|
|
দোমহানি রেলস্টেশন |
তেভাগা আন্দোলনের প্রথম ১৩ জন শহিদের নিথর দেহ শায়িত রাখা হয়েছিল স্টেশনটির প্ল্যাটফর্মে।
“ছলছলাইল ঘুরঘুটি অন্ধকার রাতে” গানটি লিখে গেয়ে শুনিয়েছিলেন প্রখ্যাত গীতিকার ও সুরকার প্রয়াত সলিল চৌধুরী সেই স্টেশন চত্বরেই।
স্টেশনটি দোমহানি রেল স্টেশন। ১৯১৭ সালে তিস্তা নদীর পারে দোমহানিতে স্থাপিত হয় বেঙ্গল-ডুয়ার্স রেল (বিডিআর)-এর স্বয়ংসম্পূর্ণ হেডকোয়ার্টার। একসময়ে জেলার ব্যস্ততম রেলস্টেশনটি অতীতের কঙ্কাল হয়ে প্রতিশ্রুতির দিন গুনছিল আর রোমন্থন করছিল সেই সব স্মৃতি। দোমহানি -লালমণিহাট-বিহারের ছোটনাগপুর লাইন ধরে ছুটে চলেছে বেঙ্গল-ডুর্য়াস রেলগাড়ি। খরস্রোতা তিস্তাকে পাশে রেখে রেলগাড়ি ছুটে চলেছে নিউমালচ্যাংড়াবান্ধা। ৪৭-এ দেশভাগের পর ১৯৫৪-য় বার্নেশঘাট- দোমহানি রেললাইন তুলে দেওয়া হয়। তার পর ১৯৬৮-র ভয়াবহ বন্যায় বিধ্বস্ত নিউমাল-চ্যাংড়াবান্ধা রেললাইনও উঠে যায়। |
|
বি ডি আর-এর গুরুত্ব হারিয়ে দীর্ঘকাল মৃত সরীসৃপের মতো পড়ে থাকা রেলপথকে ঘিরে কোনও ইতিবাচক প্রতিশ্রুতি শোনা যায়নি দীর্ঘ দিন। অবশেষে দোমহানির আকাশে বিপর্যয়ের মেঘ কেটে আত্মবিকাশ করতে চলেছে প্রতিশ্রুতি-সম্ভাবনার আলো। যে স্বপ্ন নিয়ে এক সময় ড্রাইভার হারাধন সেন ড্রাইভার হয়ে এসেছিলেন লালমণিহাট থেকে দোমহানিতে, সে স্বপ্নের পুনরুজ্জীবনের প্রত্যাশায় চ্যাংড়াবান্ধা থেকে নিউমাল ভায়া দোমহানি হয়ে পাতা হয়েছে নতুন রেললাইন। নতুন পলেস্তরা আর রং-এ সেজে উঠেছে দোমহানি রেলস্টেশন। রেলের তদানীন্তন জেনারেল ম্যানেজার পলহোয়েল-এর নামে ১৮৯২ সালে স্থাপিত হয় জেলার প্রথম রেলওয়ে বিদ্যালয়। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সেই পলহোয়েল উচ্চবিদ্যালয়ের পশ্চিম প্রান্ত ঘেঁষে পাতা নতুন পথ দিয়ে ছুটবে রেলগাড়ি-চ্যাংড়াবান্ধা-দোমহানি-নিউমাল। কখনও ‘আপ’ কখনও ‘ডাউন’।
|
লেখা ও ছবি গৌতমেন্দু নন্দী, জলপাইগুড়ি।
|
তাঁদের স্মরণে সেতু |
সব নদীর একটা ইতিহাস থাকে। কিন্তু শুধু সাঁতরে নয়, নদীকে লঙ্ঘনের স্পর্ধা দিল সেতু। কিন্তু মৃত্যুকে লঙ্ঘন করা যায় না। তা নিয়ে ভাবা মানেই একটি দিন নষ্ট। সুতরাং তাকে ইচ্ছে মতো আসতে দাও। আর এই নদীর দু’পারেই চলে মানুষের আভিজাত্য ভাঙার যুদ্ধ। পানতা ফুরোনো সৌজন্য ভাঙার যুদ্ধ। কলকল স্রোতে বইছে, তাই করলা। জলপাইগুড়ি শহরের বুকে মাথা দিয়ে মানুষের ভাষা ঠোঁটে বইবার নদী। ওর বক্রতা জটিল নয়। ওর বুকে অনর্গল চাঁদ ভাঙলেও নীরব থাকে জল। নদী বলে অন্য কোথাও চল। শুধু ফিরে দেখার সাদা-কালো ডকুমেন্টেশন নয়। সব কিছুর পরও চুরমার দূরবিন সত্যিটা দেখায়। ’৬৮-র বন্যায় পুনশ্চ লেখার সময় পায়নি শহরবাসী। অভিমান স্বাভাবিক। তাই তিস্তার ভয়ঙ্কর সুন্দর মোহে এই একটা দিক অজানা ছিল