উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সদর বারাসতে দুষ্কৃতী-রাজের মোকাবিলায় কোমর বাঁধছে পুলিশ। বিশেষ করে মেয়েদের উপরে হামলা রুখতে তারা এ বার মেয়েদের স্কুলগুলির সাহায্য নিচ্ছে। রবিবার সন্ধ্যায় এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ এবং রাতে এক কলেজছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে। দু’টি ঘটনাতেই অভিযুক্তেরা গ্রেফতার হয়েছে। রাতভর তল্লাশি চালিয়ে চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় আরও ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বারাসত কদম্বগাছি এলাকা থেকে এক মোটরসাইকেল পাচার চক্রের চাঁই-সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
অপরাধমূলক কাজকর্ম, বিশেষ করে রাস্তাঘাটে মেয়েদের উপরে অত্যাচার ঠেকাতে পুলিশ আজ, মঙ্গলবার বারাসতের মেয়েদের সব স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাদের নিয়ে বৈঠক করবে। পুলিশি সূত্রের খবর, রাস্তাঘাটে যাতায়াতের সময় স্কুলছাত্রীদের কোনও সমস্যা হয় কি না, হলে ঠিক কোন কোন এলাকায় সেটা হচ্ছে, প্রধান শিক্ষিকাদের কাছে তা জানতে চাওয়া হবে। তাঁদের বক্তব্যের সূত্র ধরে মোটামুটি দু’ভাবে ব্যবস্থা নিতে চায় পুলিশ। যে-সব রাস্তায় ও মোড়ে ইভটিজারদের উপদ্রব বেশি, সেখানে সাদা পোশাকের পুলিশের টহলদারির ব্যবস্থা করা হবে। কোনও সমস্যা হলে জানানোর জন্য থানা এবং পুলিশকর্তাদের ফোন নম্বর দেওয়া থাকবে ছাত্রীদের কাছে।
উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার সুগত সেন বলেন, “অপরাধের পরে অভিযুক্তদের গ্রেফতার তো করা হবেই। কিন্তু অপ্রীতিকর কোনও ঘটনার আগেই যাতে দুষ্কৃতীদের রুখে দেওয়া যায়, সেই জন্যই এই ধরনের কিছু সামাজিক উদ্যোগের কথা ভাবা হয়েছে।” বারাসতে ধারাবাহিক অপরাধ রুখতে রবিবার বিকেলেই দত্তপুকুরের চারটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় এক হাজার গ্রামবাসীকে নিয়ে মিছিল করেন বারাসতের মহকুমাশাসক সুবীর চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু তার কিছু পরে, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ বাহিরাকালীবাড়ি এলাকার সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রী আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার পথে ধর্ষিত হয়েছে বলে অভিযোগ আসে বারাসত থানায়। ওই ঘটনায় রাতে এলাকারই এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়। তার কিছু পরে, রাত ৮টা নাগাদ হরিতলা মোড়ে দাদা ও দিদিমার সঙ্গে যাওয়ার সময় এক কলেজছাত্রীকে কটূক্তি এবং তাঁর হাত ধরে টানাটানি করে তিন যুবক। ক্ষিপ্ত জনতা তাড়া করে এক জনকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। অন্য দুই দুষ্কৃতী পালিয়ে যায়। দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্যের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীও যে ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন, সেই দৃষ্টান্ত দেখেই অপরাধ রুখতে তাঁদের সঙ্গে নিচ্ছে পুলিশ।
শুধু মেয়েদের উপরে হামলা নয়। চুরি, ছিনতাই-সহ অন্য নানা ধরনের দুষ্কর্মও বাড়ছে বারাসত এলাকায়। গাড়ি ও মোটরবাইক চুরির একটি বড় চক্রের হদিস পেয়ে তাদের কর্মপদ্ধতি দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছে পুলিশও। চুরির পরেই গাড়ি বা মোটরবাইকের নম্বর প্লেট থেকে শুরু করে রং, এমনকী ইঞ্জিন নম্বরও বদলে ফেলছে দুষ্কৃতীরা। এমনই মুন্সিয়ানায় সেটা করা হচ্ছে যে, খোদ মালিকও নিজের গাড়ি বা মোটরবাইকটিকে আর চিনতে পারবেন না। পুরোপুরি ভোল বদলে চুরির গাড়ি ও মোটরবাইক বিক্রি করে দেয় দুষ্কৃতীরা। রবিবার গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বারাসত থেকে এমনই এক চোরাই চক্রের পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। উদ্ধার হয়েছে চারটি মোটরবাইক।
পুলিশ জানায়, নাজমুল আলম নামে কদম্বগাছির এক যুবক মোটরবাইকের নম্বর প্লেট থেকে শুরু করে গাড়ির রং পরিবর্তনের কাজ করত। রবিবার রাতে প্রথমে তাকে ধরার পরে মহম্মদ জিন্নাত নামে মোটরসাইকেল পাচার চক্রের এক চাঁই-সহ চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। |