দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় • কলকাতা |
স্ত্রী, কোচ এবং বাইবেল। এই তিনের জোরে ফের ঝলমলে ময়দানের তোতা কাহিনির এপিসোড। লেখক হোসে রামিরেজ ব্যারেটো। ‘জুটিতে লুটি’-র ময়দানে এখন টোলগে-ওডাফা, চিডি-পেন, র্যান্টি-হার্নান্ডেজদের সরব উপস্থিতি। রবিবার কল্যাণীতে সুব্রত ভট্টাচার্যের চিরাগ টালিগঞ্জ অগ্রগামীর বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক ফের প্রচারের কক্ষপথে নিয়ে এসেছে ব্যারেটোকে। বড় দলের জার্সিতে না খেলেও। হ্যাটট্রিকের পরের সকালে বাইপাসের ধারের বাড়িতে বসে ভবানীপুরের ব্রাজিলীয় স্ট্রাইকার বলছিলেন, “আস্তে আস্তে আবার পুরনো ফর্মে খেলতে পারছি কিন্তু আমাদের টিমের কোচ রবসনের জন্য। ওই আসল লোক। আর বাড়িতে চাঙ্গা রয়েছি স্ত্রী ভেরোনিকার সেবা আর নিয়মিত বাইবেল পড়ার গুণে।”
ব্যারেটোর ‘আসল লোক’ রবসন আবার বললেন, “ব্যারেটোর বয়সটার কথা মাথায় রেখে ওকে কলকাতা লিগ শুরুর আগে সপ্তাহে তিন দিন ‘স্পেশ্যাল প্র্যাক্টিস’ করিয়েছি। তাতেই ব্যারেটো আগের মেজাজে খেলছে।”
কেমন সেই বিশেষ অনুশীলন? সপ্তাহে এক দিন জিম। মূলত ‘ওয়েট ট্রেনিং’। পায়ের পেশি শক্তিশালী করতে ৪৫ কেজি এবং শরীরের উপরের অংশের শক্তি বাড়াতে ২০ কেজি ওজন তোলা। শারীরিক সক্ষমতা বাড়াতে এক দিন সল্টলেকের রাস্তায় কিংবা রেস কোর্সে ৮-৯ কিলোমিটার ঘড়ি ধরে দৌড়। শরীরের নমনীয়তা বাড়াতে কয়েকটা ধাপে সাত-আট মিটারের শর্ট স্প্রিন্ট। ট্রেড মিলে হাঁটা।
সুব্রত ভট্টাচার্যের কোচিংয়েই সবুজ-মেরুনে প্রায় ১৩ বছর আগে ব্যারেটোর আত্মপ্রকাশ। এক যুগেরও বেশি পরে সেই সুব্রতর দলের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক। ময়দানে সুব্রত-ব্যারেটো সম্পর্ক নিয়ে হাজার গল্প। এই হ্যাটট্রিক কি সুব্রতকে জবাব? যে ভাবে পায়ের একটা ছোট টোকায় বা ফ্লিক-হেডে বিপক্ষের জালে বল জড়িয়ে দেন এখনও, সে ভাবে মুচকি হেসে ব্যারেটো বললেন, “এই হ্যাটট্রিক আমাদের দলের তিন পয়েন্ট পাওয়ার জন্য। মনে রাখবেন, আমার ব্যারেটো হওয়ার পিছনে কিন্তু সুব্রতর অবদানও রয়েছে।”
ব্যারেটোর এখনও গোলের খিদে, ফর্ম দেখে উচ্ছ্বসিত ময়দানের বড় দলের তারকা ফুটবলাররা। একদা সতীর্থ চিডি বললেন, “আমি অবাক নই। জানতাম ও ভবানীপুরেও সাড়া ফেলবে।” ব্যারেটোর ‘অ্যান্টিডোট’ খ্যাত ওপারা লাল-হলুদ তাঁবু ছেড়ে বেরনোর সময় বলে গেলেন, “নিজের একটা দল থাকলে এখনই ব্যারেটোকে সেই দলে নিতাম। এখনও ওর বিরুদ্ধে মাঠে নামলে বিশেষ অঙ্ক কষতে হবে।” আর দেশের এক নম্বর গোলকিপার সুব্রত পালের কথায়, “ব্যারেটোর মানটাই আলাদা। যার বিনাশ নেই। ও কিন্তু আরও চমক দেবে।”
গঙ্গাপারের তাঁবু ছেড়ে আসা ‘সবুজ তোতা’ ভবানীপুরে কোনও চমক নয়, ধারাবাহিক ভাবেই এগোচ্ছেন দলকে আই লিগের দ্বিতীয় ডিভিশনে তোলার লক্ষ্যে। “কলকাতা লিগে ভবানীপুরকে ভাল জায়গায় রেখে আই লিগের দ্বিতীয় ডিভিশনো তোলাই আমার চূড়ান্ত লক্ষ্য,” বলে দিচ্ছেন ব্যারেটো। |