বক্তা স্পিন এবং শ্রীলঙ্কার উইকেট সম্পর্কে একটু-আধটু জানেন! টেস্ট ক্রিকেটের ১৩৫ বছরের ইতিহাসে তাঁর চেয়ে বেশি উইকেট অবশ্য কেউ পায়ওনি। টেস্ট এবং ওয়ান ডে মিলে অতিমানবীয় ১৩৩৪ উইকেট। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের কোহিনুর অথচ ঘরের মাঠে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কোথাও নেই। শ্রীলঙ্কান পার্লামেন্টের কাছাকাছি ডাউনটাউন কলম্বোয় তাঁর নতুন বাড়িতে অবশেষে মুথাইয়া মুরলীধরন-কে ধরতে পারল আনন্দবাজার...
প্রশ্ন: আপনার দেশে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হচ্ছে অথচ আপনি কোথাও নেই। একটা ম্যাচেও আজ অবধি এলেন না।
মুরলী: আমি যেতে যাব কেন? বাড়িতে বসে টিভিতে খেলা দেখছি। কালকের ইন্ডিয়া ম্যাচটা শুধু দেখা হয়নি।
প্র: সে কী, আপনি বাড়ি বসা। অথচ ইংরেজ-অস্ট্রেলীয়-ভারতীয় সব সাংবাদিক আপনাকেই খুঁজছে। আর পাচ্ছে না। শ্রীলঙ্কা ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ লড়ছে এবং কোনও এক মুরলীধরন বাড়িতে কাটাচ্ছেন, ভাবাই যায় না।
মুরলী: টিভি সবচেয়ে ভাল। খেলাটা টিভিতে অনেক বেটার বোঝা যায়।
প্র: মাঝে শোনা গেছিল আপনি রাজনীতিতে যোগ দিতে পারেন। আপনার গ্রহণযোগ্যতা এ দেশে দারুণ। তামিল এবং সিংহলি দুই সম্প্রদায়েরই আপনাকে মেনে নিতে কোনও স্বতঃস্ফূর্ত সমস্যা নেই।
তা হলে কি শিগগিরই আমরা দেখব শ্রীলঙ্কার ক্রীড়ামন্ত্রী জনৈক মুরলীধরন?
মুরলী: দেখুন ভাই, আমি খেলা ছাড়ার পর দু’বছর চলে গিয়েছে। যদি রাজনীতির শখই থাকত এই দু’বছরের মধ্যেই আমাকে ক্যাবিনেটে দেখতে পেতেন।
প্র: তা হলে করছেন কী? স্বাভাবিক জীবনযাপন। বাজারে যাওয়াটাওয়া। এখন আপনি নিশ্চয়ই আলুর দাম বলতে পারবেন।
মুরলী: বাজারের দরদাম আমি আগেও বলতে পারতাম। দোকানবাজার আগেও গিয়েছি। এটা ইন্ডিয়া নয় যে বেরোলেই সারাক্ষণ মব্ড হয়ে যেতে হবে (হাসি)।
প্র: খেলা কি পুরো ছেড়ে দিলেন?
মুরলী: একেবারে ছেড়ে দিইনি। তবে শুধু টি-টোয়েন্টি। অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ খেলব। ইংল্যান্ডে টুকটাক খেলছি। তার জন্য সপ্তাহে যে ক’দিন ট্রেনিং করা দরকার হয়, সেটা করি।
প্র: এর বাইরে? গল্ফ বা টেনিস?
মুরলী: এর বাইরে আর কিছু নেই। রিল্যাক্সিং।
প্র: সে কী! আপনি রিল্যাক্স করবেন কেন? সেটা তো করবে বিশ্বব্যাপী ব্যাটসম্যানরা। যারা এত বছর আপনাকে সামলাতে হবে বলে অনেকে চোখের পাতা রাতে এক করতে পারেনি।
মুরলী: এই জীবনটাই এখন আমার পছন্দ। কোনও চাপ নেই। কাউকে কিছু প্রমাণ করার নেই। রোজ উইকেট নিতে হবে এমন খাঁড়া মাথার ওপর ঝুলছে না।
প্র: শ্রীলঙ্কান উঠতি স্পিনাররা যোগাযোগ-টোগাযোগ রাখে? এই যে অজন্তা মেন্ডিস চোট সারিয়ে ফিরলেন?
মুরলী: অনেকে ফোনটোন করে। ইদানীং কথা বলতে পারিনি। আমি ছিলামও না বহু দিন এখানে। ইংল্যান্ড, তার পর ইন্ডিয়া ঘুরে সদ্য কলম্বো পৌঁছেছি।
প্র: যুবরাজের প্রত্যাবর্তন দেখে কেমন লাগল?
