ব্যাডমিন্টন থেকে টেনিস, দাপট তারুণ্যের
অবিশ্বাস্য পাল্টা লড়াইয়ে ডেভিসে নাটকীয় জয় য়ুকির
ডেভিস কাপে ‘নতুন ভারত’-এর শুরুটা চমকপ্রদ। মহানাটকীয়! মাত্র দুটো ‘টাই’-এর অভিজ্ঞ য়ুকি ভামব্রি নিজের চতুর্থ ডেভিস কাপ সিঙ্গলসে দু’সেট পিছিয়ে পড়েও (দ্বিতীয় সেটে ‘লাভ’-এ হার!) অসাধারণ পাল্টা লড়াই দিয়ে পরের তিনটে সেট বার করে নেন কিউয়ি প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে। য়ুকি শুধু ৩-৬, ০-৬, ৬-২, ৬-৪, ৬-২ ড্যানিয়েল কিং টার্নারকেই হারালেন না, জিতলেন চণ্ডীগড়ের ভয়ঙ্কর গরমের বিপক্ষেও। দ্বিতীয় সিঙ্গলসে জোস স্ট্যাথামের বিরুদ্ধে বিষ্ণু বর্ধন ৬-২, ৬-৭ (৫-৭), ৬-৪ এগিয়ে থাকার সময় দিনের আলো কমে আসায় খেলা স্থগিত থাকায় প্রথম দিনের শেষে ভারত ১-০ এগিয়ে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে।
আঞ্চলিক গ্রুপের টাই। প্রতিপক্ষও তেমন দরের নয়। তা সত্ত্বেও যেহেতু ডেভিস কাপে র্যাঙ্কিং কোনও দিনই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নয়, সে জন্য য়ুকির প্রত্যাবর্তন শুধু দুরন্তই নয়, যথেষ্ট তাৎপর্যেরও। ১৯৯৫ থেকে মাত্র দ্বিতীয় বার ভারত ডেভিস কাপে নেমেছে লি-হেশ, দু’জনকেই ছাড়া। দলের চার তরুণের মিলিত ডেভিস কাপ টাইয়ের সংখ্যা ৫। ম্যাচের সংখ্যা ৬। ডেভিস কাপের মতো বিশাল মঞ্চের নিরিখে ‘নতুন ভারত’কে অনভিজ্ঞ বললেও সব বলা হয় না। সেখানে প্রবল চাপের মুখে য়ুকি যে ভাবে তৃতীয় সেট থেকে উঠে দাঁড়িয়ে একেবারে ম্যাচ বার করে নিয়ে থামলেন, তাতে তাঁর দুর্দান্ত ফিনিশার হয়ে ওঠার উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরির পাশপাশি টেনিসে ‘নতুন ভারতে’র সোনালি ভবিষ্যতের ইঙ্গিতও দেখতে পাচ্ছেন অনেক বিশেষজ্ঞ।
শুক্রবারটা যেন ভারতীয় খেলাধুলোতেই তারুণ্যের দাপটের দিন। চিনে যদি সতেরোর সিধু ব্যাডমিন্টনে অলিম্পিক চ্যাম্পিয়নকে হারিয়ে শোরগোল ফেলে দিয়ে থাকেন, তা হলে চণ্ডীগড়ে কুড়ির য়ুকি খাদের কিনারা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে দেশকে জয়ের সরণিতে পৌঁছে দিয়েছেন। প্রথম দুটো সেটে য়ুকিকে প্রায় শিক্ষানবীশের মতে দেখাচ্ছিল। সাইডলাইনে টিম বেঞ্চে তখন একজন লিয়েন্ডার বা একজন মহেশ, নিদেনপক্ষে একজন বোপান্নাও বসে নেই, যিনি অনভিজ্ঞ সতীর্থকে জয়ের পথ দেখাবেন, টোটকা যোগাবেন। কিন্তু প্রাক্তন জুনিয়র অস্ট্রেলীয় ওপেন চ্যাম্পিয়ন য়ুকি নিজেই পাল্টা লড়াইয়ের সঠিক সরণি খুঁজে বার করলেন। তৃতীয় সেট থেকে খেলাটাকে স্লো করলেন। লম্বা র্যালিতে বেশি গেলেন। সার্ভিসেও চেনা তীক্ষ্নতা ফিরে এল। আনফোসর্ড এরর-এর সংখ্যা অনেক কমল। সবচেয়ে বড় কথা, প্রতিপক্ষের ছন্দ নষ্ট করতে পারলেন য়ুকি। এর পাশাপাশি ম্যাচ যত গড়াল, বিদেশি প্রতিপক্ষ বছরের এই সময় উত্তর-পশ্চিম ভারতের ভয়ঙ্কর গরমে ততই কাহিল হয়ে পড়লেন। পঞ্চম সেটে টার্নারকে এক-এক সময় প্রায় দাঁড়িয়ে পড়তে দেখা গেল। তাতে অবশ্য য়ুকির কৃতিত্ব এতটুকু কমছে না। পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য তো এক সপ্তাহ ধরে চণ্ডীগড়ে পড়ে রয়েছেন কিউইরা। বরং পেশাদার সার্কিটে শীতের দেশ থেকে খেলে য়ুকিরা এসেছেন নিজেদের দেশের ডেভিস কাপে। যে জন্য শনিবার বিষ্ণুর অসমাপ্ত সিঙ্গলস পঞ্চম সেটে গড়ালে কয়েক ঘণ্টা পর ডাবলসে তাঁকে বিশ্রাম দিয়ে সনম সিংহকে খেলাবে ভারত। দ্বিবীজ শরণের পার্টনার হিসেবে।
আপাতত অবশ্য চণ্ডীগড়ে আলোচনা-আকর্ষণের কেন্দ্রে য়ুকি। তিনি স্বয়ং অবশ্য নিজের খেলার পুরোপুরি খুশি নন। “আমি যে টেনিসটা খেলি সেটা এই ম্যাচে খেলতে পারিনি। কেবল পাল্টা লড়াই আর শেষ পয়েন্ট অবধি নাছোড় ভাবে লড়াইয়ে লেগে থাকা ছাড়া। সে জন্যই ম্যাচটা বার করতে পারায় গর্ব হচ্ছে। দ্বিতীয় সেটে ০-৬ হারটা অসহ্য। তবে ওই সময় গোটা দল আমাকে দারুণ উৎসাহ দিয়েছে। সাহায্য করেছে। তৃতীয় সেটে চাইছিলাম যেন অন্তত একটা গেমও পাই। সেটা পেতে আস্তে আস্তে আত্মবিশ্বাসটাও ফিরে পেলাম। তার পরে আর পিছন ফিরে তাকাইনি,’’ বলেছেন য়ুকি।

প্রতিদ্বন্দ্বী গরমে কাহিল হয়ে পড়ায় পঞ্চম সেটে য়ুকির সুবিধে হয়েছে। তবে য়ুকির পাল্টা লড়াইটার প্রশংসা করতেই হবে। এই মুহূর্তে এটাই ভারতের সেরা ডেভিস কাপ টিম। চণ্ডীগড়ে এসে আমার সেই বিশ্বাসটা আরও হচ্ছে। লিয়েন্ডার পরের টাইয়ে দলে ফিরে এলে য়ুকি-বিষ্ণুদের অভিভাবকেরও অভাব হবে না আর। নতুন প্রজন্মের মধ্যেও জোশ আছে। য়ুকির মধ্যেই তো দেখা গেল, দেশকে টেনে নিয়ে যেতে আমাদের তরুণ প্রজন্মও ভালই তৈরি।
জয়দীপ মুখোপাধ্যায়




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.