। ছেড়েও দেয়। প্ল্যাটফর্মে তখনও বহু যাত্রীর ঢল।
এর পরেই ঘোষণা হয়, ‘যাঁরা আপ প্ল্যাটফমের্র ট্রেনে উঠেছেন, তাঁরা ট্রেনটি ফাঁকা করে দিন।’ কেউ নামতে চাননি। বিকাশ পাত্র নামে এক যাত্রী বলেন, “ট্রেন থেকে নেমে আবার ওই প্ল্যাটফর্মে যেতে গেলে, আজ আর অফিস যেতে হবে না।” শেষমেশ কয়েকশো যাত্রী নিয়েই আপের ট্রেনটি চলে যায় আউটারে। সেখান থেকে ট্রেন ঘুরিয়ে ডাউন প্ল্যাটফর্মে আনা হয়। ফের শুরু হয় হুড়োহুড়ি। অবশেষে ৯টা ৩৪ নাগাদ সেই ট্রেনটিও ছাড়ে।
রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক প্রত্যুষ ঘোষ বলেন, “কোন প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেন ছাড়বে, সে ব্যাপারে কন্ট্রোলরুম থেকে কোনও ঘোষণা হয়নি। ডাউনের বদলে আপ থেকে ট্রেন ছাড়ার ঘোষণা স্টেশন থেকে করা হয়ে থাকতে পারে।”
|