ডিজেল, গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম বাড়ার প্রতিবাদে মিছিলে পা মেলালেও বৃহস্পতিবার বিজেপি ও বামেদের ডাকা বনধ সাড়া দিল না দার্জিলিং পাহাড়। বনধ উপেক্ষা করে কর্মব্যস্ত থাকল তরাই-ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকার চা বাগান। তবে কোচবিহার, মালদহ ও রায়গঞ্জে বনধ সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কোচবিহারে বনধ সমর্থক পুরুষ-মহিলাদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থকদের একাংশের বিরুদ্ধে। রায়গঞ্জে বনধ সমর্থকদের ছোঁড়া ইটের আঘাতে জখম হয়েছেন একটি সরকারি বাসের চালক ও ১ জন যাত্রী। মালদহেও তৃণমূল যুব কংগ্রেসের নেতৃত্বে অন্তত ৬০টি বাইকে দলের নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে অফিস, দোকান খোলানোর ব্যাপারে ‘সাহায্য’ করতে গিয়ে হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ। জীবন বিমা নিগমের অফিসের তালা ভাঙা, বিমাকর্মী ভেঙে এক দুধ বিক্রেতাকে মারধর করা, গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পিকেটিং হটাতে হামলা চালানোর অভিযোগও উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তৃণমূল যুব কংগ্রেসের মালদহ টাউন কমিটির সভাপতি বিশ্বজিত রায়ের দাবি, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এদিন আমরা ৬০-৭০ টি বাইকে শহরে দেখতে বেরিয়েছিলাম। |
কোন কোন অফিস জোর করে কারা বনধ করছে? সেই সমস্ত অফিস খোলার জন্য কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে শহরে ঘুরছিলাম। বেশ কয়েকটি অফিস আমরা খুলিয়েছি। গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌনে ১১টা নাগাদ আমরা যেতেই এসএফআইয়ের প্রায় ১০০ সমর্থক হাঁসুয়া লাঠি নিয়ে আমাদের উপর হামলা শুরু করেন। ওঁদের হামলায় তৃণমূল যুব কংগ্রেসের দুই কাযর্কারী সভাপতি অনন্ত চক্রবর্তী ও নাসিমুল ইসলাম জখম হয়েছেন। এর পরে আমরা রুখে দাঁড়ালে এসএফআইয়ের এক সমর্থক রিভালবার থেকে গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে পালিয়ে যান।” এদিকে দলের ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগে সিপিএমের মালদহ জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্রের দাবি, “বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের ৪ থেকে ৫ জন সমর্থক পিকেটিং করছিল। সেই সময় তৃণমূল যুব কংগ্রেসের টাউন সভাপতির নেতৃত্বে শতাধিক তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থক আমাদের এসএফআইয়ের ৪-৫ জন সমর্থকদের উপরে হামলা চালায়। আমাদের দুজন কর্মীকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়েছে।” পাশাপাশি, কোচবিহারের সুনীতি রোডে এসইউসিআিয়ের কর্মী-সমর্থকতদের উপরে হামলার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। যদিও তৃণমূলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, বনধ সমর্থকেরা সরকারি বাস ভাঙচুরের চেষ্টা করছিলেন দেখে তাঁদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন এলাকার বাসিন্দারা। সমতলে বিক্ষিপ্ত ঝামেলা হলেও দার্জিলিং পাহাড় ছিল সম্পূর্ণ নিরুত্তাপ। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার তরফে মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে মিছিল করা হয়। কিন্তু, জনজীবন সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ছিল। ডুয়ার্সের সিংহভাগ চা বাগানে কাজ হয়েছে বলে মালিক সংগঠনগুলি দাবি করেছে। ইন্ডিয়ান টি এসোসিয়েশনের সচিব মনোজিৎ দাশগুপ্ত বলেন, “বেশির ভাগ বাগানে শ্রমিকরা কাজে গিয়েছেন। সংগঠনের তরাই-এর সব বাগানে কাজ হয়েছে। ডুয়ার্সে তিনটি বাগানে কাজ হয়নি বলে রিপোর্ট পেয়েছি।” রাজ্যের শ্রম মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর দাবি, “চা বাগানে স্বাভাবিক কাজ কর্ম হয়েছে। এ থেকেই আবার স্পষ্ট হল সিটুর উপরে চা শ্রমিকদের আস্থা নেই।” তৃণমূল চা শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি জয়াকিম বাক্সলা বলেন, “ডুয়াসের বাগানগুলিতে স্বাভাবিক কাজ হয়েছে।” |
সিপিএমের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সলিল আচার্য বলেন, “জেলায় বনধের ভাল সাড়া মিলেছে ডুয়াসের অন্তত ৩০টি বাগানে কাজ হয়নি। অন্য বাগানগুলিতেও প্রচুর শ্রমিক কাজে যোগ দেয়নি। কিছু স্কুল কলেজে শিক্ষকরা গেলেও ছাত্র না থাকায় ক্লাস হয়নি।” এ দিকে, উত্তরবঙ্গের সরকারি অফিসগুলিতে হাজিরার হার ছিল প্রায় অন্য দিনের মতোই স্বাভাবিক। যেমন গত ২৮ ফেব্রুয়ারির বনধে সংগঠনের নির্দেশ মেনে জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনিক ভবনে না-যাওয়ায় বেতন কাটা গিয়েছিল রাজ্য কো অর্ডিনেশন কমিটির সক্রিয় সদস্য শৈবালকান্তি পালের। এ দিন বৃহস্পতিবারের বনধে তিনি অবশ্য অফিসে যান। তাঁর কথায়, “কী করব? এক দিনের বেতন কাটা যাক, এটা কে বা চাইবেন? তা ছাড়া এদিনের বনধে নিয়ে সংগঠনের থেকে তেমন নির্দেশ ছিল না।” জলপাইগুড়ির কো অর্ডিনেশন কমিটির জেলা সম্পাদক অপূর্ব বসু বলেন, “সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বরা কেউই এদিন দফতরে যাননি। তবে অনেক সাধারণ কর্মীরা দফতরে গিয়েছেন বলে শুনেছি। সংগঠনের তরফে দফতরে যাওয়া বা না যাওয়ার কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। বিষয়টি কর্মীদের ওপরেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। রাজ্য সরকার যে মনোভাব নিয়ে চলছে সরকারি কর্মীরা শঙ্কিত।” |