পূর্ব কলকাতা
দুর্ভোগ চলছেই
খন্দনগরী
ইল্যান্ড ঘুরতে গিয়েই চালক দেখলেন সামনে বিরাট গর্ত। ব্রেক কষলেও শেষরক্ষা হল না। গাড়ির ক্ষতি তো হলই, সঙ্গে চালক ও আরোহী দু’জনেই কমবেশি আহত হলেন। মধ্য কলকাতার বাসিন্দা সন্তোষ গুপ্তের অভিজ্ঞতা এমনই। ঘটনাস্থল বিধাননগরের তিন নম্বর আইল্যান্ড।
কিন্তু এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। গত কয়েক মাসে বিধাননগরের রাস্তার বেহাল দশা। উপরন্তু দু’টি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা দীর্ঘ দিন ধরে মেরামতির অভাবে বেহাল এবং বিপজ্জনক অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, মেরামতির কোনও নামগন্ধই নেই। অবিলম্বে অন্তত অস্থায়ী ভাবে প্যাচওয়ার্কের কাজ করুক প্রশাসন। বিধাননগর পুরপ্রশাসন থেকে নগরোন্নয়ন দফতর জানিয়েছে, বর্ষার মরসুম শেষ হলে রাস্তা মেরামতির কাজ শুরু হবে। তবে পুজোর আগে আপৎকালীন ব্যবস্থায় অস্থায়ী ভাবে মেরামতের কাজ করা হবে।
চার নম্বর ট্যাঙ্ক আইল্যান্ড থেকে কোয়ালিটি বাসস্টপের আগে পর্যন্ত রাস্তায় ভূগর্ভস্থ পাইপলাইনের কাজ চলছিল দীর্ঘ দিন ধরে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, কাজ শেষ হওয়ার পরেও স্রেফ ইটের টুকরো দিয়ে খানাখন্দ ভরাট করা হয়েছে। এর জেরে একটি লেন দিয়েই দু’দিকের গাড়ি চলছে। দীর্ঘ দিন ধরে এই অবস্থা চললেও রাস্তা মেরামতির কাজ শেষ করা হচ্ছে না। স্থানীয় ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তায় গাড়ির চাপ বেশি। কেএমডিএ স্যুয়ারেজ প্রকল্পের কাজ করেছে। বাসিন্দাদের সমস্যা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষকেও দ্রুত মেরামত করতে আবেদন করেছি।’’
আরও বেহাল দশা করুণাময়ী-সহ অফিসপাড়া চত্বরের। মেট্রো প্রকল্পের কাজ চলায় খোঁড়াখুড়ি করা হয়। পর্যায়ক্রমে সে রাস্তা মেরামতিও করেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ফের এই বর্ষায় সেই রাস্তারও বেহাল দশা। অফিসপাড়ার নিত্যযাত্রী বরাহনগরের বাসিন্দা সুমিত বসুর কথায়: ‘‘করুণাময়ী থেকে সেচভবন হাঁটাচলার অযোগ্য এবং বিপজ্জনক।’’
এ ছাড়াও তিন নম্বর সেক্টর এলাকায় ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেল বরাবর রাস্তার এক অংশের অবস্থাও দীর্ঘ দিন ধরেই বেহাল। ইই ব্লক থেকে রাস্তাটি সোজা ই এম বাইপাসে গিয়ে মিশেছে। রাস্তার দু’দিক থেকে কংক্রিটের কাজ হলেও মাঝে প্রায় ৮০০ মিটার অংশ পুরোপুরি ভেঙে গিয়েছে। ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে ওই রাস্তার এমনই অবস্থা। সম্প্রতি ওই রাস্তা মেরামতি বাবদ অর্থও বরাদ্দ করে নগরোন্নয়ন দফতর। পুরসভার এই কাজ করার কথা ছিল। কিন্তু আজও তা মেরামত করা হয়নি।
এ ছাড়াও বিধাননগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার একাধিক অংশে ছোট-বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। বাসিন্দাদের দাবি, বিধাননগরে গত কয়েক বছরে গাড়ির চাপ অনেক বেড়েছে। কিন্তু সে তুলনায় রাস্তার মানের পরিবর্তন হয়নি। এ বারে বর্ষা বেশি হয়নি, কিন্তু তাতেই বেহাল অবস্থা। খোলনলচে বদলে রাস্তার মান উন্নয়ন করুক প্রশাসন।
বাসিন্দাদের সংগঠন বিধাননগর (সল্টলেক) ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, ‘‘রাস্তা মেরামতের আশু প্রয়োজন। বিধাননগরের বিভিন্ন রাস্তা বিভিন্ন দফতর দেখভাল করে। দফতরগুলির মধ্যে সমন্বয় করে একটি সার্বিক ব্যবস্থা গড়ে না তুললে এই সমস্যা ফের হতে পারে।’’
তবে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (পূর্ত) অনুপম দত্ত বলেন, ‘‘বৃষ্টির জন্য রাস্তা পুরোপুরি মেরামত করা যাচ্ছে না। কাজ করলেও তাতে লাভ হবে না। বর্ষা কমে এলেই কাজ শুরু হবে।’’

ছবি: শৌভিক দে




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.