পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসত
সার্ভিস রোড
অবহেলার পথ
যেখানে-সেখানে পিচ উঠে গিয়ে কাদায় মাখামাখি রাস্তা। জায়গায়-জায়গায় তৈরি হওয়া খানাখন্দে জল জমে টইটম্বুর। রাস্তা জুড়ে বাড়ি তৈরির নির্মাণ সামগ্রীর পাহাড়। ফলে গাড়ি চলাচল তো দূর অস্ৎ, ঠিকমতো হাঁটাও যায় না। বহু দিন ধরে এ ভাবেই পড়ে রয়েছে নিউ টাউনগামী মেজর আর্টারিয়াল রোডের চিনার পার্ক থেকে সিটি সেন্টার পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তার দু’ধারের সার্ভিস রোড। বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় সার্ভিস রোডের ধারের কংক্রিটের বুলেভার্ড উপড়ে গুঁড়িয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাস্তার মেরামতির নাম-গন্ধও নেই। এ ব্যাপারে হিডকোরও নজর নেই। অন্য দিকে, রাস্তা দখলমুক্ত করার দায়িত্ব কার, তা নিয়ে শুরু হয়েছে চাপানউতোর।
ভিআইপি রোড থেকে নিউ টাউনগামী ৬ লেনের (দু’দিকে তিন লেন করে) মেজর আর্টারিয়াল রোডের দু’ধারে রয়েছে কমবেশি ২৫ ফুট চওড়া দু’টি সার্ভিস রোড। কয়েক ফুট অন্তর ফুট দুয়েক উঁচু বুলেভার্ড তৈরি করে সার্ভিস রোড আর ৬ লেনের রাস্তাকে পৃথক করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, ৬ লেনের বাস-রাস্তা দিয়ে বড় গাড়ির সরাসরি বেরিয়ে যাওয়ার কথা। সাইকেল, ভ্যান, রিকশা, অটো এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় যাতায়াতকারী ছোট গাড়িগুলির চলার কথা সার্ভিস রোড দিয়ে।
মেজর আর্টারিয়াল রোডের দু’পাশে বেশ কিছু জনবসতি রয়েছে। গড়ে উঠেছে বহু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। মেজর আর্টারিয়াল রোড থেকে ওই সব এলাকায় যাতায়াতের জন্য বিভিন্ন জায়গায় দুই বুলেভার্ডের দূরত্ব বাড়িয়ে তৈরি করা হয়েছে ‘কাট আউট’। দুর্ঘটনা ও যানজট এড়াতে পরিকল্পিত ভাবে মেজর আর্টারিয়াল রোড নির্মাণ করেছে হিডকো। কিন্তু অভিযোগ, হিডকোর উদাসীনতায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই পথের দু’পাশের সার্ভিস রোড ক্রমেই বেদখল হয়ে পড়েছে। এ দিকে, মেজর আর্টারিয়ালে চলাচলকারী গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। দু’পাশের সার্ভিস রোড বেহাল ও বেদখল হয়ে যাওয়ায় মূল রাস্তায় গাড়ির চাপও বাড়ছে।
পিচ উঠে, জল জমে সার্ভিস রোডের অবস্থা এমনিতেই বেহাল। যেটুকু অংশ ভাল রয়েছে, সেখানেও স্তূপীকৃত করা হচ্ছে ইট, বালি, স্টোন চিপ্স। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে সার্ভিস রোডে প্রাতর্ভ্রমণে বেরোন। অনেক সাইকেল চলে। কিন্তু রাস্তার বেহাল দশার কারণে বাধ্য হয়েই মূল বাস রাস্তা ব্যবহার করতে হয় তাঁদের। এর জেরে বাড়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও।
