প্রতি বছর বর্ষায় ভেঙে যায় সেচ খালের পাড়। জল ঢুকে পড়ে জমিতে। ভেসে যায় চাষজমি। অথচ প্রশাসনের কাছে বারবার ওই পাড় সংস্কারের আবেদন জানালেও পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয়নি, এমনই অভিযোগ কাঁকসা ব্লকের প্রায় দশটি মৌজার চাষিদের। অবিলম্বে প্রশাসনের কাছে সেচ খালের পাড় সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
কাঁকসার জামডোবা গ্রামের কাছে ডিভিসি-র মূল ক্যানাল থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার লম্বা সেচখালটি জামডোবা, তেলিপাড়া, পিয়ারিগঞ্জ, ধানতোড়, রামচন্দ্রপুর হয়ে আরজুড়ি গ্রামে শেষ হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই সব গ্রামগুলিতে চাষের জলের অভাব মেটাতে প্রায় ৪০ বছর আগে সেচখালটি তৈরি করেছিল ডিভিসি। প্রায় ১০টি মৌজার চাষের সুবিধার জন্য এটি তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে জীর্ণ হয়ে পড়েছে সেচখালটি। পাড়ের বেশ কয়েকটি অংশ যেমন ভেঙে গিয়েছে, তেমনই পিয়ারিগঞ্জের পর থেকে প্রায় মজে গিয়েছে খালটিও। পাড় ভেঙে যাওয়ায় খালের জল ভাঙা অংশ দিয়ে ঢুকে অন্য দিকের জমি হয়ে পড়ছে কুনুর নদীতে। |
পিয়ারিগঞ্জের বাসিন্দা পরিমল বাগদি জানান, প্রতি বছর বর্ষায় ওই সেচখালের পাড় ভাঙে। সেচখালে জল এলেই গ্রামের বাসিন্দারা বালির বস্তা দিয়ে বাঁধ দেন। কিন্তু বেশিদিন তা টেকে না। ফের ভেঙে গিয়ে সেচখালের জল বেরিয়ে চলে যায় কুনুরে। পরিমলবাবুর অভিযোগ, “প্রশাসনের কাছে বেশ কয়েক বার আবেদন করেছি এটি সারানোর জন্য। আংশিক সারাই হয়েছে। কিন্তু তাতে কাজের কাজ খুব একটা হয়নি।” ওই গ্রামেরই বাসিন্দা দেউল সরকার জানান, পঞ্চায়েতের কাছে একশো দিনের কাজ প্রকল্পে বাঁধের পাড়ের সংস্কার করার জন্য পরিকল্পনা জমা দিয়েছিলেন বাসিন্দারা। কিন্তু একশো দিনের প্রকল্পের আওতায় সেচখাল সারাই করা যাবে না বলে পঞ্চায়েতের তরফে জানানো হয়। দেউলবাবুর ক্ষোভ, “বাধ্য হয়ে আমরা, গ্রামবাসীরা সবাই মিলে বালির বস্তা দিয়ে বাঁধ দিয়েছি। জানি না তা কত দিন টিকবে!” তিনি আরও বলেন, “পিয়ারিগঞ্জের পরে সেচখালটি এক প্রকার মজে যাওয়ায় নীচের দিকের অন্যান্য গ্রামগুলিতে সেভাবে জল যায় না। সেচখালটি সংস্কার করা হলে ওই সব গ্রামের চাষিরা উপকৃত হবেন।”
গ্রামবাসীরা জানান, এই সেচখালটির পাড় ভেঙে যাওয়ায় অসুবিধায় পড়ছেন জামডোবার চাষিরাও। বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় জল ঢুকে তাঁদের জমিগুলিও ভেসে যায়। জামডোবার চাষী মঙ্গলা টুডু বলেন, “জলের তোড়ে আমার জমির ধান ডুবে গিয়েছে। আশপাশের অন্য জমিগুলিও ডুবে যাচ্ছে। সেচখালের বাঁধ মেরামত করা হলেই সমস্যা মিটে যায়।” জামডোবার চাষিদের বক্তব্য, দরকারের সময়ে সেচের জল মেলে না। অথচ বর্ষায় জলের তোড়ে জমির ফসল ডুবে যায়। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের মাধ্যমে কাঁকসা ও আউশগ্রামের সেচ ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য সম্প্রতি অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। পাড় সংস্কারের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন কাঁকসা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জনার্দন চট্টোপাধ্যায়। |