|
|
|
|
বিকল্প অস্পষ্ট, প্রতিবাদের ফায়দা নিতে পথে সবাই |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
প্রতিবাদে রাতারাতি পথে নেমে পড়েছে রকমারি রাজনৈতিক দল। সাধারণ মানুষের ‘হয়রানি’র প্রতিবাদ কর্মসূচির ধাক্কায় ভোগান্তি হচ্ছে আম জনতারই! কিন্তু দেশের অর্থনীতির রুদ্ধ গতির পুনরুদ্ধার ঘটাতে ডিজেলের দাম বাড়ানো বা রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি ছাঁটাইয়ের সুনির্দিষ্ট ‘বিকল্প’ কী হতে পারত, তার কোনও স্পষ্ট জবাব প্রতিবাদী রাজনৈতিক দলগুলির কারও কাছেই প্রায় নেই!
তেল সংস্থাগুলির ধারাবাহিক ভাবে আয় কম (আন্ডার রিকভারি) হওয়ার ঘটনা ঠেকানো যাবে কী ভাবে, তার বিশেষ কোনও ব্যাখ্যা মিলছে না কেন্দ্রীয় সরকারের শরিক তথা রাজ্যের প্রধান শাসক দল তৃণমূলের তরফে। ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ বিজেপি-ও। সিপিএম এবং এসইউসি অবশ্য তাদের মতো করে ‘বিকল্প’ রাস্তা বাতলাচ্ছে। কিন্তু সেই পথ কতটা ‘বাস্তবসম্মত’, তা নিয়ে আবার প্রশ্ন রয়েছে অর্থনীতি ও বাণিজ্য জগতের।
তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবারও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ও রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি কমানোর প্রতিবাদ করে ফেসবুকে লিখেছেন, দেশে ও দেশের বাইরে জমা-থাকা বিপুল পরিমাণ কালো টাকা আদায় করে কেন্দ্র তা উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করতে পারে। যাবতীয় কর আদায়ের দায়িত্ব কেন্দ্রের বদলে রাজ্যের হাতে তুলে দেওয়ার সুপারিশ করে মমতা লিখেছেন, ‘এখন কেন্দ্র কর বাবদ যে রাজস্ব নিয়ে যাচ্ছে, তা রাজ্যকে আদায় করার অনুমতি দেওয়া হোক। সেটা হলে ভর্তুকির পথে মানুষকে রেহাই দেওয়ার উপায় রাজ্যের থাকবে’। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা রেলমন্ত্রী মুকুল রায় বলেছেন, “ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের উপর বোঝা আরও বাড়বে। দেশের আর্থ-সামাজিক দায়বদ্ধতা সরকারকে পালন করতেই হবে।” কিন্তু তেল সংস্থাগুলির ‘আন্ডার রিকভারি’র টাকা আসবে কী ভাবে? মুকুলবাবুর জবাব, এই বিষয়ে দলে আলোচনা করে পরে বলা যাবে। |
|
অভিনব প্রতিবাদ: গ্যাসের দাম বাড়ার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ বিজেপির।
শুক্রবার হাওড়া সেতুতে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার |
কী হলে কী হবে, সেই কল্পনায় দেশের অর্থনীতির যে বসে থাকার মতো অবস্থা নেই, সেই ‘সত্য’ এ দিনই খোলসা করেছেন মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া। যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যানের দাবি, বৃদ্ধির হার ফের ৮%-এর উপরে নিয়ে যেতে ডিজেলের দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় ছিল না। কেন্দ্রের এই ‘সঠিক সিদ্ধান্তে’র ফলে এসঅ্যান্ডপি, ফিচের মতো মূল্যায়ন সংস্থাগুলির কাছে ভারতের অর্থনীতি সম্পর্কে ‘ইতিবাচক বার্তা’ পৌঁছবে। যা এই মুহূর্তে একান্ত জরুরি। তা ছাড়া, চিরকাল তেল সংস্থাগুলিকে মাত্রাছাড়া ভর্তুকি জুগিয়ে যাওয়াও তো সম্ভব নয়, সাফ বলেছেন তিনি। তাঁর কথায়, “ধীরে ধীরে তেলের দাম বাজারের হাতে ছেড়ে না-দিলে এক সময় দেউলিয়া হয়ে যাবে সংস্থাগুলি!”
মন্টেকের মতে, দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বৃদ্ধির হার ৮.২%-এ নিয়ে যাওয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা তাঁরা নিয়েছেন, তার জন্য শিল্পমহলকে ভরসা জোগানো জরুরি। ডিজেলের দাম বাড়িয়ে সেই ‘বার্তা’ দেওয়া গিয়েছে বলেই মনে করছেন তিনি। সাম্প্রতিক কালের মধ্যে ‘নজিরবিহীন’ ভাবেই ডিজেলের দাম লিটারে ৫ টাকা বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। তেল আমদানির উপরে নির্ভরশীল অন্য দেশগুলিও এই একই পথ বেছে নিয়েছে বলে জানাচ্ছেন মন্টেক। সেই সঙ্গেই তাঁর ‘আশ্বাস’, “ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে কিছু কিছু জিনিসের দাম হয়তো বাড়বে। কিন্তু তা মাত্রাছাড়া হবে না।”
এই ব্যাখ্যার সঙ্গে একেবারেই সহমত না-হয়ে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র পাল্টা বলছেন, “তেল সংস্থাগুলির ব্যালান্স শিট এই লোকসানের দাবি সমর্থন করে না! তা ছাড়া, এই পথে গিয়ে আমাদের অর্থনীতি ‘ডাব্ল ডিজিট’ বৃদ্ধিতে পৌঁছতে পারবে বলে বহু আগে থেকেই বলা হচ্ছে। এই ইউপিএ-২ সরকারের আমলেই তো কত বার পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি হল। পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়েছে কী?” সিপিএমের যুক্তি, তেল আমদানির পরিমাণের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে কর আদায়ের হার পুনর্বিন্যাস করে মানুষকে কিছুটা ‘রেহাই’ দেওয়া সম্ভব। তেল আমদানির উপরে সম্পূর্ণ নির্ভরশীল না-থেকে দেশের তৈল-সম্পদে পর্যায়ক্রমে গুরুত্ব বাড়ানোর পুরনো দাবিও বহাল রাখছে তারা।
বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের বক্তব্য, “দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে এলে তার পরে সরকার ভর্তুকি ছাঁটাইয়ের পথে যেতে পারত। এখন কয়লা কেলেঙ্কারি থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরাতেই ডিজেলের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে।” এসইউসি সাংসদ তরুণ মণ্ডলের নেতৃত্বে এ দিন বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়েছে। তরুণবাবু মনে করেন, “তেল সংস্থাগুলির লোকসান বলে কিছু নেই। ‘আন্ডার রিকভারি’ মেটাতে সরকার ধনী বা কর্পোরেটদের উপরে প্রত্যক্ষ করের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারে। গরিব-মধ্যবিত্তের উপরে খাঁড়ার ঘা দিয়ে কী লাভ!”
অর্থাৎ আশু ‘বিকল্প’ এঁদের কারও কাছেই নেই। কিন্তু আশু ‘রাজনৈতিক লাভে’র আশায় তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ আছে! আজ, শনিবারই যেমন পথ অবরোধে নামছে ফরওয়ার্ড ব্লক। তাই ভোগান্তিই ভবিতব্য! |
|
|
|
|
|