মুরলী: অকল্পনীয়। এ রকম হয় নাকি? আমি তো এক বছর আগে স্বপ্নেও ভাবিনি! যুবরাজকে কী বলবএক্সেপশনাল!
প্র: আর সচিন তেন্ডুলকরের খেলে যাওয়া! ভারতে জাতীয় বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে!
মুরলী: আমি বুঝতে পারছি না সচিনের নিজের যদি খেলে এখনও ভাল লাগে। ও যদি পারফর্ম করতে পারে, তা হলে কার কী জ্বালা হচ্ছে? যখন ক্রিকেটে এসেছিল তখন তো এই সব সমালোচককে জিজ্ঞেস করে আসেনি! তা হলে ছাড়ার সময়ই বা এদের জিজ্ঞেস করতে হবে কেন? প্লেয়ার নিজে ঠিক করবে সে কখন ছাড়বে! বিশেষ করে সচিনের লেভেলের প্লেয়ার!
প্র: আজ ইন্ডিয়ান টিমের আলোচনা শুনছিলাম যে, শ্রীলঙ্কার এ বারের পিচের চরিত্রে সবাই দিশেহারা। প্রেমদাসায় যে এত বাউন্স করবে, সুইং করবে না, বল কম টার্ন করবে, কেউ ভাবেনি।
টিমগুলোর মনে হচ্ছে এবং অবশ্যই ভারত তাদের মধ্যে এক নম্বর যে উইকেট যখন এত বদলেই গ্যাছে, টুর্নামেন্ট প্ল্যানিং নতুন করে করতে হবে।
মুরলী: আমি একমত নই। কোথায় বদলেছে পিচ? পি সারা ওভালে এক রকম আছে। গল-এ এক আছে। এসএসসি-তে একই রকম রয়েছে।
প্র: কিন্তু প্রেমদাসায় তো অনবরত বাউন্স করে গেল। আর ভারতের এখানেই সব ম্যাচ পড়েছে।
মুরলী: পিচ নতুন তৈরি হয়েছে বলে একটু শক্ত আছে। তার ওপর যত খেলা হবে বল তত নামবে। দেখুন না সুপার এইটেই বল ঘুরবে।
প্র: কিন্তু ভারত তো মনে হচ্ছে আরও নিশ্চিত হচ্ছে যে ৩+১ কম্বিনেশনই ভাল।
মুরলী: প্রেমদাসায় স্পিনার না বাড়ালে ভারত ভুল করবে।
প্র: আপনার কাছে টুর্নামেন্ট ফেভারিট কারা?
মুরলী: টি-টোয়েন্টিতে ফেভারিট বলা যায় না। এটা লটারির মতো। তবে মনে করুন টুর্নামেন্টটা ওয়ান ডে আর আমাকে একই প্রশ্ন করেছেন...
প্র: হুঁ...
মুরলী: তখন বলতাম, উপমহাদেশের কোনও টিম। দিনের শেষে ঘুরেঘারে সেই টিপিক্যাল শ্রীলঙ্কান উইকেটই কিন্তু দাঁড়াবে। ওরাই সেই সুবিধে পাবে।
প্র: এখানে আসা থেকে বিদেশি সাংবাদিকদের সবার মনে হচ্ছে শ্রীলঙ্কা খেলছে অথচ আপনার ছিপছিপে চেহারাটা রান আপে এসে ঘূর্ণি ডেলিভারিটা ছাড়ছে না, এর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটাই অস্বস্তিকর!
মুরলী: জীবন তো এ রকমই। আমি তো কুড়ি বছর ক্রিকেট খেলে ছাড়লাম। শেষ এক দিন করতেই হত। তার পরেও তো দু’বছর চলে গেল।
প্র: টেস্ট ক্রিকেট শেষ করে ওঠা ভাবলে কেমন লাগে?
মুরলী: শেষ ম্যাচটায় ইন্ডিয়ার সঙ্গে ৮ উইকেট নিই। একেবারে খেলার শেষে এসে আমার ৮০০ উইকেটটাও হয়ে যায়। এর চেয়ে ভাল এন্ডিং আর কী পেতে পারতাম!
প্র: এন্ডিং নয় হয়তো। তবে এক্সটেনশন পেতে পারতেন। ক্রিকেট ছেড়ে সরাসরি মন্ত্রিসভায়।
মুরলী: বললাম তো। ইচ্ছে থাকলে দু’বছর আগেই হত। তখন যখন হয়নি, আর হবে না!
|