ক্লাস বয়কটের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার জন্য ছাত্রছাত্রীদের কাছে আবেদন জানালেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত। পাশাপাশি ওই আন্দোলন থেকে সরে না আসলে পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার ‘হুমকি’ও দিয়েছেন উপাচার্য। সোমবার রাতেই বিভিন্ন ভবনে ও পড়ুয়াদের হস্টেলগুলিতে এই মর্মে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন তিনি।
এ দিনই পরিবর্তিত সময়সূচি পাল্টানোর দাবিতে বিদ্যা ও ভাষা ভবনের আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরা বিশ্বভারতীর বিভিন্ন ভবনে ঘুরেছেন। ক্লাস বয়কটের আন্দোলনে সামিল হওয়ার জন্যও ওই পড়ুয়ারা ‘হাত জোর’ করে ছাত্র-শিক্ষক সকলকে অনুরোধ জানান। পাশাপাশি এ দিনও সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য ফের উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। যদিও তাঁদের এই ‘গাঁধীগিরি’ উপেক্ষা করে অবশ্য এ দিনও কলাভবন, সঙ্গীতভবন, শিক্ষাভবন ও পল্লিশিক্ষাভবনে নির্ধারিত ক্লাস ও পরীক্ষা হয়েছে। তবে মঙ্গলবারও ক্লাস বয়কটের জেরে বিশ্বভারতীর বিদ্যা ও ভাষাভবনে কার্যত অঘোষিত ছুটি ছিল।
এ দিকে, বিশ্বভারতীর সূত্রে খবর, সোমবারই বিভিন্ন ভবনের অধ্যক্ষ ও বিভাগীয় প্রধানদের কাছে পঠনপাঠন নিরবচ্ছিন্ন ভাবে চালু রাখার জন্য এসএমএস পাঠিয়েছেন বিশ্বভারতীর কর্মসচিব মণিমুকুট মিত্র। যদিও এ দিন ক্লাস বয়কটের আবহে বেশ কিছু ভবনে ও বিভাগে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশকে কার্যত ছুটির মেজাজে দেখা গিয়েছে।
অন্য দিকে, উপাচার্যের জারি করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে কড়া হওয়ার পাশাপাশি সমস্যা খতিয়ে দেখার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সমস্ত ভবনের অধ্যক্ষ ও আধিকারিকেদের নিয়ে এ বিষয়ে আলোচনায় বসা হবে। পাশাপাশি সুশান্তবাবু ওই বিজ্ঞপ্তিতে বারবার করে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস বয়কটের মতো ‘নেতিবাচক’ পদক্ষেপ থেকে সরে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ইউজিসির নিয়ম মেনে উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্তের নির্দেশে বিগত কয়েক মাস ধরে পরিবর্তিত সময়সূচি অনুযায়ী পঠনপাঠন ও দফতরের কাজকর্ম শুরু হয়েছে বিশ্বভারতীতে। কিন্তু নতুন সময়সূচি অনুযায়ী ক্লাস করতে প্রথম থেকেই সমস্যার কথা তুলছেন বিশ্বভারতীর একটা অংশ। মাত্র কয়েকদিন আগেই এ নিয়ে বিশ্বভারতীর শ্রীনিকেতন কৃষিবিদ্যা বিভাগে প্রথম শুরু হয়েছিল ক্লাস বয়কট। তবে উপাচার্য সংশ্লিষ্ট অধ্যক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসে তখনকার মতো বিষয়টির মীমাংসা করেন। কিন্তু এর পরপরই বিশ্বভারতীর বিদ্যা ও ভাষাভবনে শুরু হয় আন্দোলন। গত সোমবার থেকে পড়ুয়াদের একটা অংশ অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বয়কট শুরু করেছেন। প্রথম দিনই বিক্ষোভের মুখে পড়েন উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত। ওই দিনই বিশ্বভারতীতে এসেছিলেন ভারতে নিযুক্ত পোল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত। তাঁর সামনেই চলা এই আন্দোলনে প্রবল অস্বস্তিতে পড়েন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
এই আন্দোলন প্রসঙ্গে যদিও উপাচার্যের অভিযোগ, একটি বিশেষ অংশ থেকেই এ বিষয়ে মদত দেওয়া হচ্ছে। বিশ্বভারতীর বেশির ভাগ অংশই এই আন্দোলনকে সমর্থন করছেন না। সুশান্তবাবু আরও বলেন, “বিশ্বভারতীর একটা নিয়ম নীতি বলে বস্তু আছে। যে যখন খুশি আসবে, যখন খুশি চলে যাবে তা বরদাস্ত করা হবে না। শৃঙ্খলার মধ্যে থাকতে হবে।”
বিশ্বভারতীর এখন একটাই চ্যালেঞ্জ, যে ভাবেই হোক না কেন এই আন্দোলন যাতে আর কোথাও ছড়াতে না পারে সে বিষয়ে সব দিকে থেকে তৎপর হওয়া। |