|
|
|
|
বাস ধর্মঘট |
দুর্ভোগের দ্বিতীয় দিনে সঙ্গী ভাড়ার ‘জুলুম’ |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
ভোগান্তির চেনা ছবিটা বহাল রইল দ্বিতীয় দিনেও। বেসরকারি বাস না মেলায় মঙ্গলবারও স্কুল-কলেজ-অফিসে পৌঁছতে হিমশিম খেলেন শহর ও লাগোয়া এলাকার মানুষ। অভিযোগ, রাজ্য পরিবহণ দফতর সোমবারের তুলনায় সরকারি বাস কিছু বেশি চালালেও প্রয়োজনের তুলনায় তা ছিল সামান্যই।
পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র অবশ্য এই অভিযোগ মানতে চাননি। এ দিন সকালে গড়িয়া, নোনাপুকুর, পার্ক সার্কাস প্রভৃতি সরকারি ডিপোয় যান তিনি। সিএসটিসি-র কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন। এ সবের মধ্যেই গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো আগামীকাল, বৃহস্পতিবার থেকে মিনিবাস ও লাক্সারি ট্যাক্সির মালিকদের দুই সংগঠন লাগাতার ধর্মঘট ডেকেছে। আগেই বৃহস্পতিবার থেকে ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট ডেকে রেখেছে ট্যাক্সি-মালিকদের সংগঠন। |
উল্টোডাঙার মোড়ে বাস ধরার মরিয়া চেষ্টা। ছবি: সুমন বল্লভ |
এ দিনও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কলকাতা ও শহরতলির বিভিন্ন বাসস্টপে কাতারে কাতারে মানুষকে হন্যে হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। যে ক’টি সরকারি বাস বা মিনিবাস বাদুড়ঝোলা হয়ে বিভিন্ন স্টপে দাঁড়িয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষ তাতে উঠতে পারেননি।
সন্ধ্যা ৭টা থেকে বি বা দী বাগে দাঁড়িয়েছিলেন তারকেশ্বরের বাসিন্দা প্রভু গোপ। রাত ৮টা পর্যন্ত পাঁচটি সরকারি বাসের একটাতেও উঠতে পারেননি। বাধ্য হয়ে হাঁটা শুরু করেন হাওড়া স্টেশনের দিকে। তাঁর মন্তব্য, “এর পরে তো ট্রেনও পাব না।” লেনিন সরণি, এস এন ব্যানার্জি রোড, এক্সাইড মোড়, রবীন্দ্রসদন, শ্যামবাজার সর্বত্রই এক চিত্র। কেউ ভিড়ে ঠাসা বাসে উঠতে পারছেন না, কেউ বা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে গন্তব্যের দিকে হাঁটতে শুরু করেছেন। আবার কেউ মুখ বুজে বেশি ভাড়া দিতে রাজি হয়ে উঠে বসেছেন শেয়ার ট্যাক্সি বা অটোয়। এমনকী ধর্মতলা-পার্ক সার্কাস, ধর্মতলা-বেলগাছিয়া রুটের ট্রামেও রাত দশটাতেও ছিল উপচে পড়া ভিড়।
এ দিন আর একটি অভিযোগও করেছেন নিত্যযাত্রীরা। তাঁরা জানান, ধর্মঘটের কারণে অসহায় অবস্থার সুযোগ নিয়ে বেশি ভাড়া আদায় করছে কয়েকটি রুটের মিনিবাস। একই কাজ করছেন এক শ্রেণির অটো এবং রিকশাচালকও। অভিযোগ, শোভাবাজার-উল্টোডাঙা, উল্টোডাঙা-সল্টলেক বা উল্টোডাঙা-বাগুইআটি রুটের অটো ভাড়া সোমবারের মতো এ দিনও লাগামছাড়া হয়ে যায়। বেলেঘাটা, ফুলবাগান, কাঁকুড়গাছি ও সল্টলেকের বিভিন্ন রুটেও আদায় হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।
