|
|
|
|
শ্রদ্ধা ও মমতায় অভিনন্দিত রাষ্ট্রপতি ‘প্রণবদা’ |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
শপথগ্রহণের দিন সংসদের সেন্ট্রাল হল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে একেবারে শেষ প্রান্তে ‘প্রণবদা’ ডাক শুনে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন নতুন রাষ্ট্রপতি। সবিস্ময় প্রশ্ন ছিল, “তুই! কোথায় ছিলি?” নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সেই ‘প্রণবদা’কেই আবদার শুনতে হল, “এত প্রোটোকল মাথায় থাকে না। খালি মনে হয়, সব সেই আগের মতো আছে। আমি আপনাকে প্রণবদাই বলছি। বলতে পারি তো দাদা?” মঞ্চে বসে সস্নেহ সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়লেন ‘বাংলার ভূমিপুত্র’।
প্রথম বঙ্গসন্তান রাষ্ট্রপতির প্রথম কলকাতা সফরে বাঙালি আবেগের এক বৃত্ত কোথায় যেন সম্পূর্ণ হল। প্রোটোকলের ‘আড়ষ্টতা’ ডিঙিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “ঘরের ছেলে ঘরে এসেছে!” রাষ্ট্রপতি-সুলভ গাম্ভীর্য সরিয়ে প্রণব মুখোপাধ্যায় সলজ্জ ঘোষণা করলেন, “আমি আক্ষরিক অর্থেই আপ্লুত!” শিল্প, সংস্কৃতি, চলচ্চিত্র, বাণিজ্য, ক্রীড়া জগতের প্রথিতযশা বাঙালি প্রতিনিধিরা যখন সংবর্ধনার স্মারক তুলে দিলেন বাঙালি রাষ্ট্রপতির হাতে। |
বাংলার ঘরে সেই ভাই-বোন...
দাদাকে সেলাম: রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সংবর্ধনা দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার, নেতাজি ইন্ডোরে। ছবি: রাজীব বসু |
রাষ্ট্রপতির নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে আগাগোড়া বাঙালি মোড়কে বেঁধে দিয়েছিল মমতার রাজ্য সরকার। নিজের পছন্দ করা রবীন্দ্রনাথের মূর্তি, ফেলু মোদকের তৈরি ‘বাংলার মাটি, বাংলার প্রাণ’ খোদাই করা দু’কেজির সন্দেশ, উত্তরীয়, ধুতি-পাঞ্জাবি দিয়ে রাষ্ট্রপতিকে সংবর্ধিত করলেন মুখ্যমন্ত্রী। ‘ঘরের ছেলে’ও কি সাংবিধানিক প্রধানের পদ-জনিত আনুষ্ঠানিকতা থেকে একটু মুক্তি খুঁজছিলেন না? নইলে দিল্লি থেকে বিমানে ওঠার সময়ে যাঁর পরনে ছিল ইদানীং কালের পরিচিত শেরওয়ানি, দমদমে নামা থেকে নেতাজি ইন্ডোরে সভা সর্বত্র তিনি কেন আবির্ভূত হবেন বহুকালের চেনা সেই ধুতি-পাঞ্জাবি আর সাদা চটিতে?
মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগেই সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, সুপ্রিয়া দেবী, কল্যাণী কাজী, যোগেন চৌধুরী, শুভাপ্রসন্ন থেকে শুরু করে সুরঞ্জন দাস, সত্যব্রত গঙ্গোপাধ্যায়, সঞ্জীব গোয়েন্কা, জগমোহন ডালমিয়ারা একের পর এক স্মারক-উপহার তুলে দিলেন রাষ্ট্রপতির হাতে। কলকাতা এবং বাঙালির অনিবার্য আবেগ আরও ধরা পড়ল সবুজ-মেরুন, লাল-হলুদ আর সাদা-কালো উত্তরীয় প্রণববাবুর গলায় উঠতে। কলকাতা ময়দানের তিন সাবেক প্রধানের তিন সচিব অঞ্জন মিত্র, শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত এবং জামির মনজর নিজেদের ক্লাবের প্রীতি-স্মারক তুলে দেওয়ার সময়েই স্টেডিয়ামে হাততালির গর্জন প্রবলতম হল! দার্জিলিঙের মারুনি নৃত্য, জঙ্গলমহলের আদিবাসী নাচ, পুরুলিয়ার ছৌ এবং শেষে রবীন্দ্রসঙ্গীত নির্ভর ‘থিম’ নৃত্যে সাজানো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করলেন রাষ্ট্রপতি। |
লালে পা: প্রথা মেনেই স্বাগত। বৃহস্পতিবার কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে লাল কার্পেট বদলে সবুজ কার্পেট পেতে
রাজ্যপালকে স্বাগত জানানো হয়েছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের চাপে। প্রশ্ন ওঠে, এর পর রাষ্ট্রপতিকেও কি হেঁটে
আসতে হবে সবুজ কার্পেটের উপর দিয়ে? শুক্রবার কলকাতা বিমানবন্দরে কিন্তু রাষ্ট্রপতির জন্য
ছিল চিরাচরিত লাল কার্পেটেরই উষ্ণ অভ্যর্থনা। দেশকল্যাণ চৌধুরীর তোলা ছবি। |
মুখ্যমন্ত্রীকে কপট ‘চ্যালেঞ্জ’ ছুড়ে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন বলেছিলেন, প্রণববাবু শুধু বাংলারই নন, গোটা দেশের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। রাষ্ট্রপতি হিসেবে সংবিধান রক্ষার দায়িত্ব ব্যাখ্যা করতে করতেই প্রণববাবুর মন্তব্য ছিল, “এত বছর এখানে রাজনীতি করেছি। অনেককেই প্রথম নামে ডাকলে অত্যুক্তি হয় না!” সামনের সারিতে রাজ্য মন্ত্রিসভার একঝাঁক সদস্যের কারও কারও দিকে প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত ছিল কি তাতে? সে অতীতে পর্দা টানতে মুখ্যমন্ত্রী আগেই বলেছিলেন, প্রণববাবুকে রাষ্ট্রপতি পেয়ে বাংলার কত ‘অহঙ্কার’!
এই প্রণববাবুকেই ভোট দিয়েছিলেন ‘ভারাক্রান্ত হৃদয়ে’? নেতাজি ইন্ডোরে পুলিশ বিউগলে কোথায় চাপা পড়ে গেল সে সব পুরনো ‘রাজনীতি’! |
|
|
|
|
|