রেলপথ তৈরির জন্য তাঁরা জমি দিতে চান। কিন্তু ‘ন্যায্য’ দামে।
গোঘাটের অমরপুরের আন্দোলনকারী চাষিরা এমনটাই জানাতে চেয়েছিলেন রেলমন্ত্রীকে। অভিযোগ, স্থানীয় তৃণমূল নেতারা চাষিদের ‘সিপিএম’ তকমা দিয়ে মন্ত্রীর কাছে যেতে বাধা দেন।
তাঁদের আন্দোলনের ফলেই অমরপুরে আটকে রয়েছে তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুর রেলপথ নির্মাণ প্রক্রিয়া। এই চাষিদের কথায়, “আমরা জমি দিতে মোটেই অনিচ্ছুক নই। কিন্তু পাশের কামারপুকুর মৌজার সঙ্গে অমরপুরের জমির মূল্যের সামঞ্জস্য রাখা হোক। কিন্তু তৃণমূল নেতারা মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে দেননি।” স্থানীয় ‘গ্রাম বাঁচাও কমিটি’র সম্পাদক ফটিক কাইতি বলেন, “জমি-জট কাটাতে রেলমন্ত্রীর কাছে যেতে চেয়েছিলেন অনেকে। বাধা আসায় তাঁরা ভয় পান। আমরা আর এরপর প্রশাসনকে কিছু জানাব না। প্রশাসন কী ভাবছে আমাদের বলবে।”
প্রস্তাবিত তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুর রেলপথের দৈর্ঘ্য ৮২ কিলোমিটার। তারকেশ্বর থেকে আরামবাগ পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার রাস্তায় ট্রেন চলছে। অন্য দিকে, বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর থেকে গোকুলনগর পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার রাস্তাতেও রেল চলাচল করছে। মাঝে ৪০ কিলোমিটারের মধ্যে কোথাও রেলপথ নির্মাণ হয়ে গিয়েছে। কোথাও জমি অধিগ্রহণ, রেলপথ তৈরির কাজ চলছে। গোঘাটের কামারপুকুর মৌজা পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। শুধু অমরপুর মৌজায় রেলপথের জন্য চিহ্নিত ১৩.১০০০ একর জমি এখনও অধিগ্রহণ হয়নি বলে পূর্ব রেল এবং জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। কেন না, ওই এলাকার চাষিরা জমির ‘ন্যায্য’ মূল্যের দাবিতে অনড়।
গত ৪ জুন আনুষ্ঠানিক আরামবাগে রেলের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “অমরপুরের জমি-জট কাটাতে চাষিদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।” সেই আলোচনা জেলা প্রশাসনের তরফে এ পর্যন্ত একবারই হয়েছে। অচলাবস্থা কাটেনি। চাষিরা কাঠাপিছু ন্যূনতম ৭৫ হাজার টাকার দাবি থেকে সরেননি। গত ১ অগস্ট গোঘাট-২ ব্লকের প্রেক্ষাগৃহে অমরপুরের চাষিদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন জেলার বিশেষ ভূমি অধিগ্রহণ আধিকারিক অঘোর রায়-সহ জেলা এবং ব্লকের আধিকারিকেরা। ২০১০-এর শুনানিতে জমির মূল্য ধার্য হয়েছিল কাঠাপিছু ১৪,৬৫০ হাজার টাকা। ১ অগস্টের আলোচনার পর কাঠাপিছু আরও দু’হাজার টাকা বেশি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন প্রশাসনের কর্তারা। কিন্তু চাষিরা তা মানতে চাননি।
চাষিরা প্রশাসনের কর্তাদের নথিপত্র দিয়ে দেখান, ২০১০-এ অমরপুর মৌজায় এক কাঠা ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। তা ছাড়া, মাত্র ২ কিলোমিটারের মধ্যে কামারপুকুর মৌজায় রেল কাঠা-পিছু ৯৬ হাজার টাকায় জমি নিয়েছে। অমরপুর মৌজার প্রায় ১৮০ জন চাষির জমি রয়েছে রেলের প্রস্তাবিত পথে। অধিকাংশ চাষিরই দু’কাঠা থেকে এক বিঘা জমি রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই তিন ফসলি জমি। প্রসঙ্গত, অমরপুরের চাষিরা জমির ‘ন্যায্য দামের’ দাবিতে ২০১০-এর ২০ জুন ‘রেল চালাও, গ্রাম বাঁচাও কমিটি’ গঠন করেন।
রবিবার আরামবাগে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী মুকুল রায়। বিকেলে রেলমন্ত্রী আরামবাগ বয়েজ স্কুলের মাঠে দলের সভা সেরে বিকেল ৫টা নাগাদ আরামবাগ রেলস্টেশনে বিদ্যুৎচালিত রেলের উদ্বোধন করেন। সে সময়ে জমির উপযুক্ত মূল্যের দাবি নিয়ে রেলমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন অমরপুর গ্রামের আন্দোলনকারী চাষিরা। কিন্তু সাক্ষাৎ মেলেনি। এ বিষয়ে আরামবাগের তৃণমূল বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরা পরে বলেন, “চাষিদের দলের কেউ বাধা দিয়েছেন কিনা খোঁজ নিয়ে দেখব। তবে চাষিরা মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার বিষয়টি আগে জানালে সে ভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হত।” |