পুস্তক পরিচয় ২...
এমন লেখা আর লেখেননি কেন
শ্রীগগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, পূর্ণিমা দেবী। সাহিত্যভারতী, ৩৫০.০০
ইটি পড়া শুরু করার আগে অনুমান হয় গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কন্যা পূর্ণিমা দেবীর লেখা তাঁর পিতাকে নিয়ে। পড়া শেষ করে জানা যায়, শুধু গগনেন্দ্রনাথকে নিয়ে নয়, আরও অনেককে নিয়ে, অনেক বিষয় নিয়ে, সেই সময় নিয়ে কথা, পূর্ণিমা দেবীর কথা। সব কথা নিয়ে কথা বলার পরিসর নেই এই আলোচনায়। আলোচক কার্টুন নিয়ে উৎসাহী, গগনেন্দ্রনাথের আঁকা কার্টুনে আগ্রহী। তাই খুঁজে নেওয়া কার্টুন নিয়ে কথা। খুঁজে নেওয়ার ইচ্ছেয় খুঁজে পাওয়া, পূর্ণিমা দেবীর লেখা থেকে আঁকা কার্টুনের বিষয়ের সূত্র।
গগনেন্দ্র-ভগিনী বিনয়নীর কন্যা প্রতিমা বালবিধবা। রবীন্দ্রনাথের প্রস্তাব বিধবা বিবাহ রথীন্দ্রনাথের সঙ্গে। বিনয়নীর আশঙ্কা: আমাকে যে সমাজ একঘরে ঠেলবে। গগনেন্দ্রনাথের সমর্থন: তোমার পিছনে আমি আছি। গগনেন্দ্রনাথের একাধিক কার্টুন হিন্দু সমাজের নিয়মের বিরুদ্ধে।
গগনেন্দ্রনাথের মা সৌদামিনীর ভয় ছিল বড়লোকের ছেলেদের মতো তাঁর ছেলেদেরও পান-দোষ আসতে পারে। ঠাকুরবাড়ি সে-দোষে মুক্ত ছিল না। গগনেন্দ্রনাথ মায়ের কাছে শপথ করেছিলেন। তাঁর কার্টুনে মদ্যপান, মদের বোতল সমালোচনার উপাদান।
অন্য দিকে, গগনেন্দ্রজননী চরকায় সুতো কাটতেন। বাড়িতে সকলের হাতে চরকা চলছে। সেই সুতো দিয়ে বাড়িতে তাঁতির বোনা কাপড়। অথচ গগনেন্দ্রনাথের কার্টুনে চরকার সমালোচনা। তাঁর স্বাদেশিকতায় আধুনিকতা।
এমন অনেক মিল খোঁজা যায়। যান্ত্রিকতাদুষ্ট হওয়ার অপবাদ হতে পারে, তবুও এমন সন্ধানপ্রাপ্তি থাক।
লেখিকা ধরিয়ে দিয়েছেন গগনেন্দ্রনাথের কার্টুন আঁকা শুরুর সময়। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন। লোকজনদের ধরে জেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বিলাত থেকে টেগার্টকে নিয়ে আসা হয়েছে। এই সময় থেকে বাবা কার্টুন আঁকতে শুরু করেন। শাসকের সমালোচনায় কার্টুন, যা কার্টুনের প্রাথমিক কাজ।
লেখিকা জানিয়েছেন, স্বাধীনতা আন্দোলনে গগনেন্দ্রনাথ অবনীন্দ্রনাথ নানা ভাবে সাহায্য করেছেন। গগনেন্দ্রনাথ ‘অপ্রিয় কথার সৃষ্টি বাঁচিয়ে তুলির মুখেই সকলকে খোঁচা দিয়েছেন। ব্রিটিশ গভর্নমেন্ট বা ভারতবাসী কারও দোষ ত্রুটিকেই তিনি ছাড় দেন নি।’ কার্টুনের একটি সংজ্ঞার্থ।
