সংস্কারে অনড়, তবে মমতাকেও চায় কংগ্রেস
রতে চান না সংস্কার থেকে হারাতে। চান না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। মনমোহন সিংহের এই দুই লক্ষ্য পূরণ হবে কি না, তা জানা যাবে আগামিকাল বিকেলে। যখন তৃণমূল নেত্রীর দেওয়া ৭২ ঘণ্টার সময়সীমা শেষ হবে। কাল বিকেলেই টাউন হলে বৈঠক করে সরকারে থাকা না-থাকার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে তৃণমূল।
রাজনীতির কারবারীদের মতে, মমতার সামনে তিনটি পথ রয়েছে।
এক: ইউপিএ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া।
দুই: ইউপিএ-তে থেকেও মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে আসা।
তিন: সমর্থন প্রত্যাহার বা মন্ত্রিসভা ছাড়া, কোনওটাই না করে মন্ত্রীদের দফতরে যেতে বা সরকারি কাজে অংশ নিতে বারণ করা।
তৃণমূল নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুলতান আহমেদের বক্তব্য, “যে সিদ্ধান্ত হবে, তা মানুষের কথা ভেবেই হবে।”
মমতা যাতে সমর্থন প্রত্যাহার বা মন্ত্রীদের ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত না নেন, সে জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা চালাচ্ছে কংগ্রেস। সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেল নিজে এ বিষয়ে উদ্যোগী।
প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রের খবর, শেষ প্রচেষ্টা হিসেবে মনমোহন নিজে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
কিন্তু মমতার মন পেতে গিয়ে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ বা ডিজেলের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার কোনও সুযোগ নেই বলেই দাবি করছে কংগ্রেস মহল। তাদের মতে আর্থিক সংস্কারের যে সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী নিয়েছেন, তাতে সনিয়া থেকে রাহুল গাঁধীর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। ফলে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার অর্থ প্রধানমন্ত্রী তথা দলের সম্মানহানি। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমও আজ জানিয়ে দিয়েছেন, সংস্কারের কোনও সিদ্ধান্তই প্রত্যাহার করা হবে না।
তবে মমতাকে সন্তুষ্ট করতে ভর্তুকিতে দেওয়া রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের সংখ্যা ছ’টি থেকে বাড়িয়ে আটটি করা হতে পারে। মমতার দাবি, সংখ্যাটা ২৪ করতে হবে। কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, সিলিন্ডারের সংখ্যা ছ’টিতে বেঁধে রাখার সুপারিশ করেছিল পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিই। যাতে তৃণমূলের রত্না দে নাগও ছিলেন। তিনি তখন আপত্তি জানাননি। তৃণমূলের পাল্টা বক্তব্য, স্থায়ী কমিটি বছরে ছয় লক্ষ টাকা আয়ের মানুষের জন্য ওই সুপারিশ করেছিল। সরকার সকলের ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য করেছে।
ডিজেলের দামবৃদ্ধি পুরোপুরি প্রত্যাহার করার দাবি জানাচ্ছেন মমতা। কেন্দ্রের তরফে বলা হচ্ছে, রাজ্য চাইলে বিক্রয় কর কমিয়ে ডিজেলের দাম কমাতে পারে। এ প্রসঙ্গে রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “কেন্দ্র ডিজেলে যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর বসিয়েছে তা আগে প্রত্যাহার করুক। তার পরে রাজ্যকে কর তোলার পরামর্শ দিক।”
মমতা চাইছেন, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত ছ’মাসের জন্য স্থগিত রাখা হোক। কেন্দ্রের বক্তব্য, রাজ্য চাইলে বিদেশি লগ্নির অনুমতি না দিতেই পারে। তৃণমূলের পাল্টা যুক্তি, রাজ্যগুলি বিদেশি লগ্নিকারীদের বাধা দিলে সমস্যা হতে পারে। কারণ ৮২টি দেশের সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ চুক্তি আছে। যাতে বিদেশি সংস্থাগুলিকে জাতীয় মর্যাদা দেওয়া হয়। ওয়ালমার্ট মুম্বইতে দোকান খোলার পর কলকাতায় বাধা পেলে, আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা ঠুকতে পারে। তাই যা করার কেন্দ্রকেই করতে হবে।
এই টানাপোড়েনের আবহে কংগ্রেস মমতাকে এটাই বোঝাতে চাইছে যে, মাওবাদী থেকে আর্থিক সমস্যা সব কিছুর জন্যই কেন্দ্রের সহায়তা তাঁর দরকার হবে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে মমতা যখন বেঁকে বসেছিলেন, তখনও এই প্রশ্নেই তাঁর উপরে চাপ সৃষ্টি করেছিল কংগ্রেস। মমতা প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে রাজ্যকে আর্থিক সাহায্য দেওয়া নিয়ে নড়েচড়ে বসে কেন্দ্র। বস্তুত, আগামিকালই রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চেয়েছিলেন চিদম্বরম। কিন্তু শেষ মুহূর্তে দিল্লি-যাত্রা বাতিল করেছেন অমিতবাবু। তৃণমূল শিবির বলছে, গত দেড় বছর ধরে রাজ্যের জন্য আর্থিক প্যাকেজ নিয়ে আলোচনা চললেও লাভ কিছুই হয়নি। এখন বৈঠক হলে ব্যাখ্যা হত, মমতা সমর্থন দেওয়ার বিনিময়ে আর্থিক প্যাকেজ নিয়ে দর কষাকষি করছেন। তাই অমিতবাবু দিল্লি যাচ্ছেন না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.