শোধ হয় না দেনা, কৃষি খামার আঁধারেই
বেষণাগার রয়েছে। তবে যন্ত্রপাতি তো দূর অস্ত, দরজা-জানালাও নেই।
উন্নতমানের বীজ তৈরির যন্ত্র রয়েছে। খামারে পড়ে পড়ে মরচে ধরছে তাতে।
দুষ্কৃতীরা চুরি করে নিয়ে গিয়েছে কাঁটাতারের বেড়া। গরু-ছাগল ঢুকে ফসল খেয়ে যায়। নতুন বেড়া আর দেওয়া হয়নি।
হবেই বা কী করে! বাজারে যে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা দেনা। কাটোয়া মহকুমার কৃষি খামারগুলি তাই শুধু ‘নেই-রাজ্য’প্রহরী নেই, যন্ত্র নেই, জল নেই, কর্মীও নেই। বাজারের ব্যবসায়ীদের তাগাদার ঠেলায় লজ্জায় কার্যত মুখ নিচু করে অফিসে আসা-যাওয়া করেন আধিকারিকেরা।
কাটোয়া মহকুমায় কৃষি খামারের সংখ্যা চারটি। এর মধ্যে কাটোয়া ১ ব্লকের শ্রীখণ্ডের খামারটি মহকুমার কৃষি গবেষণাগার। সেখানেই নষ্ট হয়ে গিয়েছে হাওয়ার দিক নির্ণয় যন্ত্র। চুরি হয়ে গিয়েছে খামার এলাকার বেড়া। গবেষণাগারে দরজা-জানালা বলে কোনও বস্তু নেই। সবই নিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীর দল। একই চিত্র মঙ্গলকোট, কেতুগ্রাম ১ ও ২ ব্লকের খামারেও।
কেতুগ্রাম ২ ব্লকে খামারের ছবিটি তুলেছেন অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঙ্গলকোট কৃষি খামারের দায়িত্বপ্রাপ্ত উদয়চন্দ্র বেজ বলছিলেন, “নৈশপ্রহরী নেই, দরজা, জানালা, অন্য জিনিসপত্র চুরি হয়ে যাচ্ছে। কেউ দেখার নেই।” কেতুগ্রাম ১ কৃষি দফতরের এক কর্মীর খেদ, কাঁটা তারের বেড়া সারানোর টাকাও তাঁদের কাছে নেই। ফলে গরু, ছাগল ঢুকে ইচ্ছে মতো খামারের ফসল খেয়ে যায়। খামারের এক কর্মীর আবার দাবি, পুলিশ সব সময় তাঁদের অভিযোগ নিতে চায় না। সে জন্য দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। খামার হয়ে দাঁড়াচ্ছে সমাজবিরোধীদের আড্ডার জায়গা। পুলিশ অবশ্য অভিযোগ না নিতে চাওয়ার কথা মানেনি। খামারের আধিকারিকদের দায়ের করা চুরির অভিযোগের তদন্ত চলছে বলে জানায় পুলিশ। যদিও কোনও কিনারা হয়নি।
শ্রীখণ্ড, মঙ্গলকোট বা কেতুগ্রাম ১ ব্লকের কান্দরার খামারে এ বছর ধানবীজ উৎপাদন হলেও কেতুগ্রাম ২ ব্লকের গঙ্গাটিকুরিতে ধানবীজ বোনাই হয়নি। ফাঁকা পড়ে রয়েছে খেত। কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, এই খামারে কোনও ক্ষেত্রপাল নেই। এমনকী কৃষি প্রযুক্তি সহায়কও নিজের দায়িত্ব নিতে চাননি। পাশাপাশি, চাষের জন্য জলের বন্দোবস্ত নেই, দীর্ঘ দিন ধরে খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে গভীর নলকূপ। মহকুমা কৃষি আধিকারিক (প্রশাসন) রবিউল হক বলেন, “সব খামারগুলির পরিকাঠামোই ভেঙে পড়েছে। এক-একটি খামারে ২০-২২ একর করে জমি রয়েছে। কিন্তু নানা কারণে সেই সব জমি ব্যবহার করা যাচ্ছে না।”
খামারগুলির কর্মীরা জানান, ওই সব জমি ব্যবহার করলে সরকারের ধারের পরিমাণ আরও বাড়ত। প্রতি বছর চাষ করার জন্য বাজার থেকে কীটনাশক, রাসায়নিক সার, সাবমার্সিবল পাম্প ও ট্রাক্টর ভাড়া করতে হয় খামারের কর্মীদের। বছরের পর বছর টাকা শোধ না হওয়ায় ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ লক্ষ টাকা। মঙ্গলকোটের খামারের দায়িত্বপ্রাপ্ত উদয়বাবু জানান, তিনি ব্যক্তিগত ভাবে সরকারের কাছ থেকে বেশ কয়েক হাজার টাকা পাবেন। দু’বছরেও সেই টাকা মেলেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিকের ক্ষোভ, কীটনাশক ও সার ব্যবসায়ীরা দিনের পর দিন টাকা চেয়ে তাগাদা দেন। রাস্তায় চলাফেরা করতেই লজ্জা লাগে তাঁদের।
এমন পরিস্থিতি থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় কী? রবিউল হক বলেন, “টাকা চেয়ে সরকারের কাছে বিল পাঠানো হয়েছে। তা এলেই ঋণ শোধ করে দেওয়া হবে।” টাকা কবে আসবে, তা অবশ্য কারও জানা নেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.