রাস্তার ধারের বুলেভার্ডগুলি ভারী গাড়ির ধাক্কায় উপড়ে যায়। কিছু দিন পরে সেগুলি উধাও হয়ে যায়। ফলে তৈরি হয় নতুন নতুন ‘কাট আউট’। স্থানীয় সূত্রে খবর, যে ভারী গাড়িগুলি ইট-বালি খালি করার জন্য সার্ভিস রোডে ঢোকে, সেগুলির ধাক্কাতে বেশ কিছু বুলেভার্ড ভেঙেছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, চালকেরা মূল রাস্তার যেখান থেকে খুশি সার্ভিস রোডে ঢোকার জন্য ইচ্ছাকৃত ভাবে বুলেভার্ডগুলি ভেঙে ফেলতে চান।
উপনগরীর দিক থেকে ভিআইপি-র দিকে মেজর আর্টারিয়াল রোডের উপর দিয়ে নিউ গড়িয়া থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত মেট্রো সম্প্রসারণের কাজ হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে সার্ভিস রোড দু’টির এই অংশে এখনও কাজ শুরু হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য: যত দিন মেট্রোর কাজ শুরু না হচ্ছে, তত দিন সার্ভিস রোড খালি থাকলে হাঁটার এবং গাড়ি চলাচলের সুবিধা হয়। কিন্তু জমিয়ে রাখা ইট-বালির জন্য সেটাও হয়ে ওঠে না। স্থানীয় নির্মল মণ্ডলের কথায়: “মেরামতি হচ্ছে না বলে সার্ভিস রোডে গাড়ি চলাচল কমে যাচ্ছে। এই সুযোগে রাস্তা জুড়ে চলছে প্রোমোটার-সিন্ডিকেট। নির্মাণ সামগ্রীর স্তূপের জন্য হাঁটা যায় না। সার্ভিস রোড ছেড়ে বাস-রাস্তা দিয়েই সাইকেল নিয়ে চলতে হচ্ছে। দুর্ঘটনার ভয় সব সময়েই থাকে। কিন্তু হিডকো কোনও ব্যবস্থা নেয় না।”
ট্রাফিক পুলিশের এক কর্তা বলেন, “মেজর আর্টারিয়াল রোডের এক পাশ দিয়ে মেট্রো সম্প্রসারণের কাজ হবে। কিন্তু তার আগে পর্যন্ত সার্ভিস রোড দখলমুক্ত থাকলে এবং তার মেরামতি হলে মূল রাস্তায় গাড়ির চাপ কমবে। দুর্ঘটনার আশঙ্কাও কমবে।” বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, হিডকোর নজরদারির অভাবে সার্ভিস রোড জুড়ে দখলদারি বাড়ছে।
যত্রতত্র দোকানপাট বসছে। মদ্যপ লোকজনের দুষ্কর্মও বাড়ছে।
এ বিষয়ে হিডকোর জেনারেল ম্যানেজার (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) কৃষ্ণেন্দু বসাক বলেন, “সময়ে সময়ে হিডকো রাস্তা মেরামতির কাজ করে। এখন রাস্তার গালিপিট থেকে জল বের করা হচ্ছে। তাই কাদা হচ্ছে। তবে রাস্তা দখলমুক্ত করার দায়িত্ব নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি-র।” এ দিকে, নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি-র চিফ এগ্জিকিউটিভ অফিসার গোপাল ঘোষ বলেন, “ওই রাস্তার ন’পাড়া পর্যন্ত আমাদের এলাকা। তার পর থেকে চিনার পার্ক পর্যন্ত দখলমুক্ত করার দায়িত্ব পুরসভার। আমাদের এলাকায় সার্ভিস রোডের কী অবস্থা, খোঁজ নিয়ে দেখব।” রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার চেয়ারম্যান সিপিএমের তাপস চট্টোপাধ্যায় অবশ্য
বলেন, “এই রাস্তার দখলদারি উচ্ছেদের দায়িত্ব পুরসভার নয়। তবে এ ব্যাপারে কোনও সহযোগিতার দরকার হলে পুরসভা তা অবশ্যই করবে।”

ছবি: সুদীপ ঘোষ




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.