কেন্দ্র-মমতার মধ্যে সেতুবন্ধন প্রণবদা’র
গোটা দেশের কাছে তিনি ‘মহামহিম’ রাষ্ট্রপতি হতে পারেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তিনি আজও ‘প্রণবদা’। কলকাতার নাগরিক সংবর্ধনার দিনে প্রকাশ্যেই এই কথাটা মমতা জানিয়ে দিয়েছেন। সকলের সামনেই মমতা সে দিন বলেছিলেন, “আপনি দেশের রাষ্ট্রপতি, কিন্তু আমি প্রণবদা ডাকতে পারি তো?” প্রণববাবু হেসে সম্মতি দিয়েছিলেন। খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি নিয়ে সরকারের সঙ্গে শরিক তৃণমূলের যখন চূড়ান্ত সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তখন মমতার সেই ‘প্রণবদা’ই সাংবিধানিক চৌহদ্দির মধ্যে থেকেও নীরবে দু’পক্ষের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করছেন।
গত তিন দিনে মমতা প্রণববাবুর সঙ্গে তিন বার একান্তে বৈঠক করেছেন। প্রথম দিন নাগরিক সংবর্ধনার পরে রাজভবনে গিয়ে বৈঠক করেন। দ্বিতীয় দিন রাজ্যপালের নৈশভোজের পর ফের প্রণববাবুর ঘরে গিয়ে একান্তে ঘণ্টাখানেক বৈঠক করেন। গত কালও প্রণববাবুর সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়।
ঝোড়ো হাওয়ায় উড়ে যাচ্ছে ‘রেড কার্পেট’। রাষ্ট্রপতির অপেক্ষায়, বিমানবন্দরে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
প্রণববাবু রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর কোনও নিয়ম ভাঙতে চান না। কারণ তিনি সংবিধান মেনে চলা লোক। যে কারণে রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে নিজের শহরে এসে ঢাকুরিয়ায় নিজের বাড়িতে রাত্রিবাসও করেননি। তাই মমতা বনাম কেন্দ্র সংঘাতের মধ্যে সরাসরি ঢুকতে নারাজ তিনি। তবে একই সঙ্গে তিনি চাইছেন, যাতে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি না হয়। তাই প্রণববাবু মমতাকে বুঝিয়েছেন, দেশের আর্থিক অগ্রগতির জন্যই সংস্কার প্রয়োজন। আবার মমতার মতকেও তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে বোঝার চেষ্টা করেছেন।
ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতির পদটি অনেক সময়েই রাজনৈতিক ঐকমত্য রচনায় সাহায্য করে। যে কারণে কলকাতায় নেতাজি ভবনের অনুষ্ঠানে প্রণববাবু আর্থিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা যে রকম বলেছেন, তেমনই তুলে ধরেছেন রাজনৈতিক ঐকমত্যের প্রয়োজনীয়তাও। তা ছাড়া, প্রণববাবু বরাবরই রাজনৈতিক ঐকমত্যকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছেন। সম্প্রতি বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী বলেছেন, “প্রণববাবু যখন অর্থমন্ত্রী ছিলেন, তখন সংসদে তিনি কথা দিয়েছিলেন, খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির প্রস্তাবে রাজনৈতিক সর্বসম্মতি না হলে তা বাস্তবায়িত করা হবে না। সেই সময়ে তিনি লোকসভারও নেতা ছিলেন। আজ তাঁর অনুপস্থিতিতে কংগ্রেস অন্যথা কেন করছে?” যা শুনে কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, আমরা রাজনৈতিক ঐকমত্য রচনার পক্ষে। কিন্তু এত বড় দেশে শতকরা একশো ভাগ ঐকমত্য সব সময় বাস্তবায়িত করা যায় না।
খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির মতো বিষয় নিয়ে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে যথেষ্টই অখুশি রাষ্ট্রপতি। এই পরিস্থিতির নিরসনে তিনি উৎসাহী। বাম, বিজেপি বা মুলায়মরা যখন খুচরোয় বিদেশি লগ্নির বিরোধিতা করছেন, তখন রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাদের মত শুনতে আগ্রহী রাষ্ট্রপতি। তিনি চাইছেন না, এই ঘটনাকে ঘিরে সরকার সংকটে পড়ুক। সে কারণে আগের মতো ‘ক্রাইসিস ম্যানেজার’ হতে না পারলেও সাংবিধানিক সীমার মধ্যে থেকেই পথ খুঁজছেন মমতার ‘প্রণব’দা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.