জন্মদিনে নরেন্দ্র মোদীকে শুভেচ্ছা জানালেন নীতীশ কুমার! একই সঙ্গে কামনা করেছেন মোদীর দীর্ঘায়ু!
গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর সম্পর্কের শীতলতা প্রশ্নাতীত। গুজরাত দাঙ্গায় মোদীর ‘ভূমিকা’ নিয়ে ঘনিষ্ঠ মহলে সব সময়েই নীতীশ সমালোচনায় সরব। মোদীর বিষয়ে নীতীশ এতটাই কড়া মনোভাব নিয়ে চলেন যে তাঁর সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করে নিয়েও তাঁর ঘোর অনীহা। পটনায় বিজেপি-র জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক উপলক্ষ্যে বছর দেড়েক আগে মোদী বিহারে এসেছিলেন। সেই সময় গুজরাত সরকার বিহারের সংবাদপত্রগুলিতে মোদীর ‘রাম রাজ্য’ ও ‘সুশাসন’-এর মহিমা প্রচার করে বিজ্ঞাপন দেয়। আর সেই বিজ্ঞাপনে নীতীশ এতটাই ক্ষুব্ধ হন যে এনডিএ-র প্রধান শরিক বিজেপি-র জাতীয় নেতাদের সম্মানে জোটেরই অন্যতম শরিক দলের নেতা হিসেবে তিনি যে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেছিলেন তা বাতিল করে দেন। আমন্ত্রণ করার পরে সেই আমন্ত্রণ খারিজ করে দেওয়ায় নীতীশের উপর চটে যান বিজেপি নেতারাও। কিন্তু বিহারে জোটের স্বার্থে তা হজম করতে হয় বিজেপি নেতাদের। |
এক মাস ব্যাপী বিবেকানন্দ যুব বিকাশ যাত্রায় সোমবার সবরকণ্ঠ পৌঁছলেন নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পি টি আই |
পরবর্তী টক্কর বিহারের গত বিধানসভা নির্বাচনের সময়। দলের প্রচারে বিহারে আসতে চেয়েছিলেন মোদী। তীব্র আপত্তি জানান নীতীশ। বিজেপি-র জাতীয় নেতারা বিষয়টি মেনে নেন। এ বারেও তাঁরা জোটের বৃহত্তর স্বার্থেই নীতীশের আপত্তি হজম করতে বাধ্য হন। মোদীর বিরুদ্ধে নীতীশ তৃতীয়বার আক্রমণ শানান মাস কয়েক আগে। মোদীকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরে আগামী লোকসভা নির্বাচনে যেতে চায় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ। সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত প্রকাশ্যেই মোদীর হয়ে সওয়াল করেন। সরাসরি সেই প্রসঙ্গ না তুলে, বা মোদীর নাম না করে নীতীশ এক সাক্ষাৎকারে এনডিএ-র গুরুত্বপূর্ণ শরিক দলের নেতা হিসেবে জানান, পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এনডিএ নেতৃত্ব যাঁর নামই চূড়ান্ত করুন না কেন, একটি বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, জোটের প্রধানমন্ত্রী-পদপ্রার্থীর ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি থাকতেই হবে। এই কথা বলে নীতীশ মোদীর গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই পরোক্ষে প্রশ্ন তুলে দেন।
এই যেখানে মোদী-নীতীশ সম্পর্ক সেখানে হঠাৎ এই শুভেচ্ছা? পটনায় মুখ্যমন্ত্রীর জনতা দরবারে সাংবাদিকরা নীতীশকে জানান, নরেন্দ্র মোদীর ৬২ বছরের জন্মদিন উপলক্ষ্যে আজ পটনায় বিজেপি কার্য্যালয়ে একটি ৬২ কেজি ওজনের কেক কাটা হয়েছে। নেতৃত্ব দিয়েছেন নীতীশ মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য তথা রাজ্যে মোদীর ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতা গিরিরাজ সিংহ। নীতীশ সাংবাদিকদের প্রশ্ন করেন, “তাতে আপত্তির কী আছে? আমিও তো আজ মোদীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছি। তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করেছি।” এরপরেই নীতীশ হাসতে হাসতে বলেন, “তবে আমার একটু খেদ আছে। গিরিরাজজি আমায় এক টুকরো কেকও খাওয়ালেন না।”
মোদী সম্পর্কে নীতীশের মনোভাবে এই পরিবর্তনের কারণ কী? নীতীশের ঘনিষ্ঠ মহলের ব্যাখ্যা, মোদীর সঙ্গে নীতীশের ব্যক্তিগত সম্পর্ক খুব খারাপ তো নয়। এর এই শুভেচ্ছা তো স্রেফ সৌজন্য। আসলে বিহারে নিজের রাজনৈতিক স্বার্থেই নীতীশ মোদীর ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে চলতে চান। বড় কারণ, বিহারে নীতীশের ভোটব্যাঙ্ক। নীতীশ কুমার আস্তে আস্তে লালুপ্রসাদ যাদবের কব্জা থেকে যে মুসলিম ভোটব্যাঙ্ককে নিজের দিকে টেনে এনেছেন সেই ভোটব্যাঙ্ক যেন কোনও ভাবেই চিড় না খায়। গত বিধানসভা ভোটেও মুসলিমদের ভোট নীতীশের সঙ্গেই ছিল। নীতীশ জানে, তিনি বিজেপি-র জোট শরিক হওয়া সত্ত্বেও এই মুসলিম ভোট তাঁর সঙ্গে আছে। বিহারি মুলসলিমরা নীতীশকে সামনে রেখে বিজেপিকে মেনে নিয়েছে। কিন্তু মোদীকে তারা কোনও ভাবেই মানবে না। সুতরাং রাজনৈতিক সমীকরণকেই রাজনীতিক নীতীশ প্রাধান্য দিয়েছেন। |