বিদেশি লগ্নির সবুজ সঙ্কেতে খুশি কিংফিশার
দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় ছিলেন। এ বার হাসি ফুটেছে বিজয় মাল্যর মুখে।
শুক্রবার আর্থিক সংস্কারের লক্ষ্যে একাধিক সিদ্ধান্তের মধ্যে বিমান পরিবহণে বিদেশি বিমান সংস্থাকে ৪৯% লগ্নির অনুমতিও দিয়েছে কেন্দ্র। এই ঘটনায় বিজয় মাল্য যে খুশি, সেটা সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে টুইটারে তাঁর মন্তব্যেই স্পষ্ট: সরকার সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে বিমান পরিষেবায় সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু বলেননি তিনি। ঘনিষ্ঠ মহলে শুধু বলেছেন, “তড়িঘড়ি কিছু বলতে চাই না। অনেক কাজ বাকি।”
এখন প্রশ্ন, বিমান পরিষেবায় বিদেশি বিমান সংস্থাকে লগ্নির সুযোগ দিলে কি শুধু বিজয় মাল্যের সংস্থা কিংফিশারই উপকৃত হবে? অন্য কোনও সংস্থা কি এই সিদ্ধান্ত থেকে লাভ তুলতে পারে না? বিমান পরিষেবার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পারে। তাঁরা মনে করছেন, ভারতের বিমান পরিবহণের ক্ষেত্রেই এ বার বড়সড় পরিবর্তন আসতে চলেছে। এক বিশেষজ্ঞের কথায়, “এত দিন ধরে আমরা বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে শুধু অনুমানই করে যাচ্ছিলাম। এ বার নির্দিষ্ট করে আলাপ-আলোচনার সুযোগ চলে এল।” সে ক্ষেত্রে শুধু কিংফিশার কেন, অন্য যে কোনও বিমান সংস্থাই এই পথে হাঁটতে পারে, মনে করেন তিনি।
কিন্তু ইন্ডিগোর মতো সংস্থা, ভারতীয় আকাশের অনেকটাই যাদের দখলে, তারা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে একমত নয়। বরং বিমান পরিবহণে বিদেশি লগ্নির প্রয়োজন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ইন্ডিগো। চূড়ান্ত আর্থিক সঙ্কটেও নিজেদের দক্ষতায় লাভ করেছে ইন্ডিগো। শুক্রবার কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের পরে এ নিয়ে মুখ খোলেননি সংস্থার প্রেসিডেন্ট আদিত্য ঘোষ। সংস্থার সঙ্গে যুক্ত কর্তাদের মতে, নিয়মিত লোকসানে চলা সরকারি সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়ার ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির পথে হাঁটবে না সরকার। অন্য কোনও সংস্থাই বিদেশি লগ্নির জন্য দাবি তোলেনি। ফলে শুধুমাত্র কিংফিশারকে বাঁচাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল।
সম্প্রতি ইন্ডিয়ান চেম্বারের এক সভায় যোগ দিতে কলকাতায় এসেছিলেন ইন্ডিগো-কর্তা রাজীব ভাটিয়া। ভাটিয়ার বক্তব্য ছিল, বিশ্ব জুড়েই বিমান পরিবহণ ব্যবসা কিছুটা দোলাচলের মধ্যে দিয়ে চলছে। এই পরিস্থিতিতে এ দেশে বিদেশি লগ্নি কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে তাঁদের মনে সংশয় রয়েছে। তাঁর প্রশ্ন ছিল, বিদেশি বিনিয়োগ যদি নতুন দক্ষতাই না আনতে পারে, তা হলে তার যৌক্তিকতা কোথায়? জোর দেন অযথা বাহুল্য না দেখিয়ে দক্ষ ভাবে ব্যবসা পরিচালনার উপর। উদাহরণ দিয়ে বলতে চেয়েছিলেন, তাঁরা কিন্তু দক্ষ ভাবে ব্যবসা পরিচালনা করেই সাফল্য পাচ্ছেন।
কিংফিশারের ক্ষেত্রে ছবিটা ভিন্ন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাদের বিমান বসে গিয়েছে। কমেছে উড়ান সংখ্যা। কর্মীরা নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন না। এই অবস্থায় কিংফিশারের এক কর্তার বক্তব্য, “আজকের সিদ্ধান্তের পরে আশা করি তাড়াতাড়ি বসে যাওয়া বিমানগুলিকে আবার আকাশে ওড়াতে পারব।” সংস্থা সূত্রের খবর, কিংফিশারে যে বিদেশি সংস্থাগুলি বিনিয়োগ করবে বলে ইতিমধ্যেই রাজি হয়েছে, এ বার তাদের সঙ্গে আলোচনা চালাতে সুবিধা হবে।
অনেকেই বলছেন, কিংফিশার তার প্রথম উড়ান থেকেই যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্যকে গুরুত্ব দিয়েছিল। বিজয় মাল্য জানিয়েছিলেন, তাঁর সংস্থা উচ্চবিত্তদের জন্য বিমান পরিষেবা চালু করেছে। তাই ভাল খাবার, ভাল আসন, বিমানবন্দরে বিলাসবহুল লাউঞ্জ করা হয়। কিন্তু সস্তার বিমান সংস্থার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমে টিকিটের দাম কমাতে বাধ্য হন বিজয়। যদিও পরিষেবার সঙ্গে আপস না করায় খরচ কমেনি। ফলে শুরু হয় লোকসান। ক্যাপ্টেন গোপীনাথের কাছ থেকে সস্তার বিমান সংস্থা ডেকান কিনে বিজয় ‘কিংফিশার রেড’ নামে উড়ান চালাতে শুরু করেন। ভেবেছিলেন, সস্তা ও বিলাসের সংমিশ্রণ করে তিনি টিকে থাকবেন। কিন্তু, তা হয়নি। স্পাইসজেট, বিশেষ করে ইন্ডিগো এসে ভারতের আকাশের সিংহভাগ দখল নিয়ে নেয়। কিংফিশারের যাত্রী সংখ্যা কমতে শুরু করে।
এখন বাইরে থেকে টাকা ঢালা না হলে কিংফিশারের টিকে থাকাই সমস্যার। মাঝে নিজের পানীয় সংস্থা ইউবি গ্রুপ থেকে টাকা ঢেলে পরিস্থিতি সামাল দিতে চান বিজয় মাল্য। পারেননি। তাই তাকিয়ে ছিলেন বিদেশি বিনিয়োগের দিকে। তাঁর দাবি অনুযায়ী, কয়েক জন লগ্নিকারী রাজিও হয়েছেন।
দেশের আর এক বড় বেসরকারি বিমান সংস্থা জেট কিন্তু মধ্যপন্থী। বিশ্ব জুড়ে আর্থিক সঙ্কটে পড়ে জেটও। কিন্তু, নিজেদের অবস্থান বদলে তা সামলে উঠেছে নরেশ গয়ালের সংস্থা। শুক্রবার বিদেশি লগ্নির সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পরে সংস্থার মুখপাত্র শুধু বলেন, “কেন্দ্রের সব ধরনের সিদ্ধান্তকেই আমরা স্বাগত জানাব।” পরে জেট বিদেশি লগ্নির পথে হাঁটবে কি না তা এখনও অনিশ্চিত।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.