মাম্পি-খুনের অভিঘাতে স্তব্ধ কড়কড়িয়া
ছোট মেয়েকে ডাকতেন ‘সোনা’ বলে। বাবার দৈনন্দিন যা কিছু প্রয়োজন, তার সবই খেয়াল রাখত মেয়েও। নদিয়ার নাকাশিপাড়ার কড়কড়িয়া গ্রামের ঘোষ পরিবারের সকলেই জানতেন শ্মশান ঘোষ ও তাঁর ছোট মেয়ে মাম্পির সেই সম্পর্কের কথা। তাই তাঁরা মানতে পারছেন না, সেই মাম্পিকেই তার বাবা এই ভাবে কুপিয়ে খুন করতে পারেন। এমনকী, দাদা বলরামও ভালবাসত মাম্পিকে। নয়নের মণি ছিল মা ছায়া ঘোষেরও। ছায়াদেবীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার তাঁকে আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁকে ১৪ দিনের জেল হেফাজত দিয়েছেন।
মাম্পি
অথচ, সোমবার সকালে সেই তিন জনেই প্রকাশ্য রাস্তায় কুপিয়ে খুন করেছে তাদের সেই আদরের মাম্পিকে। গ্রামের মানুষ তো দূরের কথা, ঘোষ পরিবারের আত্মীয়েরাও তাই এখনও সে কথা বিশ্বাস করতে পারছেন না। তাঁরা যেন কিছুটা ঘোরের মধ্যেই রয়েছেন। মাম্পির পিসতুতো বৌদি পুতুল ঘোষ বলেন, “সঞ্জয়কে বিয়ে করে পালানোর পরে মাম্পিকে উদ্ধার করা হয়। তখন সে প্রথম সাত দিন ছিল আমাদের বাড়িতে। সেই সময়ে সে ছিল একেবারে অন্য রকম। সঞ্জয়ের নাম মুখে আনত না। এমনকী, আমরা বললেও রেগে যেত। কিন্তু ও যে মনে মনে সঞ্জয়কে বরণ করে নিয়েছে, তা বুঝতেই দিত না।” পুতুলদেবী জানান, সেই সময়ে শ্মশানবাবুও খানিকটা নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন। তখন বাড়িতে আবার আস্তে আস্তে পুরনো আবহাওয়াও ফিরে এসেছিল। তিনি বলেন, “বাপ-মেয়ের যে সম্পর্ক আমরা ছোটবেলা থেকেই দেখেছি, তাই যেন ফিরে এসেছিল। এখন তাই এই ঘটনা আর বিশ্বাস করা যাচ্ছে না।”
আদালতের পথে মাম্পির মা ছায়া ঘোষ।
গ্রামের মানুষও হতবাক। কাদোয়া থেকে যে রাস্তা চলে গিয়েছে কড়কড়িয়া গ্রামের দিকে, তার মুখেই বসেছিলেন কয়েকজন গ্রাম বাসিন্দা। তাঁরা এ প্রসঙ্গে মুখই খুলতে চাইলেন না। গ্রামের যত ভিতরের দিকে যাওয়া গিয়েছে, ততই যেন চাপা আতঙ্ক আর শোকের ছায়া বোঝা গিয়েছে পরিষ্কার। অপরিচিত ব্যক্তিকে দেখে গ্রামের মানুষ সরে গিয়েছেন রাস্তা থেকে, মহিলারা ধরে ঢুকে গিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত গ্রামের একটি কালী মন্দিরের সামনে বসে থাকা উত্তম সরকার বললেন, “বাবা মেয়েকে কুপিয়ে কুপিয়ে খুন করছে, মা পিছন থেকে খুন করতে বলছে, এ কথা কেউ বিশ্বাস করবে? অথচ সেটাই ঘটে গেল প্রকাশ্যে।” এই ঘটনার অভিঘাতেই চুপ করে গিয়েছে গ্রাম। উত্তমবাবু বলেন, “শ্মশানবাবুকে যে সবাই খুব ভয় পাচ্ছেন ব্যাপারটা এমন নয়। কিন্তু যে ঘটনা তিনি ঘটিয়েছেন, তাতে সকলেই স্তম্ভিত। সেই রেশটা গ্রাম থেকে যাচ্ছে না।” একই সঙ্গে উত্তমবাবুর কথায়, “একবার এমন একটা কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলার পরে শ্মশানাবাবুরা এখন কী মানসিক অবস্থায় রয়েছেন, তা নিয়েও আমরা উদ্বিগ্ন। যাঁরা মেয়েকে খুন করেছে, তাঁরা তাঁদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে, তাঁকেও আক্রমণ করতে পারেন।”
গ্রামে জনশূন্য শ্মশানবাবুর বাড়ি।
জেলা পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমণ মিশ্র বলেন, “এখনও পর্যন্ত মা ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। তল্লাশি চলছে।”
শ্মশানবাবুর বাড়ি সুনসান। এক দিকে পড়ে রয়েছে বাসনকোষণ, আর এক দিকে কিছুটা কাটা বিচুলি। বোঝা যায়, তা কাটতে কাটতেই কেউ উঠে গিয়েছেন। বাড়ির পাশেই বাঁধা তাঁদের একটি গরু। গ্রামের মানুষই সেই গরুকে খাবার দিয়েছে এই দিন।
সঞ্জয়ের বাড়ি সকাল থেকেই ফাঁকা। চলে গিয়েছেন সঞ্জয়ের বাবা গৌরচন্দ্র দে-ও। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, সঞ্জয় সেই দিন বাড়ি না থাকায় খুব বেঁচে গিয়েছেন। না হলে তাঁকেও আক্রমণ করতে পারত ঘোষ পরিবার।
ধর্মদার যে স্কুলে পড়ত মাম্পি, সেখানে এই দিন প্রার্থনার পরেই স্মরণ সভা করে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.