সম্পাদকীয় ১...
সি পি আই এম হাজির!
ন্ধ লইয়া রাজনৈতিক দলকে কথা শুনাইয়া কোনও লাভ নাই, তাহারা কথা শুনিবে না। বয়কট, অবরোধ, মিছিল, বন্ধ আদি ষোড়শোপচারে পূজা না করিলে ভারতীয় জনগণেশ তুষ্ট হন না। এই রাস্তার রাজনীতি হইতে যথার্থ গণতন্ত্রে উত্তীর্ণ হইতে ভারতের আরও কয়েক শতাব্দী লাগিবে, পশ্চিমবঙ্গের কয়েক সহস্রাব্দ। স্বীকার করিতেই হইবে যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাম্প্রতিক কালে এই বিষয়ে ব্যতিক্রমী হইয়া উঠিয়াছেন বিরোধী শিবিরে থাকিতে থাকিতেই তিনি বনধ বন্ধ করিয়াছিলেন। কিন্তু সি পি আই এম অন্তত তাঁহার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করিবে বলিয়া কিছুমাত্র ভরসা নাই। তাহারা বনধ-এর জন্ম দিয়াছে, সুতরাং বাৎসল্য অতি বিষম বস্তু এই আশ্চর্য সৃষ্টিটিকে পরম যত্নে লালন করিয়া চলিবে।
কিন্তু তাহার পরেও প্রশ্ন থাকিয়া যায়। বনধ কেন? কীসের প্রতিবাদে? কাহার বিরুদ্ধে? সি পি আই এম এবং তাহার নিরুপায় শরিকরা যে বন্ধ বৃহস্পতিবার উদ্যাপন করিল, তাহার বর্শামুখ নির্দিষ্ট ছিল মনমোহন সিংহের প্রতি। কেন্দ্র তথা শাসক কংগ্রেসই এই প্রতিবাদ আন্দোলনের প্রতিপক্ষ। অথচ পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থীরা বিলক্ষণ জানেন, কংগ্রেস নয়, তাঁহাদের প্রকৃত প্রতিপক্ষের নাম তৃণমূল কংগ্রেস। তাঁহারা যদি স্বধর্মে স্থিত থাকিতে চাহেন, তবে তাঁহাদের রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে রথ সংস্থাপন করিতে হইবে। কী ভাবে? সি পি আই এমের নায়কদের অধিক পরিশ্রমের প্রয়োজন নাই। তাঁহারা নিজেদের অতীতে ফিরিয়া গেলেই উত্তরটি খুঁজিয়া পাইবেন। এক কালে, নবীন পশ্চিমবঙ্গে তাঁহাদের রাজনৈতিক উত্থানের উত্তাল দিনগুলিতে বিরোধী বামপন্থীরা রাস্তার রাজনীতিই আঠারো আনা অনুশীলন করিতেন। তখন তাঁহাদের দাবি ছিল: দরিদ্রের খাদ্য চাই, উদ্বাস্তুর বসতি চাই, বেকারের চাকরি চাই। এই চাহিদাগুলি পূরণের জন্য তাঁহারা রাজ্যের শাসকদের উপর তীব্র এবং নিরন্তর চাপ সৃষ্টি করিতেন, তাঁহাদের রাত্রের ঘুম কাড়িয়া লইতেন। গত সওয়া এক বছরে পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থীদের রাজ্য সরকারের উপর তেমন কোনও চাপ সৃষ্টির তিলমাত্র চেষ্টাও করিতে দেখা যায় নাই। সি পি আই এম নিজের চিন্তাধারা সংস্কার করিবে, জুরাসিক যুগ হইতে একবিংশ শতাব্দীতে উত্তীর্ণ হইবে এমন আশা বোধ করি বুদ্ধদেববাবুও আর পোষণ করেন না। কিন্তু সি পি আই এম অন্তত সি পি আই এম হইবে, এমন প্রত্যাশা তো অন্যায় ছিল না।
সূর্যকান্ত মিশ্র এবং তাঁহার সহকর্মীরা যদি ‘চাকরি চাই, চাকরি দাও’ বলিয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁহার অনুগামীদের অতিষ্ঠ করিয়া তুলিতেন, পশ্চিমবঙ্গে শিল্পায়নের দাবিতে আন্দোলন করিতেন, ক্ষতবিক্ষত রাস্তাঘাট সংস্কারের জন্য জেলায় জেলায় এবং মহানগরে প্রশাসনের বিরুদ্ধে তুমুল বিক্ষোভ সংগঠিত করিতেন, তাহা হইলে বুঝা যাইত, পশ্চিমবঙ্গে একটি বিরোধী রাজনীতিক দল রহিয়াছে। সুষ্ঠু এবং তৎপর প্রশাসনের দাবিতে, দ্রুত এবং ব্যাপক উন্নয়নের দাবিতে সি পি আই এম বাংলা বনধ ডাকিলেও বন্ধ অন্যায়ই থাকিত, কিন্তু বিরোধী দল হিসাবে তাহারা নিজেরা যথাস্থানে বিরাজ করিত। এমনকী, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যরা যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কর্মসংস্থানের স্বার্থে সমস্ত রুগ্ণ কারখানা অধিগ্রহণ করিতে বলিতেন, জিনিসপত্রের দর কমাইবার জন্য সমস্ত বেসরকারি বাজারে মূল্য নিয়ন্ত্রণ করিবার দাবি জানাইতেন, নিদেনপক্ষে কংগ্রেস-শাসিত রাজ্যগুলির মতো রান্নার গ্যাসে বাড়তি ভর্তুকির জন্য মহাকরণ অবরোধ করিতেন, তাহা হইলে আমরা নীতিগত কারণে তীব্র আপত্তি জানাইলেও তাঁহাদের বিরোধী বলিয়া চেনা যাইত। কিন্তু তাঁহারা গত সওয়া এক বছর যাবৎ দিগ্ভ্রষ্ট উদ্ভ্রান্ত নাবিকের মতো রাজনীতির দরিয়ায় ভাসিয়া বেড়াইতেছেন। হাল ভাঙিয়াছে, পাল ছিঁড়িয়াছে, হাতে রহিয়াছে কেবল বাংলা বনধ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.