হলদিয়ার জট সামাল দিতে
মহাকরণকে চিঠি বন্দরের
লকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও জট খোলেনি। বরং বৃহস্পতিবার তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র জঙ্গি আন্দোলন দেখার পরে শুক্রবারে হলদিয়া বন্দরের গেটের সামনে তৃণমূলের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর সভা করার ঘোষণায় শঙ্কিত কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ। এই সঙ্কট থেকে হলদিয়া বন্দরকে বাঁচাতে তাই রাজ্য সরকারের কোর্টে বল ঠেললেন কলকাতা বন্দর-কর্তৃপক্ষ। রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবকে চিঠি লিখে তাঁর হস্তক্ষেপ চাইলেন কলকাতা বন্দরের চেয়ারম্যান।
রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবকে লেখা সেই চিঠিতে বন্দর চেয়ারম্যান মণীশ জৈন লিখেছেন, এমন অসন্তোষ চলতে থাকলে লগ্নিকারীদের কাছে ভুল বার্তা যাবে। তাতে হলদিয়ার শিল্পগুলি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তেমনই সাগর বন্দরের ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। চিঠিতে তিনি বন্দরের ভিতরে এবং বাইরে সুষ্ঠু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে। ওই জঙ্গি আন্দোলনের পিছনে শ্যামল আদক নামে যে আইএনটিটিইউসি নেতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি আবার শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ।
মাল তোলা-নামানো নিয়ে সম্প্রতি যে গোলমাল শুরু হয়েছে হলদিয়া, সদ্য গত সপ্তাহে হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে তার নিষ্পত্তি হয়। উচ্চ আদালতের নির্দেশ জানার পরে হলদিয়ায় থেকে যায় এবিজি, যারা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে মাল তোলা-নামানোয় দেশের প্রথম সারির সংস্থা। এবিজি-র জন্য বরাদ্দ হয় ২ এবং ৮ নম্বর বার্থ। হাইকোর্ট জানিয়েছিল, এর পরে হলদিয়া বন্দরে যাতে কোনও আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা না হয়, তা দেখার দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র দফতরের। কিন্তু আইএনটিটিইউসি-র জঙ্গি আন্দোলন নিয়ে বন্দর-কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা কাটছে না। বস্তুত মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার বন্দর-কর্তৃপক্ষের সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে। তার উপরে আজ, শুক্রবার শুভেন্দুর সভা থাকায় পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে মনে করছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এই অবস্থায় রাজ্য সরকার কী করছে? স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বন্দর চেয়ারম্যানের চিঠি পড়েছি। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নিতে বলেছি। স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যা করার, আমরা করেছি।” পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন বলেন, “আমরা আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে যা করণীয়, তা-ই করছি।”
হলদিয়ার চিরঞ্জীবপুরে বন্দর অফিসে বিক্ষোভ
তবে শুধু পুলিশি হস্তক্ষেপে যে হলদিয়া বন্দরের সমস্যা মিটবে না, তা পরিষ্কার স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তার মন্তব্যেই। ওই কর্তা বলেন, গোটা বিষয়টির পিছনে রাজনীতি রয়েছে। আর হলদিয়া বন্দরে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে, তা শিল্প দফতরের দেখার কথা। গত সপ্তাহে হলদিয়া বন্দরে এবিজি-কে বার্থ দেওয়া নিয়ে তার সহযোগী সংস্থার দফতরে বিক্ষোভ দেখিয়ে ছিল আইএনটিটিইউসি। তখন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়ে তাঁর হস্তক্ষেপ চেয়েছিল এবিজি। পার্থবাবু হস্তক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরেও হলদিয়া বন্দরে শান্তি ফেরেনি। এ দিন পার্থবাবু বলেন, “এ ব্যাপারে আমার কাছে বিশদ খবর নেই। আমি বন্দর-কর্তৃপক্ষ-সহ সবার সঙ্গে কথা বলব।”
