চোলাই নিয়ে জেরবার বসিরহাট, চলছে প্রচার
চোলাই মদের বিরুদ্ধে প্রচারে নেমেছে বসিরহাট থানার পুলিশ। চোলাই বিক্রির অভিযোগে রবিবারই এক মহিলা-সহ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে তারা। চোলাই বিক্রি কিংবা মজুত করলে তাকে ‘কঠিন শাস্তি’ দেওয়া হবে বলে মাইকে ঘোষণার ব্যবস্থা করেছে বসিরহাট থানা। চোলাই খেলে কী ক্ষতি হতে পারে, তা নিয়েও লিফলেট, পোস্টার-সম্বলিত প্রচার হয়েছে।
বসিরহাটের বিভিন্ন এলাকায় চোলাই বিক্রির রমরমা দীর্ঘ দিন ধরে। শহরের মধ্যে মির্জাপুরে একটি সিনেমা হলের উল্টো দিকে, টাকি রোডের পাশে, শ্মশানঘাটে, মাতৃসদনের পাশে, স্টেশন চত্বর, হাসপাতাল মোড়-সহ আরও বেশ কয়েকটি জায়গায় ব্যাপক হারে চোলাইয়ের কারবার চলছে। মদ খাওয়াকে কেন্দ্র করে ওই সমস্ত জায়গায় মাঝে-মধ্যে গোলমাল বাধছে। আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে। মহিলাদের সঙ্গে মদ্যপেরা অশালীন ব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ।
চোলাই খেয়ে যে ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনায়, তা থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।
অন্যান্য মদ বিক্রির বিষয়টিও সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
কৃষ্ণা মজুমদার
শুধু চোলাই বন্ধ করলে হবে না, সমস্ত রকম মাদক বিক্রির উপরে নিষেধাজ্ঞা জরুরি।
সঙ্গীতা সরকার
মদ-সহ সব মাদক বিক্রি বন্ধ করতে না পারলে মহিলাদের প্রতি কটূক্তি রোখা যাবে না।
পারমিতা দে
চোলাই এবং দেশি-বিদেশি মদ বিক্রির উপরে সরকারি নিয়ন্ত্রণ জরুরি। না হলে দুষ্কৃর্ম বাড়বে।
সুবীর পাল
এ সব নিয়ে বিব্রত বসিরহাট থানার পুলিশ। শুধু গ্রেফতার করে বা চোলাইয়ের ঠেক ভেঙে সমস্যার পূর্ণাঙ্গ সমাধান হবে না বলেই মনে করেন পুলিশ-প্রশাসনের অনেকে। সে জন্য সাধারণ মানুষকেও সচেতন করার দরকার আছে। সে দিকে তাকিয়েই চোলাইয়ের কুফল নিয়ে প্রচারে নেমেছে বসিরহাটের পুলিশ। লিফলেট বিলি হচ্ছে। তাতে চোলাই খেলে কী কী শারীরিক সমস্যা হতে পারে, তার বিবরণ থাকছে। সরকার অনুমোদিত দোকান ছাড়া অন্য কোথাও মদ কিনলে তা জাল হতে পারে বলেও মানুষকে সচেতন করতে চাইছে পুলিশ। জাল মদও শরীরে পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর, সে কথা প্রচারে তুলে আনা হচ্ছে।
প্রচারের পাশাপাশি তল্লাশি এবং অভিযানও নিয়মিত চলবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্তারা। এমনই এক অভিযানে মির্জাপুর ও হুলো থেকে ধরা পড়েছে সুমিত্রা অধিকারী ও নিমাই মণ্ডল নামে দুই চোলাই কারবারি। ধৃতদের কাছ থেকে ৮০ লিটার চোলাই মদ এবং মদ তৈরির কিছু সরঞ্জাম উদ্ধার হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে চোলাই বিক্রি ও তৈরির অভিযোগ আছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এর আগেও একাধিক বার পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে দু’জন। কিন্তু জামিনে মুক্তি পেয়ে ফের তারা এই কারবারে নেমে পড়ে বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। বসিরহাটের আইসি শুভাশিস বণিক বলেন, “অবৈধ ভাবে মদ বিক্রির অভিযোগে ধরা পড়েছে দু’জন। প্রতি রাতেই অভিযান চলছে। খুব শীঘ্রই আরও কয়েক জন ধরা পড়বে।”
বসিরহাটবাসীর একাংশের অবশ্য দাবি, চোলাই বন্ধ করে আসলে দেশি-বিলিতি মদের ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠুক, তেমনটাই চায় পুলিশ-প্রশাসন ও সরকারের একাংশ। গ্রামে গ্রামে অবৈধ ভাবে দেশি-বিলিতি মদ বিক্রি হচ্ছে। এই সব জায়গা থেকে জাল মদ বিক্রির সম্ভাবনাও বেড়েছে। এর থেকে মদের লাইসেন্স বন্ধ করলেই ‘প্রকৃত কাজ’ হবে। শুধু মাত্র চোলাই বন্ধ করে সমাজের কোন উন্নতি সাধন হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নাগরিকদের একটা বড় অংশ। কেবলমাত্র চোলাইয়ের কারবার রুখে সমাজ শোধরানো যাবে না বলেই মনে করেন তাঁরা। পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের অবশ্য বক্তব্য, মদের লাইসেন্স দেওয়া সরকারি সিদ্ধান্ত। তা নিয়ে স্থানীয় স্তরে কোনও পদক্ষেপ করা সম্ভব নয়। তবে চোলাইয়ের ঠেকগুলি যে ভাবে অসামাজিক কাজকর্মের আখড়া হয়ে উঠছে, তা বন্ধ করাও জরুরি। তা ছাড়া, জাল মদ বা চোলাই খেয়ে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ুক বা কারও মৃত্যু ঘটুক, তা-ও নিশ্চয়ই কাম্য নয়। চোলাই মদে বিষক্রিয়ায় মৃত্যুর ঘটনা এ রাজ্যে নতুন নয়। গত বছর দক্ষিণ ২৪ পরগনার সংগ্রামপুরে চোলাই খেয়ে ১৭২ জন মারা গিয়েছিলেন। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কেউ কেউ দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। এই সব পরিবারগুলিও কার্যত পথে বসেছে। এই পরিস্থিতি বন্ধ করা দরকার। সে জন্যই চোলাই বা জাল মদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর পাশাপাশি এ সবের কুফল নিয়েও সাধারণ মানুষকে সচেতন করা জরুরি। পুলিশ-প্রশাসনের একাংশের এই যুক্তি অবশ্য নাগরিকদের অনেকেই যথার্থ বলে মনে করেন। তাঁদের বক্তব্য, সমাজ থেকে রাতারাতি মদ যেহেতু বন্ধ করা যাবে না, সে ক্ষেত্রে মদ্যপানের সঙ্গে জড়িত অসামাজিক কাজকর্ম অন্তত বন্ধ হোক। সেই সঙ্গে মানুষ যেন অসুস্থ হয়ে না পড়েন, অকালে মৃত্যু না ঘটে, তা-ও দেখা জরুরি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.