মাসান্তে তাঁর আসা প্রায় বাঁধা ছিল। মধ্য চল্লিশের লোকটি পরিচয় দিতেন বাড়ির পরিচারিকার স্বামী। এ নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ হয়নি ছ’বছরে। গড়িয়াহাটের ডোভার টেরেসে মিত্র পরিবার ‘দম্পতি’র জন্য নির্দিষ্ট ঘরও বরাদ্দ করেছিল।
শান্তিপুরের সঞ্জীব বিশ্বাস গত ১৩ জুলাই তাঁর ‘স্ত্রী’, মিত্র বাড়ির পরিচারিকা অণিমার কাছে এসেছিলেন। পর দিন সকালে আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়েন সঞ্জীব। গৃহকর্তার রক্তচাপ মাপতে আসা যুবক তাঁকে পরীক্ষা করে চমকে ওঠেন। জানান, মারা গিয়েছেন। স্থানীয় চিকিৎসক এসেও একই রায় দেন। খবর পেয়ে শান্তিপুর থেকে অণিমাদেবীর ছেলে বাবান এসেও কান্নাকাটি করে জানায়, সঞ্জীববাবু তাঁর বাবা। সন্দেহের প্রশ্ন না থাকায় সে দিন কলকাতায় দাহ করা হয় দেহ।
তারপর দু’মাস পেরিয়ে গিয়েছে। থিতিয়ে গিয়েছিল শোক। আচমকা গত বুধবার গড়িয়হাটের মিত্র বাড়িতে পুলিশ আসে। জানা যায়, পরিচয়ের আড়ালে ওই প্রৌঢ় যুগল আদপে ছিলেন প্রেমিক-প্রেমিকা। জেরায় অণিমাদেবী সে কথা কবুল করেন। পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। খোঁজ চলছে বাবান ও তাঁর এক বন্ধুরও। ডোভার টেরেসের ইলা মিত্র বলেন, “আমাদের পরিবারের এক জন হয়ে উঠেছিল সন্ধ্যা। সঞ্জীবও আসত। ওরা যে স্বামী-স্ত্রী নয় তা বোঝার উপায় ছিল না!”
কী করে রহস্য ভেদ হল? শান্তিপুরর থানার পুলিশ, তদন্তকারী অফিসার সৌরভ ভট্টাচার্য জানান, স্বামী বাড়ি ফিরছে না দেখে গত ১৪ জুলাই সঞ্জীববাবুর প্রকৃত স্ত্রী মিতা বিশ্বাস একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেছিলেন। পর দিন তাঁর ছেলে শুভজিৎ একটি অপহরণের ডায়েরি করেন। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে সঞ্জীববাবুর সঙ্গে অণিমাদেবীর পুরনো সম্পর্কের কথা। জানতে পারেন ফুলিয়ায় অণিমা ওরফে সন্ধ্যার মধ্য পঞ্চাশের স্বামী জীবিত। জানা যায়, প্রায়ই অণিমাদেবী কলকাতায় যে বাড়িতে কাজ করেন সেখানে যাতায়াত করেন সঞ্জীব। সেই খোঁজেই কলকাতায় এসে রহস্য ভেদ। অনিমাদেবীর বাড়ি শান্তিরপুর থানার ফুলিয়া সংলগ্ন পূর্ব পরেশনাথপুর। স্বামী সুভাষ চক্রবর্তী ফুলিয়ায় একটি মাংসের দোকানে কাজ করেন। অন্য দিকে সঞ্জীববাবু কল্যাণীর একটি বেসরকারী ফার্মের কর্মী। রানাঘাটের এসডিপিও আজহার এ তৌসিফ বলেন, “ওই মহিলা তার স্বামী পরিচয় দিয়ে পরিচয় দিয়ে প্রেমিককে দাহ করেছে। জেরায় সে এ কথা স্বীকার করেছে।” মৃতের ছেলে শুভজিৎ বলেন, “আমাদের বিশ্বাস বাবার মৃত্যুর পিছনে কোনও রহস্য আছে। পুলিশ এর তদন্ত করুক।” |