জলপাইগুড়ির। লক্ষ্মীপূর্ণিমার চাঁদের সঙ্গে চিরতরে ডুবে গেল সেই মুখ। প্রার্থনা ছিল না, তাই সে দিন প্রদীপ জলে ভাসেনি। বালু ধুয়ে দিল শোকপ্রবাহ। কতটা জলে নদীকে নদী বলা যায়? সে সময় সেসবোর্ডের আমলে করলার উপর দুটো সেতু ছিল। আর এ সময় জলপাইগুড়ির পৌরকাজ হত জলপাইগুড়ি ইউনিয়ন নামে। পরবর্তীতে ১৮৮৪ সালে তা বাতিল করে ১৮৮৫-তে জন্ম নিল জলপাইগুড়ি পৌরসভা। কিন্তু ১৮৭১-এ রোডসেস আইন চালু হবার পর ১৮৭৮-এ আরসিবি বা রোড সেস বোর্ড শহরে কাজ শুরু করে। |
|
এবং স্থানীয় দিনবাজারে করলা নদীর বুকে একটি ব্রিজ তৈরির পরিকল্পনা নেয়। এবং বরাদ্দ টাকার পরিমাণ ছিল ৪৫০০ টাকা। ধারণা করা হয় ১৮৮৪-তে দিনবাজারের এই কাঠের সাঁকো খুলে যাওয়ার। পরবর্তীতে ১৯২৯-এ পুলটি ভাল করে তৈরি করা হয়। তবে আরসিবি-র খাতায় দেখা যায় ১৮৮০-র ডিসেম্বর মাসে মিচেল অ্যান্ড কোম্পানিকে ২৪১০০ টাকায় স্টেশন কাছারির পথে করলার উপর লোহার খুঁটি দিয়ে পুল তৈরির বরাত দেওয়া হয়। শেষপর্যন্ত ১৯৪০-এ জেলা বোর্ড এটিকে ভেঙে ৭২০০০ টাকা খরচে প্রথম করলার উপর কংক্রিটের সেতু নির্মাণ করে। এবং সেটাই করলার বুকে প্রথম বালিপাথরের ভাস্কর্য। কিন্তু ৬৮-র বন্যায় এই সেতু ভেঙে গেলে ১৯৭০-এ এই নতুন সেতু তৈরি হয়। মুখগুলো মনে রেখেই সম্পর্কের সুতোয় ঝুলছে সেতু। আজও বাস, ট্রাক চললে দোলে, তাচ্ছিল্যে নিভে গেছে সেতুর রাতবাতি। তবু ঘনান্ধকারেও হেডলাইটে স্পষ্ট হয়ে ওঠে পাষাণ ফলকটি। সলিল সমাধির পরও জলের স্মারক, সেতু ছাড়া আর কী হতে পারে? নীরবতা জরুরি। সে শুধু সেতু নয়, মৃত্যুযাপনের মহেঞ্জোদড়ো! জেগে আছে আজও।
|
লেখা ও ছবি সন্দীপন নন্দী। বালুরঘাট।
|
‘দাবী’ পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা |
ঘুমভাঙা ডুয়ার্সের প্রতিবাদী গণকণ্ঠ ‘দাবি’ পত্রিকাটি আলিপুরদুয়ার থেকে ১৯৫৭-র ৭ নভেম্বর প্রকাশিত হয়েছিল। সাপ্তাহিক হিসেবে জনপ্রিয়তা ছিল প্রচণ্ড। বহু ভাষাভাষি জনজাতির বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি ‘দাবী’-র দর্পণে প্রতিফলিত হবার সঙ্গে সঙ্গে নবীনরাও ‘দাবী’-র আশ্রয়ে প্রতিভা প্রকাশের সুযোগ পেত। শারদসংখ্যা ও বিশেষ কয়েকটি সংখ্যাও নিয়মিত প্রকাশ হত সমৃদ্ধ সাহিত্যসম্ভার নিয়ে। বিশিষ্ট কবি জগন্নাথ বিশ্বাস ছিলেন প্রথম দিকের সম্পাদক। পরে সম্পাদনা দায়িত্ব গ্রহণ করেন দিব্যেন্দু সেন। অর্ধশতাব্দী কাল চলবার পর নানা কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। গত ১২ অগস্ট সাড়ম্বরে ফের প্রকাশিত হল ‘দাবী’র বিশেষ সংখ্যা।
|
নির্মল ভট্টাচার্য। আলিপুরদুয়ার।
|
কড়চা পাঠান সম্পূর্ণ নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করে।
উত্তরের কড়চা
আনন্দবাজার পত্রিকা প্রাঃ লিঃ,
১৩৬/৮৯ চার্চ রোড,
শিলিগুড়ি-৭৩৪৪০১ |
|
|