বাড়ির অমতে বিয়ে, খুনের হুমকি মেয়ের বাবার
বাড়ির অমতে সম্পর্ক গড়ার ‘অপরাধে’ সোমবার নাকাশিপাড়ায় বাপ-দাদার হাতেই খুন হয়ে গিয়েছিল নাবালিকা মেয়েটি। মঙ্গলবার মানবাধিকার কমিশনের দ্বারস্থ হলেন এক প্রাপ্তবয়স্ক নবদম্পতি, মেয়ের বাড়ি থেকে যাঁদের ক্রমাগত ‘হুমকি’ দেওয়া হচ্ছে, ‘তোদের হাতের সামনে পেলে খুন করব।’
প্রাণের ভয়ে স্ত্রী তারিনা সুলতানাকে নিয়ে কার্যত পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বছর সাতাশের মিঠুন মণ্ডল। তাঁর অভিযোগ, শ্বশুরবাড়ি থেকে তাঁকে নাগাড়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। খুন করে ফেলা হবে বলে শাসানো হচ্ছে। বাড়িতে, অফিসে মাঝেমধ্যেই ‘চড়াও’ হচ্ছে তারিনার পরিবার। অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে যে, মিঠুনরা নিজেদের বাড়িতে থাকতেই পারছেন না। ইতিমধ্যেই মহিলা কমিশন এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের (পশ্চিম) সঙ্গে দেখা করেছিলেন ওই দম্পতি। তাতেও হুমকি কমেনি বলে অভিযোগ। নিরাপত্তার আর্জি নিয়ে এ দিন তারিনাকে নিয়ে মানবাধিকার কমিশনে আসেন মিঠুন মণ্ডল।
মিঠুনের বাড়ি জয়নগরের বকুলতলা গ্রামে। সেখানে মিঠুনের দুই ভাই একটি দোকান চালান। মিঠুন নিজে কলকাতা পুরসভার কঠিন বর্জ্য বিভাগের কেরানি। বছরখানেক আগে অশোকনগরের বিড়া মল্লিকপাড়ার বাসিন্দা, উনিশ বছরের যুবতী তারিনার সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। মাস কয়েক আগে দু’জনে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন।
মানবাধিকার কর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে তারিনা-মিঠুন। ছবি: রণজিৎ নন্দী
তারিনার বাবা ইসরায়েল মল্লিক সিঁথিতে একটি বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রে কাজ করেন। বিড়ায় তাঁর প্রচুর জমিজমা রয়েছে। এলাকায় প্রভাব প্রতিপত্তিও যথেষ্ট। তুলনায় মিঠুনের আর্থিক অবস্থা ততটা স্বচ্ছল নয়। মিঠুন-তারিনার কাহিনি তাই মনে করিয়ে দিচ্ছে রিজওয়ানুর-প্রিয়ঙ্কার ঘটনাকে।
তারিনার বাপের বাড়ির কেউই মিঠুনের সঙ্গে মেয়ের সম্পর্ক মেনে নেননি। জুলাই মাসে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান তারিনা। অভিযোগ, এর পরই মিঠুনের মাঠপুকুরের অফিসে ১০-১২ জন দুষ্কৃতীকে নিয়ে হানা দেন তারিনার বাবা। মিঠুন সেখান থেকে পালান। অগস্ট মাসের প্রথম দিকে মিঠুন এবং তারিনা ‘স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট’-এ বিয়ে করেন। কিন্তু বিয়ের পরেও শ্বশুরবাড়ির লোকেদের ভয়ে স্ত্রীকে নিয়ে নিজের বাড়িতে ফিরতে পারেননি ওই যুবক। সোনারপুরে বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন। অভিযোগ, সেখানেও হানা দিয়েছেন তারিনার বাপের বাড়ির লোকেরা। তার পর থেকে কখনও আত্মীয়ের বাড়ি, কখনও বন্ধুর বাড়িতে রাত কাটাচ্ছেন তাঁরা। মিঠুনের অভিযোগ, এখনও ক্রমাগত ফোনে হুমকি দিয়ে বলা হচ্ছে, ‘সামনে পেলে খুন করে ফেলব।’
মিঠুনরা প্রথমে মহিলা কমিশনে গিয়েছিলেন। কমিশনের প্রধান, সুনন্দা মুখোপাধ্যায় ওঁদের পুলিশি সাহায্য নেওয়ার পরামর্শ দেন। সেই মোতাবেক পুলিশের কাছেও গিয়েছিলেন ওঁরা। কিন্তু পুলিশি আশ্বাস সত্ত্বেও হুমকি থামেনি বলে মিঠুনের দাবি। এ ব্যাপারে পুলিশের বক্তব্য কী? দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পশ্চিম) কঙ্করপ্রসাদ বারুই জানান, ওঁরা অভিযোগ জানিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু নির্দিষ্ট কারও নাম লেখেননি। “সোনারপুরের পুলিশকে বলা আছে। মিঠুনরা নির্দিষ্ট অভিযোগ জানিয়ে যোগাযোগ করলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এ দিন ওই দম্পতির সঙ্গে কথা বলার পর মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপার্সন অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপারের কাছে এ নিয়ে রিপোর্ট চেয়েছি। দু’জনেই প্রাপ্তবয়স্ক। শুধুমাত্র ভিন্ন দু’টি ধর্মের মানুষ বলে যেন ওঁদের উপর কোনও জোর-জুলুম না হয়।”
এ দিন মিঠুনদের সঙ্গে মানবাধিকার কমিশনে গিয়েছিলেন একটি মানবাধিকার সংস্থার প্রতিনিধিরাও। সংস্থার সদস্য রঞ্জিত শূর বলেন, “তারিনার বাপের বাড়ির লোকেদের সঙ্গে আমরাও কথা বলেছি। তাঁরা কোনও ভাবেই এই বিয়ে মেনে নিতে রাজি নন। ওই দম্পতি যাতে নির্বিঘ্নে জীবন কাটাতে পারে, তা সুনিশ্চিত করতে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করছি।”
মিঠুনের সঙ্গে বিয়েটা কেন মেনে নিচ্ছে না তারিনার পরিবার? তারিনার বাবা ইসরায়েল মল্লিকের দাবি, “১৯ জুলাই আমার বাড়ির কাছ থেকে মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে যায় মিঠুন। এ নিয়ে অশোকনগর থানায় অভিযোগ করি। পরে টের পাই বড় মেয়ের বিয়ের জন্য কেনা কয়েক লক্ষ টাকার গয়না, নগদ টাকা নিয়ে পালিয়েছে ওরা।” চুরি সংক্রান্ত এই অভিযোগ অবশ্য পুলিশে জানাননি ওঁরা। মিঠুন-তারিনা দাবি করছেন, ‘‘এ সবই বানানো গল্প। এমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি।” ইসরায়েলের দাবি, মেয়ে কোথায় রয়েছে জানতেই মিঠুনকে ফোন করা হয়েছিল। তাকে কোনও হুমকি দেওয়া হয়নি।
তারিনা নিজে কী বলছেন? তাঁর বক্তব্য, “বাবা বলছে, মিঠুন আমাকে অপহরণ করেছে। আমি স্বেচ্ছায় ওর সঙ্গে এসেছি। আমি ওর সঙ্গেই থাকতে চাই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.