দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী, দুই বোনের উদ্দেশে ‘কটূক্তি’ সহ্য করতে না পেরে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন যুবক। সেই ‘অপরাধে’ বাড়ির কাছেই রাস্তায় ফেলে তাঁকে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ উঠল কয়েক জন মদ্যপ যুবকের বিরুদ্ধে। দাদাকে বাঁচানোর জন্য দুই বোন বাড়িতে গিয়ে বাবাকে খবর দেয়। বাবা ঘটনাস্থলে এলে তাঁকেও রেয়াত করা হয়নি। বেধড়ক মারধর করে তাঁকে নর্দমায় ফেলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
রবিবার রাতে চন্দননগরের জেলেপাড়া এলাকার ঘটনা। গুরুতর জখম অবস্থায় পাশের ছুতোরপাড়ার বাসিন্দা কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায় নামে ওই যুবক এবং তাঁর বাবা অরূপবাবুকে চন্দননগর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, অরূপবাবুর ডান পায়ে গভীর ক্ষত হয়েছে। বুকে-পেটে চোট লাগে। কুন্তলের মুখ ফেটে গিয়েছে। তাঁর চোয়ালে তিনটি সেলাই পড়ে। ওই রাতেই তাঁদের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ জেলেপাড়ার বাসিন্দা মৃত্যুঞ্জয় বাগ, শ্যামল সিংহ, অভিজিৎ রায় এবং সাগর নিয়োগী নামে চার জনকে গ্রেফতার করে বলে জানিয়েছেন এসডিপিও (চন্দননগর) সৈকত ঘোষ। ধৃতদের সোমবার চন্দননগর আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাদের পাঁচ দিন জেল হাজতের নির্দেশ দেন। অভিযোগ অস্বীকার করে ধৃত অভিজিতের দাবি, তাঁদের ফাঁসানো হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি কর্মী অরূপবাবুর দুই যমজ মেয়ে চন্দননগরের বারাসতের দশভূজাতলায় টিউশন পড়তে যায়। অরূপবাবু প্রতিদিন সন্ধ্যায় নিজের মোটরবাইকে করে তাদের পড়তে দিয়ে আসেন। ফেরার সময়ে দুই বোন এক সঙ্গে ফেরে জেলেপাড়ার ভিতর দিয়ে। তখন অবশ্য অরূপবাবু মেয়েদের আনতে যান না। রবিবার পড়া শেষ হতে দেরি হবে জানতে পেরে অরূপবাবু ছেলে কুন্তলকে মেয়েদের আনতে পাঠান। রাত পৌনে ১০টা নাগাদ কুন্তল দুই বোনকে নিয়ে ফিরছিলেন। জেলেপাড়ার রাস্তায় বিদ্যুতের খুঁটিতে সুতো বেঁধে বিশ্বকর্মা পুজোর জন্য মাঞ্জা দিচ্ছিলেন কয়েক জন যুবক। অভিযোগ, তাঁদের মধ্যে থেকে কয়েক জন কুন্তলের দুই বোনের উদ্দেশে ‘কটূক্তি’ করে। প্রতিবাদ জানানোয় রাস্তায় ফেলে ঘুষি-লাথি মারা হতে থাকে কুন্তলকে। রাস্তাটি সেই সময়ে প্রায় নির্জন ছিল। দুই বোন ছুটে বাড়িতে গিয়ে অরূপবাবুকে ঘটনা কথা জানান। অরূপবাবু এলে ওই যুবকেরা তাঁকেও রেয়াত করেনি। শেষমেশ অবশ্য অরূপবাবুদের চিৎকারে স্থানীয় লোকজন ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। তা দেখে হামলাকারীরা পালায়।
অরূপবাবু বলেন, “দীর্ঘ দিন ধরেই মেয়েরা টিউশন পড়ে জেলেপাড়া দিয়ে ফেরে। আগে কখনও এমন ঘটনা ঘটেনি। বাড়ির কাছেই যে এ ভাবে আমাদের আক্রান্ত হতে হবে ভাবতে পারছি না। মনে হয় ওই যুবকেরা বেশি নেশা করে ফেলেছিল।” কুন্তল বলেন, “তখন রাস্তাটা প্রায় ফাঁকাই ছিল। ওই যুবকেরা বোনেদের উদ্দেশ্যে কটূক্তি করছিল। আমি বারণ করতেই ওরা এসে হামলা করল। যে দু’এক জন যাতায়াত করছিলেন, তাঁরা গোলমাল দেখে এগোতে সাহস করেননি। পরে অবশ্য স্থানীয় লোকজনই আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।” অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সোমবার আদালত চত্বরে ধৃত অভিজিৎ বলেন, “আমরা বিশ্বকর্মা পুজোর জন্য মাঞ্জা দিচ্ছিলাম। হেঁটে আসার সময়ে মাঞ্জা গায়ে লেগে যাওয়ায় আমরা কুন্তলকে সতর্ক করি। তা থেকে শুধু বচসা হয়।” তাঁর দাবি, “কুন্তলের বোনেদের আমরা কোনও কটূক্তি করিনি। কুন্তল বা তাঁর বাবাকে মারধরও করিনি। মিথ্যা অভিযোগে আমাদের ফাঁসানো হয়েছে।” তবে, রবিবার রাতের ঘটনার নিন্দায় সরব হয়েছেন জেলেপাড়ার বাসিন্দারা। সুজিত দে নামে এক বাসিন্দা বলেন, “ওই দুই বোনকে রোজই পড়ে বাড়ি ফিরতে দেখি। কী করে যে এমন ঘটল, বুঝতে পারছি না। বাড়ির মেয়েদের রাতে বেরনো মনে হচ্ছে আর নিরাপদ নয়। প্রশাসনের এ বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়া উচিত।” আর এক বাসিন্দা প্রলয় দত্ত বলেন, “এ শহরের একটা ঐতিহ্য রয়েছে। এ ধরনের ঘটনা মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। কড়া হাতে এর মোকাবিলা প্রয়োজন।” |