যেন ‘পুরাতন ভৃত্য’, ফিরে আসছে ডেঙ্গি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
এক বার চলে গিয়েও ফের ঘুরে আসছে সে। ‘পুরাতন ভৃত্য’-এর মতোই। ছাড়ালেও ছাড়ে না।
কিছুটা চাঙ্গা হয়ে রোগী যখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরব ফিরব করছেন, তখনই ফের জ্বর। বমি বমি ভাব। মাথা সোজা রাখা যাচ্ছে না। রক্ত পরীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ডেঙ্গির জীবাণু ফের সক্রিয়। কমছে অনুচক্রিকা বা প্লেটলেটের সংখ্যাও।
ডেঙ্গির জীবাণু শরীরে ঢুকলে তাকে প্রতিরোধ করতে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। তার ফলে দ্বিতীয় বার ডেঙ্গিবাহী কোনও মশা কামড়ালে রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম। পরজীবী-বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, এ ক্ষেত্রে ডেঙ্গির জীবাণু শরীরে অনেক দিন পর্যন্ত থেকে যাচ্ছে এবং শরীরে অ্যান্টিবডিও যথাযথ ভাবে তৈরি হতে পারছে না। তাই শরীরে থাকা পুরনো ভাইরাসই ফের সক্রিয় হয়ে উঠছে। আর তার ফলেই এই বিপত্তি। তবে দ্বিতীয় বার রোগ ফিরে এলে তার প্রভাব শরীরের উপরে তুলনায় কম পড়ে। যদিও প্রথম দফায় শরীর যে ভাবে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, তাতে রোগীর মাথা তুলে দাঁড়াতে মাস পেরিয়ে যায়।
তবে এক বার কমে গিয়ে ডেঙ্গির ফিরে আসাটা নতুন কোনও বৈশিষ্ট্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন পরজীবী-বিশেষজ্ঞেরা। ২০০৫, ২০০৮, ২০০৯ সালেও ডেঙ্গি ভাইরাসের এই শারীরিক প্রতিক্রিয়া তাঁরা লক্ষ করেছিলেন। অনেক ক্ষেত্রে রোগী নির্দিষ্ট সময়ের আগে একটু বেশি কায়িক পরিশ্রম করলেই ফের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, যা অ্যান্টিবডি তৈরির প্রক্রিয়াকে শ্লথ করে দিচ্ছে। তবে সকলের ক্ষেত্রে এটা হচ্ছে না। যাঁর শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা যত কম, তাঁর শরীরে রোগ ফিরে আসার আশঙ্কা তত বেশি। এ বারের ডেঙ্গির আরও একটি বৈশিষ্ট্য তার দ্রুত সংক্রমণ। একটি বাড়িতে ঢুকলে তা পরিবারের সব সদস্যকেই বিছানায় শুইয়ে দিচ্ছে। তাই ডেঙ্গি নিয়ে আতঙ্ক বেশি ছড়িয়েছে বিভিন্ন ছাত্রাবাসে। যেমন, বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের হস্টেল। হস্টেলের এক ছাত্র হাসপাতালে ভর্তি। পাশেরই একটি বাড়ির ভাড়াটে, প্রাক্তন ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এর পরেই ফাঁকা হয়ে গিয়েছে ছেলেদের হস্টেল। একই হাল মেয়েদের হস্টেলেও। ফলে ক্লাস বন্ধ হওয়ার দশা। পরীক্ষাও পিছিয়ে গিয়েছে।
ছেলেদের হস্টেলে আবাসিক ১৪০ জন। বর্তমানে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫-এ। হস্টেলে গিয়ে জানা গেল, এক আবাসিক অঞ্জন নন্দী ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। ডেঙ্গি-হানার এই ছবির পাশাপাশি ডেঙ্গি ছড়ানোর পরিস্থিতিটাও নজরে পড়েছে কলেজ চত্বরে ঢুকলেই। ছেলেদের হস্টেলের পাশে বড় পুকুর। আশপাশে জমে জল। জন্মাচ্ছে মশা। আবাসিকেরা জানলা এঁটে বসে রয়েছেন।
সায়েন্স কলেজের ছাত্রীদের হস্টেলে আবাসিকের সংখ্যা ৮০ থেকে কমে তিরিশে দাঁড়িয়েছে। সেখানে ভূতত্ত্ব বিভাগের এক ছাত্রী সম্প্রতি হাসপাতাল থেকে ফিরেছেন। জ্বর হওয়ার পরে তাঁকে এসএসকেএমে ভর্তি করা হয়। রক্ত পরীক্ষায় জানা যায়, ডেঙ্গি হয়েছে। প্রায় দশ দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পরে তিনি আবার হস্টেলে ফিরেছেন। কিন্তু আতঙ্কে অন্য ছাত্রীরা অনেকেই বাড়ি গিয়েছেন।
কলেজের কৃষিবিদ্যা বিভাগের পরীক্ষা ছিল ১০ সেপ্টেম্বর। ডেঙ্গির ভয়ে অনেক ছাত্রছাত্রী বাড়ি চলে যাওয়ায় অগত্যা পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) ধ্রুবজ্যোতি চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের কলেজ চত্বর বা হস্টেলের আশপাশের এলাকা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। কিন্তু মশাবাহিত রোগ হওয়ায় সব জায়গাতেই হানা দিয়েছে। সম্ভবত সে কারণে বাড়তি সর্তকতা নেওয়ার জন্যই ছেলেমেয়েরা বাড়ি চলে গিয়েছে।”
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস হিন্দু হস্টেল ম্যালেরিয়ার আঁতুড়ঘর। সেখানে এ বার ডেঙ্গির আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও ওই ছাত্রাবাসের কোনও আবাসিকই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হননি বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন। তবে সল্টলেকের ছাত্রী আবাসে ডেঙ্গি হানা দিয়েছে। কলেজ-কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, দু’জন ছাত্রী ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। |