|
|
|
|
থিমের বিশ্বকর্মার রমরমা শিল্পশহরে |
দেবমাল্য বাগচি • হলদিয়া |
কলকারখানার শহরে যন্ত্রের ঘড়ঘড়ে আওয়াজ, চিমনি থেকে বেরোনো আগুন, বাস্প- এ সবই প্রাত্যহিক ছবি। কিন্তু এর মাঝেই চলে অপেক্ষা, এক পুজো পেরিয়ে অন্য পুজো আসার। শারদোৎসব তো বটেই কিন্তু তারও আগে দেব কারিগরের আরাধনায় মেতে ওঠে এ শহর। এ বছরও তারই প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। মণ্ডপ থেকে মূর্তি, ‘থিম’ মিলিয়ে চোখধাঁধানো আলো, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সবেরই তোড়জোর তুঙ্গে।
হলদি নদীর পাড়ের এ শহরে শিল্প বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বেড়েছে পুজোর সংখ্যা। বেড়েছে জাঁকজমকও। ছোটবড় মিলিয়ে অন্তত শ’চারেক বিশ্বকর্মা পুজো হয় এখন। ‘বিগ বাজেটের’ পুজোগুলো তো রীতিমত দুর্গা পুজোকেও হার মানায়।
এ বছর হলদিয়া রিফাইনারির ১ নম্বর গেটে দুটি পুজোর প্রস্তুতি চলছে। একটি স্থায়ী কর্মচারিদের অন্যটি ঠিকাদার কর্মচারিদের। ঠিকাদার শ্রমিকদের পুজোর বাজেট ১৫ লক্ষ টাকা। তালপাতা, খড় ও বাঁশকাঠি দিয়ে ঝাড়খণ্ডের একটি মন্দিরের আদলে তৈরী হচ্ছে মণ্ডপ। |
|
তমলুকের হাসপাতাল মোড়ে পার্থপ্রতিম দাসের তোলা ছবি। |
দেব কারিগরের মূর্তি তৈরি করছেন বালিচকের শিল্পী কুশধ্বজ বেরা। পুজো কমিটি থেকে জানানো হয়, পুজোয় অতিরিক্ত খরচ না করে বাজেটের অধিকাংশ টাকা সামাজিক কাজে ব্যায় করা হবে। কমিটির কর্মকর্তা স্বপন নস্কর, শ্রীদেব মণ্ডল, সত্য সাহুরা জানান, প্রায় ২ হাজার দুঃস্থকে বস্ত্রবিতরণ, ৬০ জন কৃতী পড়ুয়াকে সংবর্ধনা ও আর্থিক সাহায্য করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। স্থায়ী কর্মচারিদের পুজো মণ্ডপটি মাটির ও চাঁচ ও ছত্তিশগড়ের বিশেষ টালিতে শিল্পী সুসময় আদকের হাতে তৈরি হয়েছে। মেচেদার শিল্পী ধীমান মাইতির তৈরী মূর্তিতেও থাকছে ধান ও খড়। প্রায় আড়াই লক্ষের বাজেটে নগর সভ্যতায় গ্রামীন পরিবেশ ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে বলে কমিটির সদস্যরা।
এক্সাইড ইন্ডিয়ার পুজো প্রতি বছরের মতোই এ বছরও জমকালো। পুজো কমিটির অন্যতম সম্পাদক পবিত্র দাস জানান, ৬ লক্ষ টাকার বাজেটের সিংহভাগই খরচ করা হবে রাজস্থানের একটি মন্দিরের আদলে ঝিনুক ও মার্বেলের মণ্ডপ তৈরিতে। কতবেলের খোলা দিয়ে মূর্তি নির্মাণ করবেন মহিষাদলের শিল্পী কালিপদ জানা। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে কর্মচারিদের কৃতী ছেলেমেয়েকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। থাকবে কলকাতার শিল্পীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তাঁরা জানান, মানুষের ঢল সামলাতে পুজোর উদ্বোধন রবিবারই করা হবে। |
|
হলদিয়ায় ছবি তুলেছেন আরিফ ইকবাল খান। |
হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালের ‘বিগ-বাজেটে’র পুজো দর্শনার্থী টানতে প্রতি বছরই জৌলুসের অভাব রাখেনা। ঠিকাদার, শ্রমিক ও ট্রান্সপোর্টারদের এই পুজোয় দিল্লির অক্ষরধাম মন্দিরের ধাঁচে সোনালি চট দিয়ে তৈরী হচ্ছে মণ্ডপ। মূর্তিতেও রয়েছে থিমের কারুকার্য। সম্পূর্ন ঝিনুক দিয়ে স্থানীয় শিল্পী ছবিলাল মান্না গড়েছেন বিশ্বকর্মার মূর্তি। ৮ লক্ষের এই পুজো ঘিরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ১৬টি স্কুলের ৩ জন করে কৃতীকে বৃত্তি প্রদান-সহ নানা সামাজিক ক্রিয়াকলাপ থাকছে বলে জানান কর্মকর্তা দীপঙ্কর দাস, অনুপ সামন্তরা।
জাপানি সংস্থা মিৎসুবিশিতে স্থায়ী কর্মীদের তিন লক্ষের পুজোটি আবার সাবেকি। মণ্ডপ থেকে মূর্তি সবেতেই সাবেক ঢঙের ছোঁয়া রাখছেন তাঁরা। তবে অস্থায়ী কর্মীদের ৭ লক্ষ বাজেটের পুজোয় রয়েছে থিমের রকমারি। কারুকার্য করা মুক্তোর মূর্তিটি আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। শিল্পশহরের পরিবেশ সচেতনতা বাড়াতে এ বার পাঁচশো চারাগাছ দান করা হবে বলে পুজো কমিটির সুব্রত জানা জানান। থাকবে ক্যুইজ, ক্যারাম প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সবই।
এর বাইরেও দুর্গাচকের ট্যাঙ্কার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, সাউথ এশিয়ান পেট্রোকেমিক্যাল, ইসিএল, রুচি সোয়া অয়েল, আরডিবি রসায়ন, টাটা কেমিক্যাল, হুগলী মেটকোক-এর পুজোও এবার ধুমধাম করে হবে বলেই জানিয়েছেন পুজো কমিটির কর্মকর্তারা। এভাবেই নানা উপাদানে, ভাবনায়, যত্নে রক্ত মাংসের বিশ্বকর্মাদের হাত ধরেই প্রাণ পাচ্ছেন দেবতা বিশ্বকর্মা। |
|
|
|
|
|