অনিচ্ছুকদের জমি ফেরত দেওয়া এবং ভূমিহারাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দ্রুত কাওয়াখালি উপনগরী প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে বলে জানালেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। সোমবার শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য, বিধায়ক শঙ্কর মালাকার-সহ এসজেডিএ’র অন্য সদস্য এবং আধিকারিকদের একাংশ, ভূমিহারাদের প্রতিনিধিদের নিয়ে এ দিন বৈঠক করেন তিনি। তার পরেই এ কথা জানিয়েছেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী বলেন, “১২ জুন ভূমিহারাদের নিয়ে শেষ বৈঠক হয়েছিল। তখনই জানানো হয়েছিল তাঁদের অধিকাংশ সমস্যা মিটিয়ে ৩ মাসের মধ্যে ‘রিভিউ মিটিং’ হবে। সেই মতো এ দিন বৈঠক ডাকা হয়েছিল। অনিচ্ছুক জমির মালিকদের জমি ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা মামলা করেছেন। এসজেডিএ’র আবেদন মেনে তাদের ওই সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। প্রকল্পের জায়গায় তাদের জমি ‘প্লট’ করে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। পুনর্বাসনের যে সব বিষয় ছিল সে সব ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।” বছর ছয়েক আগে বাম জমানায় শিলিগুড়ির উপকন্ঠে কাওয়াখালি এলাকায় ৩০২ একর জায়গায় উপনগরী প্রকল্প গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয় এসজেডিএ। শিলিগুড়ি এবং জলপাইগুড়ি জেলার অধীনে থাকা ওই প্রকল্পের জন্য চিহ্নিত জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হলে অনিচ্ছুক জমির মলিকেরা বাধা দেন। তা নিয়ে আন্দোলন দানা বাঁধে। অনিচ্ছুক জমির মালিকদের পাশে দাঁড়ায় কংগ্রেস তৃণমূল উভয়পক্ষই। তৃণমূলের পশ্চিমবঙ্গ কৃষি জমি জীবন ও জীবিকা রক্ষা কমিটির ছাতার তলায় ভূমি হারারা আন্দোলনও গড়ে তোলেন। রাজ্যে ক্ষমতা বদলের পর অনিচ্ছুক জমির মালিকেরা জায়গা ফেরৎ পেতে আশার আলো দেখতে শুরু করে। ভূমিহারাদের অপর অংশ তাঁদের একাধিক সংগঠনের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ প্যাকেজের সমস্ত সুযোগ সুবিধা আদায়ে তৎপর হন। এসজেডিএ’র চেয়ারম্যান রুদ্রবাবু জানান, কাওয়াখালিতে ১ একর জায়গায় শপিং কমপ্লেক্স করবে এসজেডিএ। ৫ একর জায়গার উপরে আর্বান হাট হবে। জমিহারাদের পরিবারের সদস্য এবং ছেলেমেয়েদের স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিক্ষার জন্য ক্ষতিপূরণ প্যাকেজে সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। ৬০৩ জনকে শিক্ষার জন্য, ৭৩ জনকে স্বাস্থ্যের জন্য অনুদান, ৯ জনকে বার্ধক্য ভাতার সুযোগ সুূবিধা দেওয়া হচ্ছে। ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাতায়াতের সুবিধার জন্য তারা একটি স্কুল বাসের ব্যবস্থা করতে আর্জি জানিয়েছেন তা সহানুভুতির সঙ্গে দেখা হবে। ক্ষতিপূরণ প্রকল্পে একটি গ্রন্থাগার করা হবে। তার জন্য ৫০ লক্ষ টাকা দেবে রাজ্য সরকার। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, অনিচ্ছুক জমির মালিকদের একাংশ মামলা করেছেন। জমি ফেরত পেতে মামলা তুলে নিতে হবে বলে জানানো হয়। অপর একটি মামলায় ৪৮ টি পরিবারকে ৬০ শতাংশ টাকা দেওয়ার কথা জানানো হয়েছিল। এসজেডিএ তা মেটাতে ৯৭ লক্ষ টাকা দেবে। জমির মালিক এবং দখলদারদের মধ্যে সমস্যা রয়েছে ৪.৬৫ একর জমি নিয়ে। তাদের বোঝাপড়া করে ক্ষতিপূরণ নিতে বলা হয়েছে। খাস জমির মালিকদেরও চেক নেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময় সীমা দিয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে। তার পরেই প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে। তবে তাদের কেউ পরে যোগাযোগ করলেও ক্ষতিপূরণের টাকা পাবেন। প্রকল্পে সীমানা প্রচার দেওয়ার কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। ফিল্ম সিটি গড়তেও জমি চিহ্নিত করার কাজ চলছে। পোড়াঝাড় ভূমিহারা ওয়েলফেয়ার কমিটির সদস্যদের অভিযোগ, অনেকেই ক্ষতিপূরণ প্যাকেজের প্লট পাননি। পুজোর আগে তা মেটানোর দাবি জানাতে চেয়েছিলেন। বৈঠকে তাদের ডাকা হলেও কোনও কথা বলতে দেওয়া হয়নি। |