‘মিনিবাস অপারেটর্স কো-অর্ডিনেশন কমিটি’র সম্পাদক অবশেষ দাঁ বলেন, “কোনও রুটের মিনিবাসে বেশি ভাড়া নেওয়া হয়ে থাকলে তা বেআইনি। সরকার ভাড়া ঠিক করে না দেওয়া পর্যন্ত পুরনো ভাড়াই নিতে হবে। না পোষালে বাসমালিক পরিষেবা বন্ধ রাখতে পারেন। যাত্রীরা অভিযোগ করলে সংগঠনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” কয়েকটি রুটের অটো ইউনিয়নের নেতাদের বক্তব্য, বেশি ভাড়া নিয়েছেন এক শ্রেণির চালক, সকলে নেননি।
|
বাস নেই। ট্রেনেও বাদুড়ঝোলা।
প্ল্যাটফর্মেও তিলধারণের ঠাঁই নেই।
বিরাটি স্টেশন। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক |
পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র এ দিন বলেন, “সরকার সব দিকে নজর রাখছে। প্রয়োজনে পুলিশ দিয়ে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা বাস সরিয়ে সরকার চালাবে।”
এর পাশাপাশি, নিত্যযাত্রীরা অভিযোগ করেন, উল্টোডাঙা থেকে বাগুইআটির অটোভাড়া দশ টাকা থেকে এক লাফে ২০ টাকা হয়ে যায় সোমবার রাতেই। একটু বেশি রাতে কোনও কোনও চালক ৩০ টাকাও আদায় করেছেন বলে অভিযোগ। কিন্তু বেশি ভাড়া দিয়েও পর্যাপ্ত অটো মেলেনি। কোনও অটো স্ট্যান্ডে এলেই লোকে তাতে ওঠার জন্য প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ছেন। রাস্তায় বাস কার্যত না থাকায় অটোতে চার জন বসবেন না পাঁচ জন, সেই প্রশ্ন ওঠেইনি।
শোভাবাজার থেকে উল্টোডাঙা রুটে আবার অটোর ভাড়া চালকেরা নিজেরাই ঠিক করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ। শোভাবাজার থেকে উল্টোডাঙা পর্যন্ত ভাড়া ৮ টাকা। অভিযোগ, চালকেরা যাত্রীদের জানিয়ে দেন, যেখানেই নামা হোক না কেন দশ টাকা দিতে হবে। অর্থাৎ শোভাবাজার থেকে পরের স্টপেজ হাতিবাগান পর্যন্তও ১০ টাকা ভাড়া দিতে হয়েছে যাত্রীদের। যাত্রীদেরও অবশ্য কার্যত অন্য উপায় ছিল না।
বাস না মেলায় সমস্যায় পড়েন সল্টলেকের অফিসপাড়া কিংবা পাঁচ নম্বর সেক্টরের নিত্যযাত্রীরাও। একাধিক বেসরকারি রুটে বাস বন্ধ থাকায় যাত্রী-চাপ বহন করতে হয় অটো ও ট্যাক্সিচালকদের। অভিযোগ, সুযোগ বুঝে দাঁও মেরেছেন তাঁরাও। সোদপুর থেকে কর্মসূত্রে রোজ সল্টলেকের করুণাময়ীতে যান বাবলু বসাক। এ দিন তিনি বলেন, “অটোতে চার জনের বসার নিয়ম হওয়ায় চালকেরা ১ টাকা করে ভাড়া বাড়িয়েছিল। কিন্তু গতকাল থেকেই গড়ে ২ থেকে ৪ টাকা বাড়িয়েছেন চালকেরা।”
বাস ধর্মঘটের শহরে অবশ্য এ দিনও অধিকাংশের ভরসা ছিল মেট্রো। মেট্রো রেল সূত্রে খবর, এ দিন সন্ধ্যা ছ’টাতেই যাত্রীসংখ্যা সাড়ে চার লক্ষ ছাড়িয়েছে, যা অন্যান্য দিনের পরিসংখ্যানের তুলনায় প্রায় ১০-১৫ শতাংশ বেশি। |
|
|
|
|
|