আমরা পড়লাম ঠাকুরবাড়ির নাটকে, পোশাক পরিকল্পনা, রূপসজ্জায়, মঞ্চ নির্মাণে, অভিনয়ে গগনেন্দ্রনাথ। এর প্রভাব খুঁজে পাওয়া যায় কার্টুনে। কার্টুনে ক্যানভাসে চরিত্রের অবস্থান বিন্যাস, পোশাক, অঙ্গভঙ্গি, নাটকীয়তায়।
গগনেন্দ্রনাথ কার্টুন এঁকেছেন। ছবি এঁকেছেন। লেখিকা গগনেন্দ্রনাথের ছবির একটা কাল অনুসারী ধারা দেখিয়েছেন।
প্রথম: পুত্রের মৃত্যুতে গগনেন্দ্রনাথ শোককালে কীর্তনের মাধ্যমে শান্তি পেয়ে চৈতন্য সিরিজ আঁকলেন। দ্বিতীয়: প্রাকৃতিক দৃশ্য। তৃতীয়: স্বদেশি আন্দোলনে সমাজের দোষত্রুটি সম্পর্কে সচেতনা প্রকাশে কার্টুন। চতুর্থ: ‘স্বপনপুরীর গোপন ভাষা রঙের খেলা।’ কিউবিজম। রামধনুর রঙ। ‘ভোরবেলা সূর্যের দিকে চেয়ে থাকতেন, বলতেন সূর্যের ভিতর সাতটা রং দেখা যায়। তাঁর কল্পনায় রূপকথার রাজারানি আরও কত কী ফুটে উঠেছিল তা শুধু তিনিই জানতেন।’ পঞ্চম, সাদাকালোর ছায়াছবি। এই প্রতিটি পর্যায়ের ছবির উদাহরণ রয়েছে বইটিতে।
বইটির আর একটি সম্পদ আলোকচিত্র। গগনেন্দ্রনাথের শৈশব (সঙ্গের ছবি) থেকে শুরু করে বয়স্ককালের ছবি। ছবি আড্ডায়, নাটকে, অভিনয়ে, মঞ্চ সজ্জায়। ওঁর সাজানো বৈঠকখানা, বিখ্যাত দক্ষিণের বারান্দা। মা, বাবা, বোন, স্ত্রী, পুত্র, কন্যা। আমাদের কাছে এই বই এক গগনেন্দ্র-মহাফেজখানা। যিনি এই মহাফেজখানা বাঁচিয়ে রেখেছেন, এই বইতে রেখেছেন, গগনেন্দ্র-উত্তর প্রজন্মের সেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে আমরা ঋণী।
এখানেই এই বই বানানো থামিয়ে দেওয়া যেত। দেওয়া হয়নি। গগনেন্দ্রনাথ পরিচিতি যতটা পারা যায় সমৃদ্ধ করতে তাঁর লেখা ফুলের গান, চিঠি, মজার চিঠি, নাতিকে লেখা চিঠিতে ননসেন্স। শিল্পীর অন্য পরিচয়। আক্ষেপ থাকে এমন লেখা আরও লেখেননি কেন। অথবা লিখেছেন আমরা দেখতে পাইনি।
এই বইটির দু’টি ছবি, যা কার্টুন বলা হয়নি, যা কার্টুন বলে অন্য কোথাও ছাপা দেখিনি, তা পেয়ে অপার বিস্মিত। ছবি দু’টির পরিচয়ে লেখা ‘কেক শপ কলেজ’। নাতিকে লেখা চিঠিতে গগনেন্দ্রনাথ নিজের পরিচয় দিয়েছেন ‘একট প্রিন্সিপাল কেক শপ কলেজ’, যা ‘বি শপ কলেজ’ নয়। আর নাতির পরিচয় ‘ডিসমিস্ড স্টুডেন্ট অব কেক শপ কলেজ’। এই চিঠি পড়ে ছবি দু’টি, ব্যঙ্গচিত্র দু’টি বুঝে নেওয়া যায়। আমার কাছে এ এক আবিষ্কারের মতন। এই বই থেকে আমার উল্লসিত পাওনা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.