ক্ষোভ প্রশাসনের ভূমিকায়
হড়পা বানে বাঁধ ভাঙল ওদলাবাড়িতে
টানা বৃষ্টির পরে হড়পা বান। বাঁধ ভাঙল ডুয়ার্সের ঘিস নদীর। জল ঢুকল ওদলাবাড়ির চা-বাগান, বসতি এলাকায়। জলবন্দি হয়ে পড়ে অন্তত ৮০টি পরিবার। স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষতিপূরণের দাবিতে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে প্রায় ৩ ঘণ্টা অবরোধ করেন। শুধু ঘিস-ই নয়, ভারী বর্ষণে জলস্তর বেড়েছে তিস্তা, তোর্সা, ডায়ানা-র মতো একধিক নদীর। বুধবার সকালে তিস্তা নদীর সংরক্ষিত এলাকায় হলুদ সঙ্কেত জারি করা হয়। দুপুরে দোমহনি থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত তিস্তার অসংরক্ষিত এলাকায় লাল সঙ্কেত জারি হয়েছে। জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া এলাকায় বিপদসীমার খুব কাছ দিয়ে বইছে তিস্তা। ভাঙনও শুরু হয়েছে।
উত্তরবঙ্গ বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান নারায়ণচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ডুয়ার্সের সব নদীর জল বেড়েছে। মালবাজারে ঘিস নদীর বাঁধ ২০০ মিটার ভেঙেছে। জরুরি ভিত্তিতে মেরামতির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নদীগুলিতে জল বাড়তে থাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।”
বাঁধ ভেঙে ওদলাবাড়িতে ঢুকছে ঘিস নদীর জল। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।
পাহাড় ও ডুয়ার্সে টানা বৃষ্টি চলেছে মঙ্গলবার সকাল থেকে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় বাগরাকোটে ৩১০ মিলিমিটার, গজলডোবায় ৩৯৬ মিলিমিটার, নেওড়ায় ১০৬ মিলিমিটার, নাগরাকাটায় ১৬২ মিলিমিটার, মূর্তিতে ১৫৬ মিলিমিটার, বাগডোগরায় ১০৫ মিলিমিটার এবং সেবকে প্রায় ৯০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, “বজ্রগর্ভ মেঘের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে।”
সেচ দফতর সূত্রের খবর, বৃষ্টির জেরে মালবাজার মহকুমার কিছু পাহাড়ি ঝোরা ফুঁসে উঠেছে। জলস্তর বেড়েছে ডিমা ও রেতি নদীর। মালবাজারে মঙ্গলবার রাত থেকে প্রায় ২২০ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ায় ঘিস নদীতে জলস্তর লাফিয়ে বাড়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওদলাবাড়িতে ঘিস নদীর ধারে বোল্ডার ফেলে মাটি দিয়ে বাঁধ তৈরি হয়েছে প্রায় তিন দশক আগে। বাঁধের উপর দিয়ে প্রতিদিন বিধি ভেঙে বহু ট্রাক চলাচল করে। বাঁধের মাটি ঝুরঝুর করে ঝরে পড়ছিল অনেক দিন ধরেই। সংশ্লিষ্ট দফতরে সমস্যার কথা জানানো হলেও রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার রাতে হড়পা বানে নদীর জল প্রায় ২০০ মিটার বাঁধ ভেঙে দেয়। ওদলাবাড়ির নয়াবস্তি, মজুমদার কলোনি এবং মানাবাড়ি চা-বাগান এলাকায় জল ঢুকে পড়ে। পাশাপাশি, লিস নদীর জলে প্লাবিত হয় ওয়াশাবাড়ির কাঞ্চনবস্তি এলাকা।
আচমকা প্লাবনে দিশাহারা হয়ে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ দিন সকালে তাঁরা ঘরবাড়ি ছেড়ে ৩১ নং জাতীয় সড়কে উঠে আসেন। ক্ষতিপূরণের দাবিতে শুরু হয় অবরোধ। বেলা ১০টা নাগাদ পুলিশ-প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। ওদলাবাড়ির সিপিএম নেত্রী তথা পঞ্চায়েত প্রধান সুমিত্রা মুণ্ডা বলেন, ‘‘৩০ বছরের পুরনো বাঁধ মেরামতির অভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। কত বার বাঁধ সারানোর জন্য সেচ দফতরে অনুরোধ করেছি। কিন্তু কাজ হয়নি। তা হলে এত বড় ক্ষতি হয়তো হত না।”
সেচ দফতরের মালবাজার মহকুমা আধিকারিক রঞ্জন সাহা বলেন, “ফের যাতে বানের মুখে পড়তে না হয় সে জন্য এ দিন সকাল থেকে ঘিস নদীর গতিমুখ ঘোরানোর কাজ শুরু হয়েছে।” বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশনের সদস্য গৌতম দত্ত বলেন, “বাঁধের ওই জায়গায় হড়পা বানের প্রাবল্য অস্বাভাবিক বেশি ছিল। সে জন্যই বাঁধের ওই অংশ ভেঙেছে। তবে মেরামতির কাজ নিয়ে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।”
তবে স্রেফ বাঁধের ‘দশা’ নয়, জলবন্দি এলাকাবাসীর ক্ষোভ রয়েছে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও। সফিদল খাতুন, বুলবুলি খাতুন, মহম্মদ মুনিদের কথায়, “পরিস্থিতির কথা জানানোর পরেও প্রশাসনের কর্তারা অনেক দেরিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন।” যদিও মহকুমাশাসক (মালবাজার) নারায়ণ বিশ্বাস অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “রাত থেকে পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা হয়েছিল। সকালেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.