ছেলে-বৌমাকে নিয়ে থাকার নির্দেশ
জেলে পাঠাতে পারতাম, বাবা-মাকে ভর্ৎসনা কোর্টের
ম্পত্তি-বিবাদ বা সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের মামলায় এত দিন প্রায় সব ক্ষেত্রেই ছেলে-বৌমাকে তিরস্কার করেছে আদালত। এ বার উচ্চ আদালতের তর্জনী ঘুরে গেল মা-বাবার দিকেই। নিছক ভর্ৎসনাই নয়। নিজের সন্তানকে বাড়ি থেকে বার করে দেওয়ার জন্য মিথ্যা অভিযোগ আনায় বাবা-মাকে যে জেলেও পাঠানো যেত, ভরা আদালতে তা জানিয়ে দেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি। শেষ পর্যন্ত আদালত নির্দেশ দেয়, বয়োজ্যেষ্ঠ হিসেবে মা-বাবাকেই সব মানিয়ে নিতে হবে এবং ঘর করতে হবে ছেলে-বৌমাকে নিয়ে।
বীরেন্দ্র ও প্রতিভা বালা নামে বেলঘরিয়ার নন্দননগর কলোনির এক বৃদ্ধ দম্পতি হাইকোর্টে অভিযোগ জানান, ছেলে ও ছেলের বৌ তাঁদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। আদালত তাঁদের বাড়িতে ফেরার ব্যবস্থা এবং সন্তানের অন্যায় আচরণের বিহিত করুক। ডিভিশন বেঞ্চ এক আইনজীবীকে স্পেশ্যাল অফিসার হিসেবে নিয়োগ করে এবং পুলিশের সাহায্যে বীরেন্দ্রবাবুর ছেলে বিশ্বজিৎ ও ছেলের বৌ রিমা বালাকে ঘর থেকে বার করে দিয়ে মা-বাবাকে বাড়িতে ফেরানোর ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশ অনুযায়ী ছেলে ও ছেলের বৌ এবং তাঁদের এক বছরের শিশুকন্যাকে আসবাবপত্র-সহ রাস্তায় বার করে দেওয়া হয়।
কিন্তু ইতিমধ্যে হাইকোর্ট জানতে পারে, ছেলে-বৌমা মোটেই বাবা-মাকে বাড়ি থেকে বার করে দেননি। বরং ছেলে-বৌমাকে বাড়ি থেকে তাড়ানোর চক্রান্ত করেছিলেন মা-বাবাই। তাই নিজেরাই ঘরে তালা লাগিয়ে অন্যত্র চলে গিয়ে সেখান থেকে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সে-দিন বিকেলেই হাইকোর্ট পুনরায় ছেলেকে ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় আর বাবা-মাকে মঙ্গলবার হাইকোর্টে হাজির হতে বলে।
এই ধরনের অনেক মামলায় ছেলে ও ছেলের বৌয়ের বিরুদ্ধে পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ছেলে ও বৌমাকে তলব করে তিরস্কার ও সতর্ক করে দিয়েছে আদালত। আবার বাবা-মায়ের ক্ষোভ নিরসনে রোজ সকালে তাঁদের প্রণাম করার জন্য পুত্র-পুত্রবধূকে নির্দেশও দিয়েছেন বিচারপতি। কিন্তু এই মামলায় বাবা-মায়ের অভিসন্ধির কথা জানতে পেরে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে আদালত। বিচারপতি কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্ত এ দিন বীরেন্দ্রবাবু ও মা প্রতিভাদেবীকে ভর্ৎসনা করে বলেন, “আপনাদের জেলে পাঠিয়ে দিতে পারতাম। যান, ছেলে-বৌমাকে নিয়ে শান্তিতে থাকার চেষ্টা করুন।” বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে আদালতের পরামর্শ, ছেলে-বৌমাকে মানিয়ে নিতে হয়। আপনারা বড়। একসঙ্গে থাকার চেষ্টা করতে হবে আপনাদেরই। ছেলে-বৌমার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করুন। দেখবেন, যখন অশক্ত হয়ে পড়বেন, তখন তাঁরাই পাশে থাকবেন।
শুধু তিরস্কার বা পরামর্শ নয়। বিচারপতি কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্ত ও বিচারপতি প্রসেনজিৎ মণ্ডলের ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন বাবা-মা ও ছেলেকে কিছু নির্দেশও দিয়েছে। পড়শিদের সঙ্গে কথা বলে উচ্চ আদালতের প্রতিনিধিরা জানতে পারেন, কিছু আত্মীয়ের উস্কানিতেই ছেলে-বৌমাকে আর সহ্য করতে পারছিলেন না বাবা-মা। মেয়ে-জামাইয়ের সঙ্গে ঘোঁট পাকিয়েই তাঁরা ছেলেকে বাড়ি থেকে তাড়াতে উঠেপড়ে লেগেছিলেন।
ডিভিশন বেঞ্চ মনে করে, বাবা-মা সহজেই ছেলে-বৌমার সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে পারেন। কিন্তু সমস্যা তৈরি করছে তৃতীয় পক্ষ। তারাই নানা ভাবে উস্কানি দিচ্ছে। এ দিন ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, বীরেন্দ্রবাবুর মেয়ে, জামাই বা মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাঁদের বাড়িতে আসতে পারেন। কিন্তু দু’ঘণ্টার বেশি থাকতে পারবেন না। কোনও মতেই রাত কাটানো যাবে না। ছেলের শ্বশুরবাড়ির লোকেদের ক্ষেত্রেও একই নির্দেশ। এখন থেকে রান্নাঘর ও চানঘরের তালার দু’টি চাবি থাকবে দু’পক্ষের কাছে। যাতে কাউকেই অসুবিধায় পড়তে না-হয়।

মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে
রান্নার গ্যাস, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি ও খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থের মামলা হয়েছে। শুনানি হওয়ার কথা শুক্রবার।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.