পূর্ব চিন সাগরের কয়েকটা দ্বীপ কেনা নিয়ে বিরোধ। আর তার জেরে চিনে হামলার মুখে পড়ছে জাপানের বিভিন্ন সংস্থা। এই অশান্ত পরিস্থিতিতে প্যানাসনিক, ক্যাননের মতো জাপানি সংস্থাগুলি চিনে তাদের কারখানাগুলি সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই পথে হাঁটতে চলেছে হন্ডা, মাজদার মতো অন্য সংস্থাগুলিও। চিনের সঙ্গেই সব চেয়ে বেশি বাণিজ্য করে জাপান। সস্তার শ্রমিক ও কম উৎপাদন খরচের জন্যই চিন থেকে প্রচুর পণ্য উৎপাদন করায় জাপানি সংস্থাগুলি। হালে চিনা শ্রমিকদের মজুরি বেড়ে গিয়েছে। তার উপরে কারখানায় হামলার মতো ঘটনায় জাপানি লগ্নিকারীরা এ বার তাইল্যান্ড বা অন্য দেশের দিকে ঝুঁকতে পারে বলেও আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে চিনে।
চিনে আজ জাপান-বিরোধী প্রতিবাদী জনতা প্যানাসনিকের দু’টি কারখানায় হামলা চালায়। কর্মী ও কারখানার নিরাপত্তার স্বার্থে সংস্থার কর্তৃপক্ষ দু’দিনের জন্য এই দেশে তাদের কারখানাগুলি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এতে। ক্যাননও চিনে তাদের ৩টি কারখানা সাময়িক ভাবে বন্ধ রেখেছে। চিনের সরকারি সূত্র বলছে, জাপানি সংস্থার বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভ কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং এ দেশে জাপান-বিরোধী যে জনরোষ তৈরি হয়েছে তার জেরেই এই হামলা।
কিন্তু কেন এই জাপান-বিরোধ?
আসলে দিন কয়েক আগেই পূর্ব চিন সাগরের কয়েকটি বিতর্কিত দ্বীপ কেনার কথা ঘোষণা করেছে জাপান সরকার। দ্বীপগুলিকে জাপানিরা বলেন ‘সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জ’। চিনাদের কাছে এর নাম ‘দিয়ায়ু’। দ্বীপগুলির মালিকানা নিয়ে চিন-তাইওয়ান বিরোধ দীর্ঘদিনের। তার মধ্যে কোনও বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে ২.৬ কোটি মার্কিন ডলারে দ্বীপগুলি কিনে নেওয়ার কথা জানায় জাপান। এতেই চটেছে চিন। সরকারি ভাবে এর প্রতিবাদও করেছে তারা। সঙ্গে শুরু হয়েছে জাপানি সংস্থার উপরে চিনাদের হামলা। বিক্ষোভের নিশানা হচ্ছে জাপানি পতাকা ও গাড়িও।
কিন্তু চিনে সরকার-কথিত এই ‘জনরোষ’ যে ব্যুমেরাং হয়ে উঠতে পারে সেই চিন্তাও রয়েছে বেজিংয়ের। বিষয়টিকে ভাল চোখে দেখছেন না জাপানের বাজার-সমীক্ষকরাও। এমনিতেই গড় শ্রমমজুরি বেড়ে যাওয়ায় চিন আগের মতো বিদেশি বিনিয়োগের অনুকূল নেই। তার উপরে যদি এই ধরনের বিরোধ হতে থাকে, সে ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে জাপানি লগ্নি চিনে আর কতটা আসবে সে নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। তা ছাড়া, চিন ও জাপানের মতো এশিয়ার দুই অন্যতম আর্থিক শক্তির মধ্যে ব্যবধান তৈরি হলে গোটা মহাদেশের অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়ার আশঙ্কাও থেকে যাচ্ছে। |