মাঝরাতে পরিত্রাহি চেঁচাতে শুরু করেছিল কুকুরগুলো।
বর্ধমান শহরের গোদায় কাঁচা ঘুম ভেঙে জেগে ওঠেন অনেকেই। কুকুর চেঁচাচ্ছে কেন? চোর এল নাকি? চোখ কচলে একে-একে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন কয়েক জন।
আর তখনই চোখে পড়ে যায়, অপরিচিত আট-দশ জন লোক গ্রামে ঘুরছে! ডাকাত নাকি? চিৎকারে জেগে ওঠে পাড়া! আরও লোকজন বেরিয়ে আসে।
ভয় দেখাতে গুলি ছোড়ে অচেনা লোকগুলো, দাবি গ্রামের অনেকেরই। গ্রামবাসী পাল্টা ধাওয়া করেন। গোদা বাইপাসে ধরেও ফেলেন তিন জনকে। গণধোলাই শুরু হয়। সোমবার রাতেই মুমূর্ষু অবস্থায় তাদের বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান গ্রামের কিছু লোক। দু’জনকে তখনই ‘মৃত’ ঘোষণা করা হয়। এক জন পরে মারা যায়।
পুলিশ জানায়, নিহতদের নাম নিমাই স্বর্ণকার (৩০), কার্তিক কর্মকার (৪০) ও ধর্মেন্দ্র সিংহ (৩০)। প্রথম দু’জনকে মৃত অবস্থাতেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ঘণ্টা দুই পরে ধর্মেন্দ্রও মারা যায়। কার্তিকের বাড়ি স্থানীয় লক্ষ্মীপুর মাঠে, ধর্মেন্দ্রের গাংপুরে। নিমাইয়ের বাড়ি কোথায় তা জানা যায়নি।
পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলে একটি গুলিভরা পাইপগান ও পলিথিনের প্যাকেটে ছ’টি তাজা বোমা মিলেছে। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জার বক্তব্য, ‘‘তিন জনই দাগী দুষ্কৃতী। এর আগে গলসি থানা ধর্মেন্দ্র সিংহকে গ্রেফতার করেছিল। বাকিদের বিরুদ্ধেও কিছু ডাকাতির মামলা আছে। গণপিটুনির অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।” তবে এলাকার মানুষ এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। বরং কয়েক জন ঝেঁঝে ওঠেন, “আমরা কি রাতে ডাকাতি করতে বেরোই, যে কে কোথায় কাকে মেরেছে তা খেয়াল রাখব?” রাত পর্যন্ত পুলিশ কাউকে ধরেওনি।
মঙ্গলবার বর্ধমানে পুলিশ মর্গে এসে কেঁদে ফেলেন ধর্মেন্দ্রের স্ত্রী শিবানী সিংহ। তাঁর অভিযোগ, “হাসপাতালে আনার পরেও আমার স্বামী প্রায় দু’ঘণ্টা পড়ে ছিল। কোনও চিকিৎসা হয়নি।” তবে হাসপাতালের ডেপুটি সুপার তাপস ঘোষের দাবি, “আমরা চিকিৎসা শুরু করেছিলাম। কিন্তু ভর্তির কিছু ক্ষণের মধ্যেই উনি মারা যান। বিশেষ সময় পাওয়া যায়নি।” ধর্মেন্দ্রর এক বন্ধুর আক্ষেপ, “ওকে বারবার বলেছিলাম, খবরদার এই সমস্ত খারাপ কাজে জড়াস না। বিয়ে করেছিল, মেয়ে হয়েছে। তোর কিছু হলে ওরা পথে বসবে। তাই হল!” |