অবশেষে শিল্পমহল ও আমজনতাকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
শীর্ষ ব্যাঙ্ক শিল্পের হাতে তুলনায় কম সুদে বাড়তি তহবিল তুলে দেওয়ার পথ সোমবার সুগম করল ব্যাঙ্কের নগদ জমার অনুপাত কমিয়ে। একই কারণে, গাড়িঋণ ও গৃহঋণেও সুদ কমলে সাধারণ মানুষের ইচ্ছাপূরণ ও এই দুই শিল্পকে চাঙ্গা করা একই সঙ্গে সম্ভব হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। ব্যাঙ্কিং মহল ইতিমধ্যেই সুদের হার ফিরে দেখার ইঙ্গিত দিয়েছে।
তবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে শিল্পমহলের প্রত্যাশা ছিল আরও বেশি। বিশেষ করে সম্প্রতি কেন্দ্র আর্থিক সংস্কারের পথে দৃঢ় পদক্ষেপ করায় শিল্পের চাহিদাও লাফিয়ে বেড়েছিল। কিছুটা হতাশ শেয়ার বাজারও। সেই কারণেই সোমবার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর ডি সুব্বারাও ঋণনীতি ঘোষণা করার আগে সেনসেক্স বেড়ে যায় ২৫০ পয়েন্ট। কিন্তু শুধু নগদ জমার অনুপত কমায় উত্থান ধরে রাখতে পারেনি শেয়ার বাজার। দিনের শেষে সেনসেক্স বাড়লেও তা সীমিত ছিল মাত্র ৭৮ পয়েন্টে। তবে এই নিয়ে পরপর ন’দিন বাড়ল সূচক, ২০০৭-এর অক্টোবরের পর থেকে যা দেখেনি বাজার। এই ন’দিনে সেনসেক্স বেড়েছে প্রায় ১২৩১ পয়েন্ট।
জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর, অর্থবর্ষের এই দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের মাঝামাঝি ঋণনীতির পর্যালোচনায় ব্যাঙ্কের নগদ জমার অনুপাত বা ক্যাশ রির্জাভ রেশিও (সিআরআর) ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৪.৫% করল শীর্ষ ব্যাঙ্ক। প্রসঙ্গত, বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ককে তার আমানতের যে অংশ বাধ্যতামূলক ভাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কে গচ্ছিত রাখতে হয়, সেটাই সিআরআর। তা কমায় ব্যাঙ্কগুলির হাতে আসবে বাড়তি ১৭ হাজার কোটি টাকা। যা তারা মূলত ঋণ খাতেই খরচ করবে।
তবে স্বল্প মেয়াদে ব্যাঙ্কগুলি আরবিআইয়ের কাছ থেকে যে-হারে ঋণ নেয়, অর্থাৎ রেপো রেট অপরিবর্তিতই থাকায় শিল্প ও ব্যাঙ্কিং মহল হতাশা জানিয়েছে। তারা বলেছে, ওই হার কমলে ব্যাঙ্কগুলির তহবিল সংগ্রহের খরচ আরও কমত। পাশাপাশি রিভার্স রেপো রেট, অর্থাৎ শীর্ষ ব্যাঙ্ক যে হারে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ঋণ নেয়, সেই হারও একই জায়গায় রয়েছে। যা কমলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে ঋণ দেওয়ার তুলনায় বাড়তি সুদে অন্যত্র আরও বেশি ঋণ দেওয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয় বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক। তবে মূল্যবৃদ্ধির উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে এখনই এই দু’টি হার কমায়নি সাবধানী রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। শীর্ষ ব্যাঙ্ক বলেছে, বেয়াড়া ধরনের মূল্যবৃদ্ধিকে বাগে আনাই এখনও তার প্রধান লক্ষ্য। উল্লেখ্য, অগস্টে সার্বিক মূল্যবৃদ্ধি বেড়ে ছুঁয়েছে ৭.৫৫%।
ব্যাঙ্কিং মহল মনে করছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সাবধানে পা ফেললেও উপকৃতই হবে তারা। সিআরআর কমায় তাদের হাতে বাড়তি তহবিল তো আসছেই। উপরন্তু সিআরআর খাতে জমা টাকায় কোনও সুদ না-মিললেও ওই টাকা ঋণ দিলে সুদ বাবদ বাড়তি আয় হবে ব্যাঙ্কের। বাড়তি ঋণ দেওয়ার সুযোগ পেলে সুদ কমানো সম্ভব হবে বলে আশা তাদের। স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান প্রতীপ চৌধুরী জানান, তাঁরা শীঘ্রই সুদের হার পর্যালোচনা করবেন। তবে তাঁর মতে শুধু বাড়তি ঋণ পেলেই হবে না। উৎপাদন বাড়িয়ে জোগান বৃদ্ধির প্রতিও নজর দিতে হবে শিল্পকে। পাশাপাশি, শেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন, বিদেশি লগ্নির দরজা খোলার সিদ্ধান্ত সূচকের বৃদ্ধিতে ইন্ধন জোগাবে। |