ভরসন্ধ্যার অন্ধকার রাস্তায় ছেলেটা যখন খপ করে তাঁর হাত ধরে ফেলল, এতটুকুও না ঘাবড়ে অন্য হাতে টেনে ধরলেন ছেলেটার চুল। সঙ্গে গালে সপাটে চড়!
বছর তেইশের যুবতীটি রুখে দাঁড়াতেই জারিজুরি খতম সেই বীরপুঙ্গবের। সঙ্গে সঙ্গে পিছন ফিরে দে ছুট। ‘চোর চোর’ বলে চিৎকার করতে করতে ধাওয়া করলেন সেই যুবতীও। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা ধরে ফেলেন ওই যুবককে। জানা যায়, মেয়েটির ‘শ্লীলতাহানির চেষ্টা’ করে পালাচ্ছিল সে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে বাগনানে। পুলিশ গ্রেফতার করে প্রকাশ মণ্ডল নামে কোলাঘাটের বাসিন্দা ওই যুবককে। বাগনানে একটি কাপড়ের দোকানে সে কাজ করে। হাওড়ার পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) ভরতলাল মিনা ওই যুবতীর সাহসের তারিফ না করে পারেননি। বলেছেন, “ও রুখে দাঁড়ানোর ফলে পুলিশের কাজ অনেকটা সহজ হয়েছে। এটা সত্যিই প্রশংসনীয়।”
ওই যুবতীর বাড়ি বাগনানের বেড়াবেড়িয়া গ্রামে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূতত্ত্বে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পাওয়ার পরে তিনি ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’-এ ‘মেটামরফিক পেট্রোলজি’ নিয়ে গবেষণা করছেন।
পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ কলকাতা থেকে গবেষণার কাজ সেরে ট্রেন ধরে বাগনান স্টেশনে নামেন। সে সময়ে লোডশেডিং ছিল। স্টেশন রোড (উত্তর) ধরে বেশ কিছুটা হেঁটে আসার পরে গ্রামের রাস্তা ধরেন। এমন সময় হঠাৎই অন্ধকার ফুঁড়ে উদয় হয় এক যুবক। তাঁর সামনে এসে জানতে চায় বাড়ির ঠিকানা। ওই যুবককে তিনি চেনেন না বলেই পুলিশকে জানিয়েছেন ওই যুবতী।
এর পরেই ছেলেটি তাঁর হাত ধরে টানাটানি শুরু করে। ওই যুবতীর কথায়, “ওর মতলব বুঝতে পেরে বাঁ হাত দিয়ে চুল টেনে ধরি। ডান হাতে গালে সপাটে চড় কষিয়ে দিই।” যুবকটি তাঁকে রাস্তার ধারে ঠেলে ফেলে দৌড় দেয়। যুবতীটি বলেন, “রাস্তার ধারে ভাঙা ইট-খোয়ার উপরে পড়ে সামান্য আঘাত পাই। কিন্তু দেখলাম ছেলেটা পালাচ্ছে। আমি কোনও মতে উঠে ‘চোর চোর’ বলে ধাওয়া করি।” প্রায় আধ কিলোমিটার ছেলেটিকে তাড়া করেন তিনি। স্থানীয় মানুষ ধরে ফেলেন প্রকাশকে। তাকে টানতে টানতে নিয়ে আসেন থানায়। স্থানীয় চাল ব্যবসায়ী নাসিদুল
ইসলাম বলেন, “আমি তখন দোকানদারিতে ব্যস্ত। হঠাৎ দেখি এক যুবক দৌড়চ্ছে। পিছনে তাড়া করছেন এক তরুণী। আরও দোকানদারদের ভিড় জমে গেল। সকলে মিলে ছেলেটাকে ধরে ফেলি।”
পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতে তুললেও শুক্রবার প্রকাশ জামিন পেয়েছে। পুলিশের বক্তব্য, শ্লীলতাহানির অভিযোগ জামিনযোগ্য ধারা। ধৃত যুবকের অবশ্য দাবি, “অন্ধকারে দেখতে পাইনি। ফলে একটু ধাক্কা লেগে গিয়েছিল। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।” কিন্তু, অপরিচিত এক যুবতী খামোকা কেন তাকে ফাঁসাতে যাবেন, তার সদুত্তর প্রকাশ দিতে পারেনি।
মেয়েটির বাবা লালবাজারে কলকাতা পুলিশে কর্মরত। সাড়ে ৭টা নাগাদ তিনিও ট্রেন থেকে বাগনান স্টেশনে নেমেছিলেন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মেয়ের ফোন আসে। বাবাকে থানায় চলে আসতে বলেন ওই যুবতী। তাঁর বাবার কথায়, “থানায় আসার পরে মেয়ে আমাকে বলে, দুশ্চিন্তা কোরো না। এফআইআর লিখেছি। একবার দেখে নাও।” থানায় ছিলেন তাঁদের প্রতিবেশী, বাগনান ১ পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান চণ্ডীচরণ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “মেয়েটির সাহসের প্রশংসা করতে হয়।” বাবার সঙ্গে অনেক বার পাহাড়ে চড়েছেন ওই যুবতী। বললেন, “মেয়েদের যারা বিরক্ত করে, তারা আসলে ভিতু। ভয় না পেয়ে ঘুরে দাঁড়ালে তারা আর পালানোর পথ পায় না।” |