|
|
|
|
|
ছেলের বিরুদ্ধে বিতাড়নের মিথ্যা
নালিশ কেন, তলব বাবা-মাকেই
নিজস্ব সংবাদদাতা |
|
কুপুত্র যদি বা হয়, বাবা-মা সব সময়েই ধোয়া তুলসী পাতা হবেন, এমনটা না-ও হতে পারে। বাড়ি থেকে বাবা-মাকে বার করে দেওয়ার অভিযোগ সংক্রান্ত একটি মামলায় অন্তত এই উল্টো ছবিটাই উঠে এসেছে।
ছেলে এবং ছেলের বৌ বিষয়সম্পত্তির পুরো দখল নেওয়ার জন্য ছক কষে অত্যাচার চালিয়ে বৃদ্ধ বাবা-মাকে তাঁদেরই বাড়ি থেকে বার করে দিচ্ছে, এমন মামলা আকছার হয়। এবং এমন অভিযোগ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রায় যায় বাবা-মায়ের অনুকূলে। কোনও মামলায় পুলিশের সহায়তায় বাবা-মাকে তাঁদের ঘরে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছেলে ও বৌমাকে তলব করে তিরস্কার ও সতর্ক করে দিয়েছে আদালত। ছেলে ও ছেলের বৌয়ের বিরুদ্ধে পুলিশি ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে কিছু মামলায়। অনেক ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের ক্ষোভ নিরসনে রোজ সকালে তাঁদের প্রণাম করার জন্য পুত্র-পুত্রবধূকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।
কিন্তু শুক্রবার বেলঘরিয়ার একটি মামলায় বুড়ো বাবা-মাকেই ফের তলব করে মিথ্যা অভিযোগ করার জন্য জবাবদিহির নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।
মামলাটি কী?
বেলঘরিয়ার নন্দননগর কলোনি থেকে বীরেন্দ্র ও প্রতিভা বালা নামে এক বৃদ্ধ দম্পতি শুক্রবার বিচারপতি কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্ত ও বিচারপতি প্রসেনজিৎ মণ্ডলের ডিভিশন বেঞ্চে অভিযোগ জানান, ছেলে ও ছেলের বৌ তাঁদের বাড়ি থেকে বার করে দিয়েছে। আদালত তাঁদের দুরবস্থার বিহিত করুক। ডিভিশন বেঞ্চ আইনজীবী রামদুলাল মান্নাকে স্পেশ্যাল অফিসার হিসেবে নিয়োগ করে এবং পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে বীরেন্দ্রবাবুর ছেলে বিশ্বজিৎ ও ছেলের বৌ রিমা বালাকে ঘর থেকে বার করে দিয়ে মা-বাবাকে বাড়িতে ফেরানোর ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেয়।
কিন্তু এই নির্দেশের কিছু পরেই হাইকোর্ট জানতে পারে, বীরেন্দ্রবাবুর বাড়িতে দু’টি পাকা ঘর এবং একটি টিনের চালের ঘর আছে। একটি ঘরে ছেলে ও ছেলের বৌ তাদের এক বছরের শিশুকন্যাকে নিয়ে থাকে। অন্য দু’টি ঘর মা-বাবাই ব্যবহার করেন। বাবা-মা নিজেরাই সেই দু’টি ঘরে তালা দিয়ে অন্যত্র চলে গিয়ে ছেলের নামে অভিযোগ জানিয়েছেন হাইকোর্টে। এই খবর পেয়েই ডিভিশন বেঞ্চ সরকারি আইনজীবী সুমন সেনগুপ্তকে পুরো বিষয়টির তদন্ত করে বিকেল ৪টেয় আদালতে সব জানাতে বলে।
সুমনবাবু এবং স্পেশ্যাল অফিসার রামবাবু বিকেলে আদালতে জানান, বিচারপতিদের নির্দেশ অনুযায়ী পুলিশ ছেলে ও ছেলের বৌকে আসবাবপত্র-সহ ঘর থেকে বার করে দিয়েছে। কিন্তু বৃদ্ধবৃদ্ধার অভিযোগ ঠিক নয়। মা-বাবাই বাড়ির দু’টি পাকা ঘরের মধ্যে একটিতে তালা লাগিয়ে আদালতে বলেছেন, ছেলে-বৌমা তাঁদের বার করে দিয়েছে। অথচ দেখা যাচ্ছে, বাড়ির বাইরে রাস্তায় খাটে শুয়ে রয়েছে বীরেন্দ্রবাবুুরই এক বছরের নাতনি!
এই রিপোর্ট পেয়ে ডিভিশন বেঞ্চ ক্ষোভ প্রকাশ করে। তারা নতুন নির্দেশ দেয়, ছেলে-বৌমা যে-ঘরে থাকত, সেখানেই আবার তাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। অন্য ঘরে থাকবেন বাবা-মা। ওই বৃদ্ধবৃদ্ধাকে মঙ্গলবার তলব করেছে হাইকোর্ট। সন্তানের বিরুদ্ধে কেন তাঁরা এই ধরনের মিথ্যা অভিযোগ এনে মামলা করলেন, সেই ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে তাঁদের। ডিভিশন বেঞ্চ সে-দিনই পরবর্তী নির্দেশ দেবে।
সন্তানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ কেন?
সরকারি আইনজীবী সুমনবাবু আদালতের বাইরে জানান, পড়শিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, ছেলে ও বৌমাকে বুড়োবুড়ি আর সহ্য করতে পারছেন না। মেয়ে-জামাইয়ের সঙ্গে ঘোঁট পাকিয়ে তাঁরা নিজের সন্তানকেই বাড়ি থেকে দূর করে দিতে চান। পিছনে আর কোনও গল্প আছে কি না, পুলিশ তা দেখছে। মামলার পরবর্তী শুনানিতে সেটা স্পষ্ট হবে। |
|
|
|
|
|