নতুন করে কেন গোলমাল হল হলদিয়া বন্দরে? হাইকোর্টের নির্দেশে হলদিয়া বন্দরের জারি করা নিয়ম প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়ে ফের ঘেরাও, স্লোগান এবং হুমকি-র আন্দোলনে সামিল হয়েছে আইএনটিটিইউসি। বন্দর সূত্রের খবর, হলদিয়ার চিরঞ্জীবপুরে বন্দরের ‘অপারেশনাল অফিস’ ঘেরাও করে এ দিন বিক্ষোভ দেখান প্রায় আটশো শ্রমিক। কাজ হারানোর আশঙ্কাতেই এই বিক্ষোভ। পণ্য খালাসের কাজে যুক্ত এই শ্রমিকদের অভিযোগ, বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রতিশ্রুতি দিয়েও ‘নন মেকানাইজড’ বার্থের বদলে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে পণ্য খালাসের জন্য ২ এবং ৮ নম্বর বার্থে বেশি সংখ্যক জাহাজ ভেড়ানোর বন্দোবস্ত করছেন। শ্রমিকদের আশঙ্কা, এবিজি-র ওই দুই বার্থে বেশি জাহাজ ভিড়লে তাঁরা কাজ হারাবেন।
প্রথমে ঠিক হয়েছিল, ২ নম্বর বার্থে নোঙর করবে ডারবান থেকে ম্যাঙ্গানিজ নিয়ে আসা ‘এপিজে শিরিন’ নামে একটি জাহাজ। আর ৮ নম্বর বার্থে ভিড়বে অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা কোকিং কোল বোঝাই ‘এমভি ন্যানোস’। কিন্তু মঙ্গলবারের বিক্ষোভের পরে সিদ্ধান্ত হয়, এপিজে শিরিন বি-৯ বার্থে এবং ন্যানোস ৪-বি বার্থে নোঙর করবে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এপিজে শিরিন বি-৯ বার্থেই আসে। কিন্তু ন্যানোস ৪-বি’র বদলে ৮ নম্বর বার্থে পৌঁছয়। তাতেই চটে যান শ্রমিকরা। এই ঘটনা বুধবারের।
হলদিয়া বন্দর সূত্রের খবর, কেন ওই জাহাজকে ৮ নম্বর বার্থে ঢোকানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে দশটা নাগাদ বন্দরের এক ম্যানেজারকে টেলিফোন করে শুভেন্দুবাবু তা জানতে চান। তাঁর দাবি, যাদের মাল এসেছে ওই জাহাজে, সেই ইলেকট্রোস্টিল কাস্টিং লিমিটেড ২ ও ৮ নম্বর বার্থে জাহাজ ঢোকাতে চায়নি। ওই সংস্থার অ্যাসোসিয়েট ভাইস প্রেসিডেন্ট এ কে দে জানান, “ওই বার্থের পরিবর্তে ‘নন মেকানাইজড’ বার্থে জাহাজটি গেলে পরিবহণ ও খরচের ক্ষেত্রে আমাদের সুবিধা হত। আমরা বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে সাংসদকে জানিয়েছি।” শুভেন্দুবাবু বলেন, “ইলেকট্রোস্টিল কর্তৃপক্ষ আমাকে বন্দরের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন। আমি সমস্ত বিষয়টি জেলাশাসকে দেখতে বলেছি। আজ, শুক্রবার বন্দরের গেটে সভা করে যা বলার বলব।” বন্দর সূত্রের খবর, শুভেন্দুবাবু হলদিয়া বন্দরের এমন আচরণ ‘বরদাস্ত’ করবেন না বলে জানিয়ে দেন। অভিযোগ, চিরঞ্জীবপুরের অফিস ঘেরাওয়ের হুমকি দিয়ে তিনি জানান, ওই জাহাজের মাল নিয়ে কোনও ট্রাককে বন্দরের বাইরে বেরোতে দেওয়া হবে না।
তৃণমূল শ্রমিক ইউনিয়নের যে নেতার বিরুদ্ধে জঙ্গি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ, সেই শ্যামল আদক বলেন, “আমার বিরুদ্ধে বন্দর কর্তৃপক্ষ মিথ্যা অভিযোগ করছেন। তবে শ্রমিকদের এই দুর্দশা আমরা এড়াতে পারি না।”
বন্দর-কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁরা হাইকোর্টের নির্দেশ মেনেই পদক্ষেপ করেছেন। স্বরাষ্ট্রসচিবকে লেখা চিঠিতে চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, হলদিয়া বন্দরে এমনিতেই গত কয়েক বছরে পণ্য খালাসের পরিমাণ কমে গিয়েছে। হলদিয়া বন্দরের মাধ্যমে তেল, ইস্পাত, পেট্রোরসায়ন, সার ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পের কাঁচামাল আসা-যাওয়া করে। এখানে গোলমাল হলে এই শিল্পগুলির কাঁচামাল সরবরাহের উপরে প্রভাব পড়বে এবং এর জেরে উৎপাদন ব্যাহত হবে বলেই তাঁর আশঙ্কা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.