অসহনীয় কাজের চাপ বাড়িয়ে দিতে পারে হৃদ্রোগের সম্ভাবনা বিশেষজ্ঞদের এই আশঙ্কা বহু দিনের। সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, কাজের চাপটাই শেষ কথা নয়। কাজের ক্ষেত্রে স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার বা সুযোগ যাঁদের কম, কিংবা একেবারেই নেই, তাঁদের ক্ষেত্রেই কাজের চাপ অসহনীয় হয়ে ওঠে বেশি। বাড়ে ‘স্ট্রেস’-এর মাত্রা। ‘ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন’-এর গবেষকদের দাবি, এই রকম পরিস্থিতিতে কর্মীদের হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অন্তত ২৩ শতাংশ বেশি। চিকিৎসা-বিজ্ঞান সংক্রান্ত পত্রিকা ‘ল্যানসেট’-এ প্রকাশিত হয়েছে সমীক্ষাটি।
ঠিক কী ভাবে হৃদ্রোগের এই নতুন ‘উৎস’টির হদিস পেলেন ব্রিটেনের ওই গবেষক দলটি?
এ কাজের জন্য অন্তত ২ লক্ষ কর্মীর কাজের চাপ (ওয়ার্ক-স্ট্রেস) সংক্রান্ত ১৩টি সমীক্ষার ফল বিশ্লেষণ করেছেন গবেষকরা। ১৯৮৫ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ব্রিটেন ও আরও কয়েকটি দেশে ওই সমীক্ষাগুলি করা হয়েছিল। সেগুলির ফল একত্রে বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, কাজের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক্তিয়ার না থাকায় কর্মক্ষেত্রে বাকিদের তুলনায় অনেক বেশি ‘চাপ’ অনুভব করছেন কিছু কর্মী। এবং এঁদেরই ‘হার্ট অ্যাটাক’-এর মতো হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাকিদের তুলনায় অন্তত ২৩ শতাংশ বেশি।
এ বিষয়ে চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতাটা কী রকম?
কার্ডিও-থোরাসিক সার্জেন সত্যজিৎ বসুর মতে, “যাঁরা উঁচু পদে চাকরি করেন, তাঁদের দায়িত্ব ও ক্ষমতা দুই-ই বেশি। ফলে তাঁদের চাপ বেশি থাকেই। কিন্তু যাঁরা নিম্নপদস্থ চাকুরে তাঁদের দায়িত্ব বেশি থাকলেও ক্ষমতা কম। তাঁরা চাপ কাটাতে অনেক সময়ই ধূমপান করতে শুরু করেন। একই কারণে অনেক সময় অস্বাস্থ্যকর খাবারও খেতে শুরু করেন। দু’দিক থেকেই যা তাঁদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।”
কিছুটা একই মত পোষণ করেন কার্ডিওলজিস্ট শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তাঁর বক্তব্য, “কাজের চাপ নয়, কাজের উপর বা কাজের পরিবেশের উপর কোনও কর্মীর কতটা নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, সেটাই নির্ধারণ করে তাঁর স্ট্রেসের মাত্রা। যে কর্মীর এই নিয়ন্ত্রণ যত কম, সাধারণ ভাবে দেখা গিয়েছে, তাঁরা তাঁদের কাজ নিয়ে অনেক বেশি চাপ অনুভব করেন।” শুভ্রবাবুর মতে, এই ‘স্ট্রেস’ বা চাপ মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেল শরীর থেকে ক্ষতিকর হরমোন বেরোতে শুরু করে যা রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। যদি ধমনীতে ‘ব্লকেজ’ থেকে থাকে, সে ক্ষেত্রে এই ‘চাপ’ প্রাণঘাতীও হয়ে উঠতে পারে।
অর্থাৎ সোজা ভাষায় পুরো বিষয়টি এক রকমের ‘ভুলভুলাইয়া’। অতিরিক্ত কাজের চাপে এমনিতেই শারীরিক ক্ষতির সম্ভাবনা। তার উপর যদি স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার না থাকে, তখন অনেক বেশি অসহনীয় লাগে সেই কাজের চাপ। কাজ তখন হয়ে ওঠে বোঝা। এবং সেই ‘স্ট্রেস’ কাটাতেই ধূমপানের মতো অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস রপ্ত করেন অনেক কর্মী। দুইয়ের ‘যৌথ অবদানেই’ হৃদ্যন্ত্রের বিপদ বাড়তে থাকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে বিপদ কাটাতে একটাই পথ জীবনের দর্শন বদলানো। ধূমপান নয়, দরকারে মনোবিদের কাছে যাওয়া যেতে পারে, কিংবা যোগব্যায়ামেও মিলতে পারে ফল। কিন্তু অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসে ইতি টানতে হবে অবিলম্বে। তাতেই কাজের চাপের হুমকি উপেক্ষা করেও সুস্থ থাকবে হৃদ্যন্ত্র। |