|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ৩... |
|
‘সভ্যতা’র বড়ই অভাব |
সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় |
উপলক্ষ ছিল বঙ্গীয় গ্রন্থ-চিত্রণ। কমলকুমার মজুমদার বললেন ‘ঠাকুমার ঝুলি যে একটি কত বড় কাজ, যে ইহা একটি সভ্যতা!’ এই সভ্যতার, যাকে সৌন্দর্য বলা যায়, বড় অভাব বাঙালির চলচ্চিত্র-চর্চায়। প্রকাশকরা বুঝে উঠতে চান না, সিনেমা দেখার আগ্রহ সিনেমা পড়ার অভ্যাসের সঙ্গে সরাসরি যোগ না-ও রাখতে পারে। সত্যজিৎ রায় প্রথম চিত্রনাট্য সংগ্রহ করেছিলেন রেনে ক্লেয়ারের ‘দি ঘোস্ট গোজ ওয়েস্ট’। পঞ্চাশ দশক থেকে পশ্চিমে ইংরেজি ভাষায় চলচ্চিত্র সংক্রান্ত বই প্রকাশের রেওয়াজ কত বদলে গেল। মনে পড়ে গ্রোভ প্রেস যখন ক্রুফোর ফোর হানড্রেড ব্লোজ, গোদারের ম্যাস্কুলাঁ-ফেমিনা ও রেনের হিরোশিমা মন আমুর ছাপল সেই বিস্ময়! ‘বাঙাল’ আমি কতটুকুই বা বুঝেছিলাম ফরাসি নবতরঙ্গের সাব-টাইটল দেখে? চিত্রনাট্যের অবিশ্বাস্য অনুবাদ, সমাপ্ত ছবির ফ্রেম থামিয়ে, কী ভাল তথ্য সমাবেশ; সমস্ত চিত্রমালা যেন জ্যান্ত হয়ে শব্দে ফিরে আসে। ‘লোকেরা ফিল্ম পড়ছে এই চিন্তাটাই তো ভারি অভিনব’, গোদার লিখেছিলেন।
দুঃখের কথা, বাংলায় কিন্তু তার চিহ্নমাত্র নেই। এমনকী সত্যজিৎ, ঋত্বিক অথবা মৃণালের যা কিছু মুদ্রিত, তা নেহাতই সংলাপের মিছিল। দৃশ্য বর্ণনা। ছবিটি কী ভাবে পরিকল্পিত হয়, পরে কী কী বদল হয়েছে, সমালোচনার প্রকৃতি, পরিচালকের প্রাসঙ্গিক মন্তব্য থাকে না। আর ছাপা ছবির মান তো খুবই খারাপ। লরিমার বা গ্রোভ-এর সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার প্রশ্ন নেই, কিন্তু এই দীনতাটুকু কি প্রকাশ না করলেই নয়?
ইংরেজি ভাষায় হিন্দি সিনেমার নক্ষত্রদের নিয়ে কিছু বই ছাপা হয়েছে। যেমন দিলীপকুমার (হার্পার কলিন্স), দেব আনন্দ (পেঙ্গুইন ভাইকিং) বেশ যত্নে প্রকাশিত। এমনকী নাসরিন মুন্নি কবিরের সম্পাদনায় উইমেন ইন ইন্ডিয়ান ফিল্ম সিরিজ চটি পুস্তিকা কিন্তু এক নিশ্বাসে মাধুরী দীক্ষিত বা মীনাকুমারীকে তো জানা যায়।
অথচ আমাদের যাঁরা বই ছাপেন, তাঁদের কতটুকু হেলদোল হল? উত্তমকুমার বলতেও প্রচ্ছদে রঙিন হাসিমুখ; ভিতরে সম্পাদকীয় মন্তব্যহীন স্মৃতিকথা, কিছু ছবি। সৌমিত্র বলতেও তা-ই। সুচিত্রা সেনের হাল আরও করুণ। কানন দেবীর সবারে আমি নমি বা চন্দ্রাবতী দেবীর আমি চন্দ্রাবতী বলছি মোটেই আধুনিক প্রকাশনার গৌরব নয়। চর্চাপদের মাধুরী-কানন বেশ ঝকঝকে, তেমন মুদ্রণ পারিপাট্য ‘প্রতিভাস’, ‘বাণীশিল্প’ কি ‘আনন্দ’র ছায়াছবি বিষয়ক পুস্তকেও থাকে। যা অভাব তা সম্পাদনার। আমাদের মনে থাকে না চলচ্চিত্র দৃশ্যশিল্প; শুধু কিছু স্থিরচিত্র সংকলন তাকে পাঠকের হৃদয়ে পৌঁছে দেবে না। মূল প্রশ্ন রুচির, বাজারের নয়। বি ডি গর্গের সো মেনি সিনেমাজ হাতে নিলেই ভারতীয় ছবি নিয়ে অনুরাগ জন্মায়। কিন্তু কালীশ মুখোপাধ্যায়ের বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পের ইতিহাস সম্পাদিত না হওয়ায় বোঝা যায় না বাংলা ছবির বহু মণিমানিক্য এতেই লুকিয়ে আছে। ফিল্ম সরস্বতী একটু প্রসাধন করলে ভক্তরা বরং কৃতজ্ঞই হবেন। |
|
|
|
|
|