ইউপিএ সরকারের সঙ্গে ‘হেস্তনেস্ত করা’র বৈঠক তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সারবেন টাউন হলের ‘পাতাল ঘরে’। তপসিয়ায় দলের সদর দফতর তৃণমূল ভবনে আজ, মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় ওই বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তৃণমূল নেতৃত্ব সভার স্থল বদলে টাউন হল সংলগ্ন ভূগর্ভস্থ অ্যানেক্স-কে বেছে নিয়েছেন। কেন সভার স্থানবদল, তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা সোমবার বলেছেন, আজ মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর ঠাসা কর্মসূচি রয়েছে। তিনি যাতে অল্প সময়ের মধ্যে সভায় যেতে পারেন, সেই জন্যই টাউন হলে ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও রেলমন্ত্রী মুকুল রায় বলেন, “এই ধরনের বৈঠক হলে তৃণমূল ভবনের সামনে প্রচুর গাড়ি আসে এবং তার ফলে ওই এলাকায় যে যানজট হয়, তা এড়াতেই বৈঠকের স্থান বদল করা হয়েছে।”
খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) বিরোধিতা করছেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি পুনর্বিবেচনা এবং পরিবারপিছু ভর্তুকিপ্রাপ্ত সিলিন্ডারের সংখ্যা ৬ থেকে বাড়িয়ে ২৪ করার দাবি তুলেছেন তিনি। তাঁর দাবি বিবেচনার জন্যই কেন্দ্রীয় সরকারকে গত শনিবার ৭২ ঘণ্টার সময়সীমা দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। যা শেষ হচ্ছে আজ, বিকালে। এর পরে তাঁরা কী করবেন, তা স্থির করতে মমতা প্রথমে সংসদীয় দলের বৈঠক ডেকেছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতির ‘গুরুত্ব’ বিবেচনা করে শুধু সাংসদদেরই নয়, রাজ্যের সব মন্ত্রী ও শাখা সংগঠনের প্রধানদেরও আজ বৈঠকে ‘আমন্ত্রণ’ করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক কালে তৃণমূল নেত্রী তৃণমূল ভবনের বদলে টাউন হলের ‘পাতাল ঘরে’ই দলের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কোন প্রার্থীকে সমর্থন করা হবে, তা নিয়ে আলোচনার জন্য গত ১৮ জুন ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বৈঠকও বসেছিল এই ‘পাতাল ঘরে’ই। সে দিন বৈঠকের পরে দলের সংসদীয় কমিটির নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, প্রার্থী সমর্থনের দায়িত্ব তাঁরা মমতাকেই দিয়েছেন। সে দিনের বৈঠকেও দলের সাংসদ, বিধায়কদের সঙ্গে তৃণমূলের শাখা সংগঠনের প্রধানদের শেষ মুহূর্তে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সিঙ্গুর-আইনকে কলকাতা হাইকোর্ট ‘অবৈধ’ বলে রায় দেওয়ার পরে সরকার ও দলের করণীয় ঠিক করতে এই ‘পাতাল ঘরে’ই মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে বৈঠক হয়েছিল। আজকের বৈঠকও ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বলেই ‘পাতাল ঘর’কেই বেছে নেওয়া হয়েছে বলে তৃণমূলের নেতাদের একাংশের অভিমত।
দাবি পূরণ না-হলে কেন্দ্রে তাঁদের দলের মন্ত্রীরা আর থাকবেন কি না, তা নিয়ে যেমন আলোচনা হওয়ার কথা আছে, তেমনই বৃহস্পতিবার রাজ্যে বামেদের ১২ ঘণ্টার ধর্মঘট মোকাবিলা নিয়েও কথা হবে বলে তৃণমূলের এক সূত্রের খবর।
তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে এখনই দলের মন্ত্রীদের সরিয়ে নেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে দলনেত্রী সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই এগোতে চান। ইউপিএ সরকারে তৃণমূলের ৬ জন প্রতিমন্ত্রী আছেন। পূর্ণমন্ত্রী বলতে রেলমন্ত্রী মুকুলবাবু। ডিজেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে শনিবার কলকাতায় মিছিল করার পরে মেয়ো রোডের সভায় মমতা স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, “আমাদের তো আছে ওই একটা রেল মন্ত্রক! একটা মন্ত্রক থাকল কি গেল, আমার কিছু যায় আসে না!” ইউপিএ সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার না-করলেও মন্ত্রিসভা থেকে তাঁরা যে
সরে আসতে পারেন, তার স্পষ্ট ইঙ্গিত মমতা শনিবারই দিয়ে রেখেছেন। ফলে, আজ বৈঠকে একটা ‘হেস্তনেস্ত’ ঘটার সম্ভাবনা রয়েছেই।
তবে এখনই যাতে কেন্দ্রীয় সরকার থেকে তৃণমূল মন্ত্রীরা ইস্তফা না দিয়ে দেন, তার জন্য দিল্লির কংগ্রেস হাইকম্যান্ড চেষ্টা চালাচ্ছে। দিল্লির সঙ্গে তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের কয়েক জন যোগাযোগ রাখছেন বলে জোট-শিবির সূত্রের খবর। কিন্তু তৃণমূল নেত্রী স্বয়ং এই তথ্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ফেসবুকে এ দিন সন্ধ্যায় মমতা লিখেছেন, ‘দু-তিনটি নগণ্য চ্যানেল ব্যবসায়িক স্বার্থে বিকৃত তথ্য প্রচার করছে, এটা দুর্ভাগ্যের। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এটা একেবারেই অবাঞ্ছিত। মেরুদণ্ডহীন এবং নগণ্য চ্যানেলগুলির ওই ধরনের তথ্য প্রচারের নিন্দা করছি’।
ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি পুনর্বিবেচনার বিষয়ে এ দিন দিল্লির কিছু কংগ্রেস নেতা ও মন্ত্রীদের মন্তব্য নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে কোনও পাল্টা মন্তব্য করতে চান নি। তবে কংগ্রেস নেতা ও মন্ত্রীদের বক্তব্যে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কংগ্রেস ও তৃণমূল শিবিরের একাংশ অবশ্য চেষ্টা করছে, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের টেলিফোনে কথা বলিয়ে দেওয়ার জন্য। যদিও তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, “চিড়ে ভিজবে বলে মনে হয় না!”
এখন অপেক্ষা ‘পাতাল ঘরে’ কী ঘটে, তার জন্যে! |